রাম নামে ভুত পালায়

Aug 4, 2010
কেউ বলে রাম নামে ভুত পালায়, কেউ বলে ভুতের মুখে রাম নাম  বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার জন্য এই দুটিকথাই এককভাবে যথেষ্ট রাম নাম কি আর ভুতই বা কি যদি জানা না থাকে
রামায়নের নায়ক রাম, জন্ম অযোধ্যায় এটাই যদি ধরে নেন তাহলে একদিক সামলানো যায় কেউ কেউ একেবারে  নির্দিষ্ট করে বলে দিতে পারেন যায়গাটা হচ্ছে বাবরের তৈরী মসজিদের তলায় মসজিদটা ভাঙলেই রামের জন্মস্থান পুজা করা যায় প্রবাদের আরেক ব্যক্তি, মানে ভুতের জন্মস্থান নির্নয় নিশ্চয়ই তত সহজ না কেউ সে চেষ্টাও করেনি অন্তত বকারামের (এই রাম সেই রাম নয়) জানা নেই
তাহলে ভুত চেনার উপায় কি ? লক্ষন দেখে ?? (আবারও রামায়ন, রামের সহোদর)
এই লক্ষনও সেই লক্ষন নয় এই লক্ষন হচ্ছে আচরন কার্যকলাপ এটা দেখেই চেনা যায় কোনটা ভুত
যদিও ভুত বিষয়টি নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই কেউ বলে ভুতের অসাধ্য কিছু নেই ছোট হয়ে বোতলে ঢুকতে পারে, বড় হয়ে আকাশ ছুতে পারে। মানুষের ঘাড় মটকে দিতে পারে রাতের বেলা স্মশানে গেলে মাথা কেটে নিয়ে ফুটবল খেলতে পারে কারো মতে ভুত বায়বীয় বাতাসের মত বড়জোর সুড়সুড়ি দিতে পারে এরবেশি করার সামর্থ্য নেই
সেই লক্ষনের কথায় আসি। এই ভুত দেখা যায় না, অনুভব করা যায় ভালভাবেই। অবস্থান করে ঘাড়ের ওপর। একবার যদি চেপে বসে তাহলে তাকে সরায় সাধ্য কার। আজকাল ভুতের ওঝা পাওয়া দুস্কর। তাকে কাঢ়ে দিয়ে সারাজীবন পার করতে হয়। কারো কারো ক্ষেত্রে একেবারে শেষমুহুর্তে এসে তাকে কাধছাড়া করা যায়, অনেক ক্ষেত্রেই সেটাও সম্ভব হয় না। এমনমি মারা যাবার পরও লোকের মুখেমুখে ফিরতে থাকে, অমুকের কাধে ওই ভুত ছিল।
কেউ কেউ নিতান্ত দুর্ভাগা হলে ভুতকে পালাতে হয়। যদি তেমন ওঝা থাকে ধারেকাছে। সেকথা বলার জন্যই এত বাগাড়ম্বর। এবার উদাহরন দেখা যাক।
স্কুল পড়ুয়া এক ছাত্র গাবলিগ জামাতের খপ্পড়ে পড়ল। একেবারে অস্বাভাবিক না। তারা যখন দল ধরে ঘুরে বেড়ায় একাজেই। ফলস্বরুন, তার কাধে ভুত চেপে বসল।
কদিনেই তার লোমের মত দাড়ি গজাল। ওগুলো কাটা যাবে না। ধর্মে নিষেধ। প্যান্ট-সার্টের বদলে পড়নে পাজামা, হাটু ছাড়ানো লম্বা পাঞ্জাবী। বাড়িতে তার বক্তব্য, ধর্মে বলেছে পরিশ্রম করে খেতে হয়। ওসব স্কুলে পড়ালেখা করে কি হবে ? এই জগত মায়া, পরের জগতই আসল। ওখানকার টিকিট কাটতে হয় এই জগতে।
দিন-সপ্তাহ-মাস পেরিয়ে গেলেও যখন ভুত ছাড়ল না, ক্রমেই জেকে বসতে শুরু করল তখন তার পিতা নিজেই ওঝায় পরিনত হলেন। তার পথেই তাকে চলতে বললেন, দেখ বাবা, ধর্মে যখন বলেছে পরিশ্রম করে খেতে হয় তখন পরিশ্রম করেই খাও। একটা রিক্সা কিনে দেই, সেটা চালাও। এরচেয়ে ভাল পরিশ্রম আর হয়না। আর ধর্মে বলেছে নিজের আয় খেতে হয়। এতে সেকাজও হবে।
স্বপ্ন যখন বাস্তব হয় তখন তাতে আপতিতর কিছু থাকে না। সে লেগে গেল। তবে ...
একদিন। পরদিনই তার ভুত তাকে ছেড়ে গেল।
আরেক উদাহরন আরো উন্নত পর্যায়ের ভুতের। রীতিমত পড়াশোনা শেষ করে বছর কয়েক  বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা করলেন। সম্ভব হল না। ব্যবসার চিন্তাভাবনা করলেন। পুজি জুটল না। যার প্রয়োজন নেই ব্যাংক তাকেই ঋণ দেয়, যার প্রয়োজন তাকে দেয় না। নতুন কিছু করতে চাইলেন, সমাজ সায় দিল না। কোন কাজেই পছন্দমত পার্টনার পেলেন না। অবশেষে তিনি রীতিমত দার্শনিক বনে গেলেন। দার্শনিক ভুত চাপল বলতে পারেন। দার্শনিক ভুতের বক্তব্য, আহা, অমুকে কত ছোট কাজ করে কত বড় হয়েছে। ম্যাকডোনালস ভাইয়েরা, একসময় গাড়িতে গাড়িতে তৈরী খাবার বিক্রি করত, কমদামে। এখন সারা বিশ্ব চালায়। এ আর রহমান, একসময় পিয়ানো ভাড়া করে এনে প্রাকটিস করত, এখন বলিউড-হলিউডে কি নামডাক। বিল গেটস, মাইক্রোসফট করে দেখিয়ে দিল কি করা সম্ভব। এদেশে ওসব হবে-টবে না। সবাই আছে ল্যাঙ মারার তালে। গৌতম বুদ্ধকে দেখুন, ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে গেল বণে। সমাজের ওইসব নোংরামির জন্যই তো। এখন পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মানুষ তার কথা মানে।
তার ভুতও বিদেয় হল একেবারে নিজের বাড়িতেই। একদিনে। সত্যি বলতে কি, একরাতে।
রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করার পর তাকে বলা হল, গৌতম বুদ্ধ বাড়ি ছেড়ে বনে গিয়েছিলেন, তোমাকে সেটা করতে হবে না। বনে সাপ-বাঘ কতকিছু থাকে, ডাকাত থাকে, তৈরী খাবার নেই। এসব তৈরীই আছে। যা আছে তারসাথে বনের অভিজ্ঞতাও কিছুটা নাও। রাতের বেলা বারান্দায় কাটাও। শীতের জন্য কম্বল আর গরমের জন্য ফ্যান ওই বস্তু পাবে না। বিছানাও পাবে না। মশার জন্য মশারী কিংবা কয়েলও পাবে না। বুদ্ধ তো ওসব নিয়ে যাননি। এটুকু করে বুদ্ধ হতে চেষ্টা কর। আর ওই মোবাইল ফোন, এমপিথ্রি প্লেয়ার ওগুলোও তার সময় ছিল না।
ভুত পালাতে সময় লাগল না।
রামনামে ভুত পালায় কথাটা ঠিকই। যদি জানা থাকে সেই রামনাম বিষয়টা কি।

0 comments:

 

Browse