আছাড় খেয়ে শেখা

May 17, 2011
সেই পুরনো গল্প ভোরবেলা নদীতে গোছল করতে গেছেন দুই ব্যক্তি একজন সারারাত প্রার্থনা করেছেন, অপরজন নির্ঘুম চুরি করে কষ্টকর রাত কাটিয়েছেন চোরের দিকে তাকিয়ে সেই লোকের মনোভাব, আহা! বেচারার বয়স বেশি হয়নি এখনই ধর্মকর্ম নিয়ে রাত জাগে এমন মানুষের দেখা পাওয়াও সৌভাগ্য
আর চোরের মনের কথা, ব্যাটা সারাত চুরি কইরা অহন আইছে পাক-পবিত্র হইতে গায়ে পানি দিলে কি পাপ যাইব ?
মোদ্দা কথা এটাই আপনি নিজে যা করেন ধরে নেন অন্য সবাই সেটাই করছে, কিংবা করবে, চিন্তা করে কিংবা করবে নিজে যেভাবে, যে ফর্মুলায় ভাবেন আরেকজনকে যেই ফর্মুলায় যাচাই করেন একবারের জন্যও মনে হয়না তার নিজস্ব ফর্মূলা রয়েছে সে সেটাই করবে যা তার ফর্মুলার সাথে মেলে
এটা অনেক পুরনো গল্প আজকাল সারারাত জেগে প্রার্থনা করে ভোরে পকুরঘাটে যাওয়ার মানুষ পাওয়া অলৌকিক ব্যাপার বরং বর্তমানের গল্প কি হতে পারে সেটাই বিবেচনা করা উচিত
ধরুন একজন চোর এবং একজন সাধুর বদলে দুজন চোর গেছে একজন বড়চোর, একজন ছোট চোর বড় চোরের মনোভাব, ব্যাটা আর কাম পায় না, ব্যবসায় ভাগ নিতে আইছে ক্যানরে ব্যাটা, অন্যকামে যাইতে পারস না এইখানে আইসা ভিড় করছস সবখানে কম্পিটিশান
ছোট চোরের মনোভাব, ব্যাটা সমাজে থাকে ক্যামনে একটু চক্ষুলজ্জা বইলা কিছু নাই অগো কারনেই দ্যাশের এই অবস্থা পেটের তাগিদে আমাগোও ওইসব করতে হয় যাউক আল্লা ভাল রাখছে, তারমত বড় পাপী করে নাই আবার এইদিকে ক্যামনে তাকায় দাড়া ব্যাটা, আগে পথঘাট ভাল কইরা চিইন্যা লই তুই আর কত কামাইছস ...
সমাজে যারা বাস করে সবাই চোর না কে চোর সেটা বের করাও কঠিন। কে চোর এই প্রশ্ন করে অন্তত একজনেরও দেখা পাবেন না এমনকি ধান্দাবাজ কিংবা বাটপারও না এমনকি দুনীতিবাজ কিংবা ঘুষখোরও না সকলেই দুর্নীতিবিরোধী ওইযে টিভিতে সাক্ষাতকার দিল যে ব্যক্তি, টাকা-পয়সা, বাড়ি-গাড়ি সব আমার বউয়ের নামে আমার নিজের কিচ্ছু নাই কি কইলেন ? দুর্নীতির মামলা ?? হে-হে-হে কি হইব মামলায়! ফাসি তো দিব না জামিন নিতে কত ট্যাকা লাগে জানেন ? জানলে কন
টিভির সামনে বসে যে দর্শক তাদেরও কিছু প্রতিক্রিয়া হয় বৈকি কেউ রীতিমত খাপ্পা এইজন্যই দেশের এই অবস্থা ওই লোকের ফাসি দেয়া উচিত চীন ঠিক কাজই করে
যদি সঙ্গি থাকে, যদি কোনভাবে প্রতিবাদ আসে কারো তরফ থেকে, আপনে কি করেন ? বেতন পান ১৫ হাজার, বাড়িভাড়া দেন ৩০ হাজার পোলার স্কুলের বেতন ১৫ হাজার। আবার প্লট লইছেন দুইডা
ধূর, ওসব কিছু হল নাকি আমি কি ওরমত পাচটা বাড়ি বানিয়েছি এখনও থাকি ভাড়াবাড়িতে, রিকন্ডিশন গাড়িতে চলি একে কি ধান্দাবাজি বলা যায় বলতে পারেন একটু বুদ্ধির খেলা যোগ্যতা কত আছাড় খাইয়া শিখছি জানেন!
শেখার মুল কথা আসলে ওটাই। আছাড় খেয়ে শিখতে হয়। একজন শিশু যখন দাড়াতে শেখে তখন বড়রা ধরে রাখে। যেন পড়ে না যায়। তারপরও আছাড় খেতে হয়। যখন পা ফেলতে শুরু করে তখনও ধরে হাটি হাটি পা পা করায়। তখনও আছাড় খেতে হয়। তারপর যখন অন্যের সাহায্য ছাড়াই চলতে শুরু করে তখন আর দৃষ্টি দেয়ারও প্রয়োজন নেই। আর আছাড় খায় না।
অনেকেই সেই আছাড় খাওয়ার পর্যায় পেরিয়ে গেছেন। অন্যরা যেন আছাড় খেয়ে হলেও শেখেন সেই দায়িত্ব নিয়েছেন। বাকিরা আছাড় খেয়ে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে নিজে শেখার চেষ্টা করে চলেছে।
একদিন সবাই শিখে যাবে আছাড় না খেয়েই চলা যায়। কিংবা নিজে আছাড় খেলে অন্যকে ল্যাঙ মারা যায়। আমাকে একশ টাকা ঠকিয়েছে তাতে কি, আমি যে পাচশ টাকা ঠকালাম। লাভটা কার!
সেই দিনের অপেক্ষা।

0 comments:

 

Browse