সহজ পথে না ঠ্যালায় পড়ে

Apr 22, 2011
ইংরেজিতে একটা কথা প্রায়ই বলা হয়, ইজি ওয়ে অর হার্ড ওয়ে ভালভাবে শিখতে পারেন, ঠ্যালায় পড়েও শিখতে পারেন নিজের ইচ্ছেয় করতে পারেন, ঘাড়ের ওপর ডান্ডাবাড়ি খাওয়ার পর বাধ্য হয়ে করতে পারেন কথাটা প্রায়ই বলা হয় কারন মানুষ প্রায়ই এই অভিজ্ঞতার সম্মুখিন হয়
ছোটখাট বিষয় রেখে বরং বড় কিছুই দেখা যাক কিছু মানুষ বহুবছর ধরে বলে আসছে এই বিশ্ব ধ্বংশের মুখে যে পরিমান সম্পদ প্রতিমুহুর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে সেই হারে সরবরাহ করার ক্ষমতা এই বিশ্বের নেই প্রকৃতির তেল-গ্যাস ব্যবহার কমান, বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইড ছড়ানো কমান আমেরিকানদের মত মাংশ খাওয়ার অভ্যেস করবেন না এই পরিমান মাংশ সরবরাহের ব্যবস্থা এই বিশ্বের নেই
কে শোনে কার কথা যে দেশের নাম বলার সাথে প্রতিশব্দ হিসেবে উল্লেখ করা হয় ওয়ান অব দি পোরেষ্ট কান্ট্রি ইন দি ওয়ার্ল্ড, সেখানেও মানুষ হুমড়ি খেয়ে কোটি টাকার গাড়ি কেনে লাইন দেয় হেলভেশিয়া-কেফসি-পিজা হাটের সামনে পথের দুধারে জমে ওঠে সারিসারি গাড়ি  অর্থমন্ত্রী কি সাথে বলেছেন দেশের অর্থনীতির এমন সুদিন ইতিহাসে কখনো ছিল না শায়েস্তা খানের সময় পথে কটা কোটি টাকার গাড়ি দেখা যেত ? কয়টা হাইরাইজ বিল্ডিং ছিল ? কয়জন গরমে এসি ব্যবহার করত ?  প্রধানমন্ত্রী কি সাধে বলেন মানুষ এখন চারবেলা খায়
ফল ভোগ করতে হয় অন্যদের খাওয়ার কথাই ধরুন না কেন উত্তরা থেকে ফার্মগেটে ব্যবসা প্রতিস্ঠানে আসার জন্য বাসে চাপলেন ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময় লাগার কথা বাসে বসেই যখন দুপুর পেরিয়ে গেল তখন সাথে আনা পাত্র থেকে দুপুরের খাওয়াটুকু সেরে নিলেন কিন্তু ফার্মগেটের দেখা পেলেন না
কিংবা অন্যভাবেই দেখুন না কেন দেশে যে পরিমান মাংশ ব্যবহার হয় তাকে জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করে দেখুন একজনের ভাগে কতটুকু পাওয়া যায় আপনি একাই যখন কাবাবের দোকানে ঢুকে ১০০ জনের খাবার খেয়ে ফেললেন চতুর্থ বেলার খাবার হিসেবে, তখন বাকি ৯৯ জনের ভাগ্যের মাংশ বদলে আলুর মাংশ হয়ে গেল এর অর্ধেকের আবার আলুও জোটে না
তাতে আপনার কি! আপনাকে হৃষ্টপুষ্ট হয়ে আমেরিকানদের মত হতেই হবে ওরা এত কথা বলে কোন মুখে ? এতদিন তো খেয়েছে, এখনও নিজেদের কাউবয় বলে গর্ব করে আর আমাদের মাংশ খেতে দেখে চোখ টাটায়! আগে নিজেদের সামলাও। আর তাদের বক্তব্য, আমাদের কি দরকার পড়েছে অভ্যেস পাল্টানোর। এখনো সবচেয়ে বেশি মাংশ হয় আমাদের দেশেই। আমরাই সারা বিশ্বে সাপ্লাই দেই। যদি পৃথিবী গরমে তেতে উঠে প্রয়োজন হলে সালফার ডাই অক্সাইডের মেঘ বানিয়ে তাপমাত্রা কমাবো। ওইসব পরিবেশ রক্ষার কাজ  তোমরাই কর। প্রয়োজন হলে টাকা নাও। তোমাদের নেতারা তো হাত পেতে রয়েছে ওজন্যই। তার ওপর টিকেট কেটে রেখেছে। অবস্থা বেগতিক দেখলেই প্লেন ধরতে ছুটবে।
বিশ্বব্যাংক বলেছে,
তা তারা কতকিছুই বলতে পারে অন্য কাজ যখন নেই টাকাপয়সা যখন আছে তখন শেয়ার ব্যবসায় টাকা খাটালেই তো পার বাবা! অত কথা বল কেন ?
আচ্ছা কি বল শুনি;
আগামী দিনে বাংলাদেশের রেমিটেন্স কমে যাবে দরিদ্রের সংখ্যা বাড়বে খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়বে। মানুষ অনাহারে মারা যাবে।
সে-তো পাগলেও জানে একথা মুখে বলার কি আছে সরকার যখন সাফল্যের কথা বলে সেটা শুনে বলছেন আগে টুয়েন্টিওয়ান পর্যন্ত অপেক্ষা করেন ততদিন পর্যন্ত সরকারকে সবরকম সাহায্য করে যান কোনধরনের বিশৃংখলা সৃষ্টি করবেন না। বেশি করে ট্যাক্স দিন। জানেন না দেশ চালাতে কত টাকা দরকার আমাদের উন্নতি দেখে বিদেশীরা খুশী হয়ে টাকা দিচ্ছে। এতটাকা যে খরচ করার যায়গা নেই। আরো বহু টাকা পাইপলাইনে আছে। শুধু অপেক্ষা করুন। টাকা থাকলে আবার সমস্যা কিসের ?
কৃষিকাজ ছেড়ে লাখ লাখ মানুষ ঢাকা শহরে এসে রিক্সা চালাচ্ছে সেখবর কেউ রাখে না মনে করছেন সারাদিন কৃষিকাজ করলে জোটে দেড়শ থেকে দুশ টাকা। তাও আবার যদি কাজ জোটে। আর রিক্সা চালালে তিনশ থেকে পাচশ গ্রামে থাকে কোন হালায়-
যানজটে তিন ঘন্টা বসে থাকতে হয় সেকথা কে জানে না যানজট বলছেন কাকে ? ওটা হল জীবনযাপনের নতুন কৌশল দিব্বি কয়েকঘন্টা সময় কেটে গেল সরকার তো বলেছেই উড়ুক্কু রেল বসাবে, উড়ুক্কু সড়ক বানাবে আমার বাবা কোন সমস্যা নেই এইযে মোবাইলডা দ্যাখতাছেন, এইডা হইল কম্পিউটার সবকাজ করন যায় গান শোনা, ভিডিও দেখা, ইন্টারনেট। সরকার কইছে থ্রিজি চালু হইব। তহন মোবাইলে কথা কওয়া আর সামনাসামনি কথা কওয়ার পার্থক্য থাকব না। আমি কই থাকলাম তাতে কি!
কোথাও ভুমিকম্পের খবর শোনা গেলে বিশেষজ্ঞরা কথা বলার সুযোগ পান অবলিলায় বলে জান, জাপানের মত ভুমিকম্প হলে ঢাকা শহর মাটিতে সমান হয়ে যাবে সরকারের উচিত, রাজুকের উচিত ...
তারপরই ছুটতে হয় আজকাল সবাই চোর ওইসব হাউজিং কোম্পানীগুলান আছে নিজের ধান্দায়। রড-সিমেন্টে খরচ কমাবি কমা তাইবলে সব নিজের পকেটে ঢুকাবি লোকে বলে কারো দাত নষ্ট হয় অযত্নে, কারো অতিযত্নে দাত তো একসময় নষ্ট হবেই। বাড়ি তো একসময় ভাঙবেই খামোখা খরচ বাড়িয়ে লাভ কি বরং ওই টাকায়-
একসময় রোমানরা তিন মহাদেশ শাসন করত। তাদের পতন হতে পারে সেকথা তারা সহজে শেখেনি। পতন হওয়ার পর বুঝেছে পতন হল। বর্তমান বিশ্বের সহজে শেখার পথ পেরিয়ে গেছে অনেক আগেই বাকি আছে ঠ্যালায় পড়ে শেখার সেই ঠ্যালাটা কিভাবে, কোনদিক থেকে আসে সেটাই বিষয়-

0 comments:

 

Browse