বেড়ালের গলায় ঘন্টা বাধবে কে

Aug 1, 2010
বেড়ালের গলায় যদি ঘন্টা বাধা থাকে তাহলে ইদুরের খুব সুবিধে হয়। বেড়াল চলাফেরা করলেই ইদুর সেই ঘন্টার শব্দ শুনে সরে পরতে পারে। বেড়ালের আর সাধ্য কি ইদুর ধরে। একেবারে না খেয়ে মরতে হবে।
কাজেই ইদুরের সভায় বুদ্ধিজীবী ইদুরগন যখন এই বুদ্ধি আবিস্কার করলেন তখন সকলেই হাততালি দিয়েছিল তাতে কোন সন্দেহ নেই। শুধু বোকার মত কেউ একজন প্রশ্ন করে বসেছিল, ঘন্টাটা বাধবে কে ?
বেড়াল-ইদুর নিয়ে আলোচনা বরং থাক। ওসব ইতর প্রানীর বুদ্ধি যতই থাকুক মানুষের কাছে পাত্তা পায় না। বাঙালী বুদ্ধির কাছে কখনোই না। বরং কোন দেশের ইদুরের বুদ্ধি বেশি সেনিয়ে কেউ গবেষনা করতে পারেন যদি ফান্ড পাওয়া যায়। বরং অন্য কথা বলা যাক।
আমেরিকার নাইন-ইলেভেনের অনুকরনে অনেকে বলে থাকেন ওয়ান ইলেভেন। জরুরী আইন জারী করা হল। তার মানে আইন-কোর্ট বলে কিছু নেই। তিন উদ্দিনের যা মনে আসবে তাই করবেন। কোনরকমের গাইগুই চলবে না। কেউ কেউ মিনমিন করে বলেছিলেন সংবিধানে আছে অতদিন পর্যন্ত জরুরী আইন রাখা যায়। তারবেশি থাকলে সংবিধান লংঘন হয়। কদিনপর তারাও চুপ মেরে গেলেন। কাজেই জরুরী আইন চলতেই থাকল। তারা প্রয়োজনের বেশি একদিনও থাকবেন না একথা বলে দুবছর দিব্বি কাটিয়ে গেলেন।
দৃষ্টি যদি আরো দুরে পাঠাতে পারেন তাহলে ১৯৮২ সালের কথাও মনে করতে পারেন। নির্বাচিত রাষ্ট্রপতির যায়গায় এলেন সেনাপ্রধান হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ। চীফ মার্শাল ল এডমিনিষ্ট্রেটর ঠিক করবেন সবকিছু কিভাবে চলবে। তারপর গনভোট, নির্বাচন বহুকিছু। একসময় এরশাদ সাহেব গেলেন বটে, ততদিনে নয় বছর কাটিয়েছেন ক্ষমতার শীর্ষে।
১৯৭৫ এর ঘটনা সেতুলনায় বেশ ঘোলাটে। ঘোলাপানি কখনো পরিস্কার হয়নি। রাষ্ট্রপতি নিহত হলেন, ক্ষমতা কার হাতে কেউ জানে না। কয়েকমাস ধরে চলল এই অবস্থা। আগষ্ট হত্যাকান্ডের পর নভেম্বরে জেলখানায় যেটুকু বাকী ছিল তা পুরন হল। একসময় খালেদ মোশাররফ-আবু তাহের পেরিয়ে বেরিয়ে এল এক নাম, জিয়াউর রহমান। তারপর সেখানেও গনভোট, নির্বাচন, রাজনৈতিক দল ইত্যাদি। তিনিও বিদায় নিলেন অস্ত্রের কাছে হার মেনে।
এগুলি দেশের খারাপ উদাহরন। খারাপ অবস্থা চলতে দেয়া যায় না। চীরদিনের জন্য এই পদ্ধতি বন্ধ করা প্রয়োজন। কাজেই সংবিধানে এমন কিছু থাকা প্রয়োজন যেন জিয়াউর রহমান কখনো ক্ষমতায় আসতে না পারেন। (আশ্চর্যজনকভাবে এরশাদ সাহেব এবং উদ্দিনসাহেব সংবিধান লংঘন করেছেন সেকথা কেউ বলে না। তারা নিশ্চয়ই সামরিক বাহিনী থেকে অবৈধভাবে সরকারে আসেননি।)
কাজেই, বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাধা প্রয়োজন যেন বিড়াল যখন-তখন ইদুর ধরতে না পারে। আসলে ঘন্টা বাধা হয়েই গেছে। কোর্টের রায়ের পর সংবিধান পরিবর্তন হয়ে গেছে। দেশ ফিরে গেছে মুক্তিযুদ্ধে আদর্শে।
কথা একটুখানি। ভবিষ্যতে কেউ যদি অস্ত্রহাতে সামনে এগিয়ে আসেন তখন কে সংবিধান সামনে ধরে বলবেন, এটা সংবিধান লংঘন। সংবিধানে বলা আছে এভাবে রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়া যাবে না।

0 comments:

 

Browse