হোজ্জা আছেন যুগে যুগে

Aug 14, 2010
একদিন দেখা গেল নাসিরুদ্দিন হোজ্জা তার বাগানে মাটি খুড়ছেন। একজন প্রতিবেশি আগ্রহি হয়ে এগিয়ে এলো, কি করেন ভাইসাব।
ওইযে রাস্তায় একটা গর্ত হয়েছে দেখেননি। ওটা বন্ধ করব এই মাটি দিয়ে।
এমন উপকারীর প্রশংসা না করে পারা যায় না। তারপরও প্রতিবেশির কাজ খুত ধরা। কাজেই পরবর্তী প্রশ্ন, আর এখানে যে গর্ত হচ্ছে সেটা ?
হোজ্জা বললেন, কেন, আরেক যায়গা থেকে মাটি এনে ভরাট করব।
নাসিরুদ্দিন হোজ্জা কোন দেশের মানুষ ছিলেন তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তুরস্কের দাবী সম্ভবত সবচেয়ে বেশি। সেখানে তার কবরস্থান পর্যন্ত রয়েছে।
কিন্তু সেকথা বরং আপাতত থাক। কবর যখন আছে তখন তিনি মারা গেছেন। রেখে গেছেন উদাহরন। যেমন এইমাত্র উল্লেখ করা হল। উদাহরনের সাথে সাথে অনুসারীও রেখে গেছেন অনেক। নানা সময়ে নানারকমভাবে তার অনুসারীরা তার দেখানো পথে চলেন।
বিদ্যুত সমস্যা! মানুষ পথে নামছে। মিছিল করছে। ভাংচুর করছে।
বেশ কলকারখানা বন্ধ করে সেখান থেকে বিদ্যুত অন্য যায়গায় দিয়ে দিন।
তাতেও হচ্ছে না। স্কুল কলেজ একমাস ছুটি দিয়ে দিন। সবদিকেই লাভ। রাস্তায় যানজট কমবে, বিদ্যুত স্বাশ্রয় হবে, কোচিং সেন্টারে টাকা দিতে হবে না।
তাতেও কাজ হচ্ছে না। ফিলিং ষ্টেশন বন্ধ করে দিন। তাতেও কাজ হচ্ছে না। সার কারখানা বন্ধ করে দিন।
সার কারখানা বন্ধ হলে সারের সংকট হতে পারে বলছেন ? সে তখন দেখা যাবে। আরেক যায়গা থেকে এনে পুরন করা যাবে। আগে এই গর্ত তো পুরন করি।
একমাস বন্ধ থাকলে পড়াশোনা ক্ষতি হবে বলছেন ? সে আর এমন কি ক্ষতি। এজন্য তো কেউ ভাংচুর করছে না। করলে তখন দেখা যাবে।
আমরা সবধরনের চেষ্টা করছি। করে যাচ্ছি। সেগুলো একবার দেখুন। আটটায় দোকানপাট বন্ধ করেছি। ঘড়ির কাটা পিছিয়ে দেখেছি। একেক দিন একেক যায়গায় সাপ্তাহিক ছুটি করে দিয়েছি। আর কত করব। এসব সমস্যার সমাধান একদিনে হয় না। শোনেননি আগামী দিনের কথা। আমরা উদ্বৃত্ত বিদ্যুত উতপাদন করব। এইতো দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পুর্ন হচ্ছে। এইতো দেশের সব মানুষ শিক্ষার আওতায় আসছে। একটু দৈর্য্য ধরুন। এইতো শীতকাল এসে গেল বলে। এসি বন্ধ হলেই দেখবেন কোন সংকট নেই। দেশ ধনী দেশে পরিনত হচ্ছে। গুনে গুনে ২২ নম্বরে যাবে। ততদিন নাহয় অপেক্ষা করলেনই। সবুরে মেওয়া ফলে।
নাসিরুদ্দিন হোজ্জা জীবিত থাকা অবস্থায় বহুকিছু শিখিয়ে গেছেন। সবচেয়ে বড় শিক্ষা দিয়ে গেছেন মৃত্যুকালে। তার কবরে গেলে দেখে আসা যায়। কবরে বিশাল আকারের দরজা। তাতে মস্তবড় তালা ঝুলানো। চারিদিকে দেয়াল নেই এই-যা।

0 comments:

 

Browse