চৌদ্দ বছরের ঠোক্কর

Aug 18, 2010
চন্ডিদাসের যুগে অমুককে পছন্দ হয়েছে, তাকে আমার চাই, যা করতে হয় করব একথা মনে করা, বলা কিংবা কাজে করার সুযোগ ছিল না। তারযুগে প্রেমে সফল হওয়ার পন্থা ছিল একটাই, ধৈর্য্য ধরা। কাজেই  তাকে সেপথেই যেতে হয়েছিল। রজকীনি যে ঘাটে যায় তার পাশে ছিপ ফেলে অপেক্ষা করা। একদিন-দুদিন, একসপ্তাহ-দুসপ্তাহ, একমাস-দুমাস, একবছর-দুবছর। এভাবে চৌদ্দ বছর কেটে গেল। অবশেষে কৌতুহল রাখতে না পেরে রজকীনি এসে জিজ্ঞেস করল, এভাবে যে ছিপ ফেলে বসে থাক, মাছ কি পাও ?
চন্ডিদাসের উত্তর, এইমাত্র ঠোক্কর দিল।
চৌদ্দবছর ঠোকর দেয়ার অপেক্ষা মন্দ না। রীতিমত কাব্যিক। বরং বিনা বিচারে কেউ চৌদ্দ বছর জেলে কাটিয়ে বলতেই পারেন, ওটা কোন ব্যাপার হল! এইমাত্র তো বিষয়টা জানাজানি হল। এখন কিছুএকটা না হয়ে যায় না। চৌদ্দবছরে কি যায় আসে। ঠোকরের দেখা তো পেলাম।
আমাদের নেতারা অবশ্য চৌদ্দ বছরের কথা বলেন না, বরং একটু দ্রুতই বলেন। এই তো, শিল্পমন্ত্রী বললেন সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অটোমোবাইল শিল্প গড়ে তুলবে। আমাদের মেধা আর দক্ষতা দিয়েই সেটা সম্ভব।
নিশ্চয়ই। বাঙালীর মেধার কি কোন তুলনা হয়। আমরা গাড়ি রপ্তানী করব ইউরোপে-আমেরিকায়। ততদিনে বিমান তৈরীর পদ্ধতিও শিখে যাব। আপাতত, কাঠে পেরেক ঠুকতে হলে সেটা আনতে হয় চীন থেকে। আর সেটার মাথায় বাড়ি দেবার জন্য হাতুড়িও আনতে হয় ওই চীন থেকেই। ইস্পাত শিল্প অর্থ রি-রোলিং মিল। লোহা থেকে রড তৈরী করা।
সে যাকগে। মন্ত্রীমশাই যে ঠোক্কর দিয়েছেন সেটাই বড় কথা।
ইদানিং শুধু নেতারাই ঠোক্কর দেন না, মাঝেমধ্যে হাইকোর্টও দেয়। ওইযে, পাইরেসি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হল। তিন মাস পরপর রিপোর্ট দাখিল করতে হবে।
এটা বড় ধরনের ঠোক্কর। আদালতে ধর্না দিয়েছে চলচ্চিত্র এবং সংগিত বিষয়ের ব্যক্তিগন। কাজেই নির্দিষ্ট করে বলে দেয়া হল, সিনেমা-গান ইত্যাদি পাইরেসি চলবে না। বন্ধ করতে হবে। আর সফটঅয়্যার-গেম-হলিউডের মুভি পাইরেসিতে বিশ্বে যে শীর্ষস্থান সেটা ধরে রাখতে হবে। জানেন না, ওগুলো রপ্তানী হয়। রপ্তানী কি বন্ধ করা যায়। কত লক্ষ লক্ষ মানুষ বেচে আছে ওই পেশায়। তাদের ওপর কি হামলা করা যায়। কারো পেটে লাথি মারতে নেই।
চৌদ্দ বছরের ঠোক্করের অপেক্ষা করতে করতে রজকীনির বয়স নিশ্চয়ই চৌদ্দ থেকে আটাশে পৌছেছিল। আর বাংলাদেশে যারা প্রোগ্রামার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন তারাও বয়সের সাথে চৌদ্দ যোগ করেছেন। এখনও ছিপ ফেলে বসে রয়েছেন।
এতদিনে, ঠোক্কর তো দিল। রীতিমত কাব্যিক বিষয়-

0 comments:

 

Browse