যুগ যুগ জিয়ে

Jul 12, 2010
রহমানের স্ত্রীর সব বক্তব্য খানকে নিয়ে। সে চাকরী করে, সময়মত অফিসে যায় সময়মত ফেরে, সন্মান নিয়ে চলে। তারসাথে কি ব্যবসার তুলনা চলে ? ব্যবসায় রাত না পোহাতেই দৌড়াতে হয়, ফিরতে ফিরতে গভীর রাত। এটা কি মানুষর জীবন!
আর খানের স্ত্রীর বক্তব্য রহমানকে নিয়ে। সকালে নাকেমুখে কিছু গুজে দৌড়াতে হয় না। নিজের কারবার নিজে দেখ। ইচ্ছে হলে যাও ইচ্ছে হলে ঘুমাও। কেউ কিছু বলার নেই। চাকরী মানুষ করে! চাকরী মানে অন্যের চাকর। দরখাস্তে লিখতে হয় ইওর অবিডিয়েন্ট সারভেন্ট। ধুরো!
রহমানের স্ত্রীর বক্তব্য, চাকরী করলে কি টাকার জন্য ভাবতে হয়। মাস গেলেই টাকা। হরতাল-ধর্মঘট-যুদ্ধ-বন্যা-ঘুর্নিঝড়-ভুমিকম্প কোনকিছুতেই আটকাবে না। তারওপর উপরি আয়। ওইতো একদিনে ব্যাগ ভর্তি টাকা নিয়ে হাজির। ব্যাংকে রাখার যায়গা নেই। খরচ করারও যায়গা নেই। সব কেনা হয়ে গেছে। এখানে ওখানে টাকা গুজে রাখে।
খানের স্ত্রীর বক্তবেও কমতি নেই। এইভাবে গোনা টাকায় চলা যায়। ব্যবসার আয় মানে ব্যবসার আয়। প্রতিদিনই বাড়তির দিকে। তারওপর রোজ-ঈদ-হরতাল এসব উপলক্ষ তো আছেই। দাম বাড়াও আর বেশি টাকা ঘরে আনো।
রহমানের স্ত্রীও রোজা-ঈদের কথা বলে। তবে অন্যভাবে। এভাবে দৌড়াতে দৌড়াতে একদিন জীবন যাবে। রোজা-ঈদে পর্যন্ত ছুটি নেই। পারলে ঈদের দিনে পর্যন্ত কাজ করতে হয়। আর ওদের কত ছুটি। ঈদ-পুজা-হরতাল-অমুক দিবস-তমুক দিবস ...
তাদের এই অভিযোগ অবশ্য কখনো আদালতে যায় না। এমনকি প্রকাশ্যেও যায় না। সেখানে বক্তব্য উল্টো। খানের স্ত্রীর বক্তব্য রহমানের স্ত্রীর মুখে আর রহমানের স্ত্রীর বক্তব্য খানের স্ত্রীর মুখে। এটাই মিলেমিশে সমাজে বাস করার নিয়ম। সমাজ তৈরীই হয়েছে এজন্য।
প্রশ্ন করতে পারেন এই নিয়ম রাষ্ট্রে কিংবা আদালতে ব্যবহার হয় না কেন। হলে কত ভালই না হত! সমাজের মত সেখানেও মিলমিশ।
ভাল হত নাকি মন্দ হত সেটা বিচার করা সত্যিই কঠিন। বিচার করার দায় বিচারকের। আর সরকারের নজর কাড়তে না পারলে বিচারক হওয়া যায় না। কাজেই সোজাসাপ্টা কথায় কারন যা দাড়ায় সেটাই জেনে রাখুন।
অমুক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে রাস্তায় বিসৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য। ভাঙচুরের অভিযোগ। একেবারে নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সরকার-পুলিশ কখনো বিনা কারনে জনগনকে হয়রানি করে না। তারা জনগনের সেবক। সবসময় জনগনের সেবা করতে একপায়ে খাড়া।
আদালত বিষয়টা সেতুলনায় একটু গোলমেলে। তারাও ভাগ বসাতে চায়। পছন্দমত না হলে একেজন একেরকম কথা বলে। আবার এক আদালত থেকে আরেক আদালত। অন্য আদালতই বা বাদ থাকবে কেন ?
কাজেই ফলটা দাড়ায় এমন, তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে হাতেনাতে অপরাধের জন্য। না-না, তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে দেশকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত করার জন্য। না-না, তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে খুনের অভিযোগ। জানেন না, ওইযে খুন হয়েছিল বছর দশেক আগে, সেই খুনের সাথে ও প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। রিমান্ডে সব স্বিকার করেছে।
পশ্চিমারা প্রবাদে বলে গোলপোষ্ট সরিয়ে ফেলা। আপনি গোলপোষ্ট তাক করে শট করলেন, বল গেল ঠিকমতই, কিন্ত্র ততক্ষনে গোলপোষ্ট সেখান থেকে সরে গেছে ডানে কিংবা বামে। যখন যেটা মানানসই। গোল করার সাধ্য আপনার নেই। যত দুরে গোলপোষ্ট সরানো যায় সুবিধে তত বেশি। অভিযোগ যত ঘোলাটে সুবিধে তত বেশি। আপিল-হাজিরা-রিমান্ড-শুনানী কতকিছু। কত লোকের কর্মসংস্থান।
খান এবং রহমানের স্ত্রী যত অভিযোগই করুন না কেন, তারা ভাল করেই জানেন সমাজ এই নিয়মে চলে। মুখের কথা আর বাস্তব এই দুইয়ের সমতা রক্ষা করেই সমাজে চলতে হয়। যুগ যুগ ধরে এটাই চলে এসেছে। এটাই চলতে থাকবে।

0 comments:

 

Browse