আনন্দের যতপথ

May 20, 2011
একদিন গভীর রাতে হোজ্জার বাড়ির সামনে ঝগড়া বাধল। দুজন লোক রীতিমত চিকার করে ঝগড়া করছে। হোজ্জা বললেন, দেখে আসি তো কি নিয়ে ঝগড়া করে।
তিনি যেতেই ঝগড়া থামল। তিনি ফিরলেন। তার স্ত্রী প্রশ্ন করল, তোমার গায়ের চাদরটা কই ?
ওরা ওটা নিয়েই ঝগড়া করছিল। আমি যেতেই চাদরটা নিয়ে চলে গেল।
তুমি কিছু বললে না ?
না। ঝগড়া থামিয়ে এলাম।
কেউ বলেন নাসিরুদ্দি হোজ্জা বুদ্ধিমান। অন্তত এই ঘটনা বুদ্ধির পরিচয় দেয়না। ঝগড়া যদি থেমেই যায় তাহলে আর মজা থাকে কোথায়! আসল মজা তো ওই ঝগড়াতেই। কিংবা অন্যভাবে বললে, গুতাগুতিতে।
ফাকা রাস্তায় চললে কি মজা পাওয়া যায়। যদি মজা পেতেই চান তাহলে ভিড়ের মধ্যে চলুন। একে ওকে গুতা দিন, এদিক ওদিক থেকে গুতা খান। তবেই না সমাজে বসবাস। নইলে বনে থাকলেই তো চলত।
শব্দ করে একটা টায়ার বার্ষ্ট হল। একটা গাড়ি আরেকটাকে গুতা মারল। ব্যস। ভীড় জমে গেল। ছোট ঘটনা হলে ডজন ডজন, আরেকটু বড় হলে শতশত, আরো বড় হলে হাজার হাজার। পুলিশ যদি ভিড় কমাতে লাঠিপেটা করে তাহলে দুর থেকে একজন আরেকজনকে বলে, দ্যাখছস ক্যামনে পিটাইতাছে। চল গিয়া দেখি।
এরপরও কি সন্দেহ করছেন গুতাগুতির আনন্দ সম্পর্কে।
সরকার দাম বাড়িয়েছে গ্যাসের। ভাবতে পারেন এতে সরকারের রাজস্ব বাড়ল। রাজস্ব মানেই সরকারের হাতে বেশি টাকা, বেশি জনকল্যান। ওই টাকায় রাস্তাঘাট হবে, শিক্ষা-চিকিসায় ব্যয় হবে, কর্মসংস্থান হবে। এটা একদিকের লাভ। অন্যদিকের লাভটা ভেবে দেখেননি। সেটা ওই গুতাগুতি।
গ্যাসের দাম বাড়া মানেই গাড়ির বেশি খরচ। ওই সিএনজি নামের বস্তু তো বটেই, বড় বাস পর্যন্ত। কাজেই শুরু হল ড্রাইভার-শ্রমিক আর প্যাসেঞ্জারে গুতাগুতি। আজকাল আবার সাংবাদিকরাও বিবিসি-সিএনএন এর মত দক্ষ। তারা টিভি ক্যামেরা নিয়ে হাজির হয় সবখানে। প্রশ্ন করে। মন্ত্রীরাও উত্তর দেন।
অ, আমরা দ্যাখতাছি। এইভাবে ভাড়া বাড়ান ঠিক না।
ব্যবস্থা নিতাছি কইলাম তো।
ভাড়া কত বাড়ব ঠিক কইরা দিছি। তারা না মানলে কি করমু কন।
ভাড়া বেশি নিতাছে নাকি। তা সরকারে থাকলে তো সিএনজি-ট্যাক্সি-বাসে চলতে হয় না। ওইডা বিরোধী দল ভাল কইতে পারব।
কত বেশি নিতাছে কন তো! তা জোট সরকারের আমলে কামাইতে পারে নাই অহন নাহয় একটু কামাইল। কত আশা কইরা ভোট দিছে। পরিবর্তন দরকার আছে না।
কেউ কেউ বলেন নেতারা সকলের দিকে দৃষ্টি দেন না। একেবারে মিথ্যে কথা। তারা হিসেব করে বলে দিয়েছেন গাড়ি যদি থেমে থাকে, ট্রাফিক জ্যামে আটকা পরে তাহলে প্রতি মিনিটে কতটাকা করে দিতে হবে। ভেবে দেখেছেন আয়ের কতবড় সুযোগ। বড় বড় জ্যাম তত আয়। একেবারে বিনা বিনিয়োগে এমন আয়ের সুযোগ কোনদেশ করতে পারে?
গুতাগুনি নিয়ে একেক মন্ত্রী একেক সাংসদ একেক নেতা একেক রকম বক্তব্য দেন। রাজনীতি করলে মিথ্যে বলতে হয় একথা সবারই জানা, তাই বলে সত্য বলতে নিশেধ আছে একথা তো জানা নেই। নইলে তারা সত্যি কথাটাই বলত, 
-আর গুতাগুতির সুযোগটা যে কইরা দিলাম সেইডা দ্যাখেন না!

0 comments:

 

Browse