১৫ কোটি চোরের দেশ

Sep 3, 2010
চোর শুনতে কারই বা ভাল লাগে বলুন। চুরি করে যে জীবিকা নির্বাহ করে, সোজা কথায় পেশাদার শিদেল চোর, তারও না। তারওপর যদি তার বউকে বলা হয় চোরের বউ, ছেলেকে বলা হয় চোরের ব্যাটা তাহলে খারাপ লাগে বৈকি।
কিন্তু উপায় কি। সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে, এটাই প্রবাদ। আপনি যদি চোরের পাশে থাকেন তাহলে চুরি না করেও আপনি চোর।
অন্তত একথা ঠিক, আপনি চোর না হলেও আপনার পাশেই চোর রয়েছে। একেবারে রাষ্ট্রিয়ভাবে সত্য। কাজেই আপনাকেও চোর সন্দেহ করা হবে, চোর বলা হবে এটাই তো ঠিক পদ্ধতি। আইনে নাকি বলে, অপরাধ প্রমান না হওয়া পর্যন্ত সকলেই নির্দোষ। সেকথা ভুলে যান। আপনি অপরাধী এটা ধরে নিয়ে শুরু করুন। আপনার দায়িত্ব নিজেকে নির্দোষ প্রমান করা। যদি চুরির কথা বলেন, আপনি অবশ্যই চোর। আপনি যে চোর নন সেটা প্রমান করুন।
ডিজিটাল বাংলাদেশে ইন্টারনেট কি জানে না এমন ব্যক্তি খুজে পাওয়া কঠিন। গ্রামের মানুষও জানে ইন্টারনেটে ভিডিও ডাউনলোড করা যায়। আর কিছু মানুষ এটাও জানে, এটা ব্যবহার করে টাকা উপার্জন করা যায়। কতভাবে করা যায় এ নিয়েও আলোচনার অন্ত নেই। ক্লিক করলেই মাসে হাজার হাজার ডলার এসে জমা হবে আপনার হাতে।
কিভাবে ?
সেখানেই একটু বড় কিন্তু। আপনি অনলাইনে টাকা পাবেন না, কারন আপনি চোর। সুযোগ পেলেই চুরি করবেন, দেশের টাকা চুরি করে বাইরে পাঠাবেন। সরকার কখনোই সে সুযোগ দিতে পারে না। সরকারের দায়িত্ব দেশকে চুরি-দুর্নীতিমুক্ত রাখা।
একেবারে টাটকা খবর, সফটঅয়্যার রপ্তানীর সুযোগ করে দিতে মহাসুযোগ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন আপনি আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডেই টাকা পাবেন। তবে, নিয়ম মেনে।
কে সফটঅয়্যার রপ্তানীর যোগ্য সেটা বাছাই করবে বেসিস। তাদের নির্বাচন হলে কিংবা বছরে একটা মেলা করলে তাদের নাম পত্রিকায় দেখা যায়। কাজেই নিশ্চয়ই জানেন বেসিস কি জিনিষ।
আপনাকে বেসিসের সদস্য হতে হবে। তারা আপনার যোগ্যতা যাচাই করবে। চারিত্রিক সনদ দেবে আপনি চোর নন। সেই সার্টিফিকেটের বলে আপনি ১ হাজার ডলার ব্যবহারযোগ্য ক্রেডিট কার্ড পাবেন ব্যাংক থেকে। এটুকু সাবধানতা না করলে আপনি যে চুরি করবেন। কারন চোরের দেশে আপনি জন্ম নিয়েছেন।
বেসিসের সদস্য হওয়ার নিশ্চয়ই নিয়মকানুনন আছে। অন্তত নামের সাথে সফটঅয়্যার শব্দটি যখন আছে তখন অন্তত সেধরনের কিছু থাকতে হবে অবশ্যই। (যদিও তাদের প্রায় সকলেই অন্য ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। অন্তত ভুল করেও সফটঅয়্যার ডেভেলপার একজনও নেই একথা নিশ্চিত করা যায়)। কাজেই তাদের সদস্য হতে হলে আপনাকে কাগজে-কলমে সফটঅয়্যার ব্যবসায়ী হতে হবে ধরে নিতে পারেন। পাইরেসিও নিশ্চয়ই সফটঅয়্যার শিল্প। অন্তত যেভাবে প্রসারলাভ করেছে, কোটি টাকার সিলভার ডিস্ক প্রজেক্ট বসানো হয়েছে, তাতে তৈরী পোষাক শিল্পের সাথে তুলনা করা যেতেই পারে।
কিন্তু, আপনার শখ হল লাখদুয়েক টাকার একটা ক্যামেরা কিনে ফটোগ্রাফার হবেন, সুন্দর সুন্দর ছবি উঠাবেন, সেগুলোকে আপলোড করবেন ইন্টারনেটে, তারপর কেউ কিনলে আপনি টাকা পাবেন। সেকথা ভুলে যান। আপনার সবচেয়ে বড় অপরাধ আপনি জন্ম নিয়েছেন চোরের দেশে, জন্মগতভাবেই চোর এবং এখনও নিদোর্ষ প্রমানিত হননি। অন্তত ফটোগ্রাফার, এই পরিচয়ে বেসিসের সদস্য হওয়া সুযোগ পাবেন না এটা শতভাগ নিশ্চিত।
কিংবা কোন কঠিন কাজে না গিয়ে নিতান্ত ডাটা এন্ট্রি নামের টাইপ করার কাজ করে দুচার ডলার আয় করতে চান। কিছু প্রতিষ্ঠান এধরনের কাজ নিয়ে বসে আছে আপনার জন্য। প্রয়োজন শুধু ইন্টারনেট আর কম্পিউটার।
বেশ, সেটা করুন। কেউ বাধা দিতে যাচ্ছে না। তবে অবৈধভাবে টাকা লেনদেন করবেন না। টাকা পাচার করবেন না। বেসিস আপনাকে সে সুযোগ দেবে না।
নিউইয়র্কে নাকি ট্যাক্সিভাড়া ক্রেডিট কার্ডে দেয়া বাধ্যতামুলক করায় আন্দোলন-ধর্মঘট করেছিল ট্যাক্সি ড্রাইভাররা। সেটা অন্য নিয়ম। ওরা নগদ টাকা হাতে পেলে চুরি করে। আর বাংলাদেশের মানুষ চুরি করে ক্রেডিট কার্ড হাতে পেলে।
একটা কথা তো ঠিক, বিশ্বের সব প্রধান শহরে যানজট রয়েছে। সেকারনে কোথাও স্কুল-কলেজ বন্ধ করা হয়নি। বাংলাদেশে হয়েছে। আপনি যদি ১৫ কোটি চোরের একজন হন তাহলে আপনার চুরি ঠেকাতে অনলাইনে লেনদেন বন্ধ করা হতেই পারে।
যদি টাকা পাচার করতেই চান তাহলে সরকার বদল হওয়ার পর খবরের কাগজ দেখুন, কে কতহাজার কোটি টাকা পাচার করেছে জেনে তারসাথে যোগাযোগ করুন। পদ্ধতি জেনে নিন।

0 comments:

 

Browse