তিনি ভাষা নিয়ে কাজ করেছেন কাজেই ব্যাকরন মানা নিয়ে তার মাথাব্যথা না থাকলেও চলে। সাহিত্যে আর ব্যাকরনের প্রয়োজন কি! সাইফুরস তো বিজ্ঞাপন দিচ্ছে ইংরেজিতে গ্রামার বলে কিছু নেই।
প্রয়োজন আসলে অন্যখানে।
লোকে বলে ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র, বিশ্ব, গ্রহ নক্ষত্র নিয়ে মহাবিশ্ব সবই নাকি ব্যাকরনের নিয়মে চলে। একটু বাড়িয়ে বলা থাকতেই পারে, কিন্তু একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। অন্তত সকলেরই যখন বয়স বাড়ে। কোনমতেই কমতির দিকে নেয়া যায় না।
এই ব্যাকরন দেখতে কেমন ? তৈরী করল কে ?
লোকে আরো বলে ব্যাকরনের নিয়মেই নাকি প্রতিদিনই একদিন করে বয়স কমে। বয়স মানে আয়ু আর কি। একদিন করে মৃত্যুর দিন ঘনিয়ে আসে। শেষদিনে জিবরাইল এসে হাজির হলে বড়জোর বলতে পারে, কই কোন চিঠিপত্তর তো দেননি। এভাবে বিনানোটিসে ভাড়াটেকে পর্যন্ত উঠানো যায়না আর আপনি এসেছেন পৃথিবী থেকে উঠিয়ে দিতে। জানেন আমার আরো কত কাজ বাকি। এখনো বাড়ি করা হয়নি, ছেলেমেয়ে স্কুলে যাচ্ছে, ব্যবসা মাত্র লাভের দিকে ...
জিবরাইল ওসব কথায় কান না দিয়ে নিজের কর্তব্যের কথাই মনে করিয়ে দেন। নোটিস তো দিয়েছি। ওই যে চুল সাদা হয়েছে, কালি দিয়ে কুচকুচে বানিয়ে রেখেছেন। ওইযে দাত পড়ে গেছে, ডেন্টিষ্টকে টাকা দিয়ে ফলস লাগিয়েছেন। আপনি যদি নোটিস লুকিয়ে রাখেন তাহলে আমি কি করতে পারি। ওসব ধানাই পানাই চলবে না। ডাক এসেছে যেতে হবে।
কাজেই আপনাকে অন্যযুক্তি খুজতে হয়। তারসাথে হাতাহাতি করে যখন লাভ নেই, তাকে ঘুস দেয়া যায় না, ক্রশফায়ারে ফেলা যায় না তখন সেটাই একমাত্র পথ। নিজে তার সঙ্গি হয়ে ভবিষ্যত বংশধরদের মধ্যে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা।
কতদিন ?
যতদিন ততদিন।
আপনার সন্তান নিশ্চয়ই আপনাকে টিকিয়ে রাখবে। তাদের সার্টিফিকেটে আপনার নাম লিখতে হয়। আচ্ছা, এমন নিয়ম করলে হয়না, বংশানুক্রমে সার্টিফিকেটে নাম লেখা বাধ্যতামুলক হবে। অমুকের পুত্র অমুকের পুত্র অমুকের পুত্র অমুক .... । তাহলে অনেকদিন নিজের নাম টিকিয়ে রাখা যায়।
এটাও হয় না। যারা দেশ চালায়, আইন বানায় তাদের মাথায় যদি একটু ঘিলু থাকত।
তাদের কি। ব্যাংকে টাকার পাহাড় বানিয়ে রেখেছে। মাসে দুবার করে হাসপাতালে সাক্ষাত দিতে হয় এখনো দুহাতে টাকা কামানো থামেনি। সন্তান, তস্য সন্তান, তস্য তস্য সন্তান যদি পঙ্গুও হয়, যদি তাদের ওঠবস করাতেও টাকা দিয়ে মানুষ রাখতে হয় তাহলেও তারা আরামে থাকবে। কখনোই অর্থসংকট হবে না। আর কার কৃতিত্বে সেটা হয়েছে সেকথা জপ করবে। দিনে অন্তত পাচবার।
আচ্ছা, ব্যাকরন নতুন করে লিখলে কেমন হয়। ওই যে বিদ্যাসাগর তো কতকিছু লিখে গেছেন। নতুন একজন বিদ্যাসাগর যদি নতুন করে ব্যাকরন লেখে তাহলে। ডারউইন ব্যাটা তো এটাসেটা বলে পটল তুলেছে, যদি সে একটা ব্যাকরন তৈরী করত। কিভাবে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা যায়। নতুন ধরনের বিবর্তন।
নাহ। সে নিজের জীবন পর্যন্ত বাচাতে পারেনি। তাকে দিয়ে ওসব হবে না। আজকাল কেউ আবার কথাও শোনে না। নিজের লাভ ছাড়া একপা ফেলে না। মুখ থেকে টু শব্দ পর্যন্ত বের করে না। দিন-সপ্তাহ-মাস-বছর-যুগ ধরে গল্প করে যাবে কিন্তু কাজের কথা একটাও বলবে না। সামনে হ্যা-স্যার, জ্বি-স্যার বলেই যাচ্ছে। মনে কি আছে খুব ভাল করেই জানি। ব্যাটা সুযোগ পেলেই ল্যাঙ মারবে। বিশ্বকাপ দেখে বিশ্বমানের ল্যাঙমারা লপ্ত করেছে। টিভি রিপ্লে ছাড়া ধরা যায় না।
আজকাল রেফারিও ব্যাকরন মানে না। খুব ভাল করেই জানে তার ওপর মাথা নেই। বাশিতে ফু দিলেই কাজ।
ব্যাকরনের মুল সুত্র আসলে সেখানেই। মাথার ওপর কেউ আছে কি-না। যে ওপরে বাস করে ব্যাকরনের কারন নির্ধারনের দায়িত্ব তারই। পরের ধাপে যিনি অবস্থান করেন তার দায়িত্ব তার নিচের সবাইকে ব্যাকরন মানানো। ব্যাকরনের আকার আসলে পিরামিডের মত এর।
সত্যিকারের ব্যাকরন মিশরীয়রাই তৈরী করে গেছে।
0 comments:
Post a Comment