ভারতবর্ষে আলেকজান্ডার উপকথার মত চরিত্র। ইসকান্দর কিংবা সেকেন্দার যাই বলুন না কেন, পেছনের ব্যক্তি ওই আলেকজান্ডার। মহান বাদশা। ইসকান্দর কিংবা সেকেন্দার শব্দদুটির মানেই তাই। একদিকে রাজা-মহারাজা অন্যদিকে মহত্ব দুই বুঝায়। কাজেই তাকে নিয়ে নানারকম গল্প চালু থাকবে সেটাই স্বাভাবিক।
এমনই এক গল্প। তার সৈন্যরা এক কুখ্যাত ডাকাতকে পাকড়াও করে হাজির করল তার সামনে। তিনি বললেন, তুমি খারাপ লোক। মানুষের বাড়িতে ডাকাতি কর, মানুষ খুন কর। আমি তোমাকে সাজা দেব।
ডাকাত বলল, আমি খারাপ লোক স্বিকার করি। আমি ডাকাতি করি মানুষের বাড়িতে, একজন দুজন মানুষ বাধা দিলে খুন করি। আর আপনি ডাকাতি করেন দেশে দেশে, খুন করেন হাজার হাজার। আমাকে সাজা দেবেন আপনি ? আলেকজান্ডার কথার অর্থ বুঝতে বেশি সময় নেননি।
অনেকেই সময় নেন। আর তাদের দোষ দেবেনই বা কেন ? তারা তো ফিলিপের ঘরে জন্ম নেননি, এরিষ্টটলের কাছে শিক্ষা নেননি, রাজত্ব করার সুখভোগও করেননি। বড়জোর নিজের চেষ্টায় কিছু টাকা এবং পরিচিতির মালিক হয়েছে। তারা সময় নেবেন, অন্যভাবে বুঝবেন এটাই তো স্বাভাবিক।
ওই শেয়ার বাজারের কথাই ধরুন না কেন। ৩৫ লক্ষ বিনিয়োগকারী। তৈরী পোষাক শিল্প ৩০ লক্ষ শ্রমিক নিয়ে যদি শীর্ষে থাকতে পায় তাহলে ৩৫ লক্ষ বিনিয়োগকারী নিয়ে শেয়ার বাজার শিল্প আলোচনায় স্থান পাবে না কেন ?
কাজেই, শেয়ার বাজার শিল্পের কথা। সেখান থেকে লক্ষকোটি টাকা উধাও হয়ে গেছে। ওই শেয়ার শিল্পেরই এক কর্তাব্যক্তির শেয়ারের দাম যখন বেড়ে ৭৫ গুন হয়েছে তখন তিনি ধুমসে কেনা শেয়ার তো বটেই, মালিকানাসুত্রে যে শেয়ার সেগুলিও বিক্রি করেছেন। যিনি কিনেছেন ৭৫ গুন দামে তিনি যে কপাল চাপড়াবেন সেটাই তো স্বাভাবিক। তবে যেহেতু হাতপা-কানচোখমুখ আছে, তারা আবার পথেও নামে। এদিকে ওদিকে ঢিল ছোড়ে, চিতকার করে, গালাগালি করে। একেবারে চুপ করে তো থাকা যায় না।
কাজেই বাস্তবের পেছনে কি হয়েছে জানার জন্য তদন্ত কমিশন। এবং দুভ্যাগ্যক্রমে সেই ব্যক্তি আবার সরকারপন্থী নন। কাজেই সেই তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে টানাহেচড়া, তার নামে মামলা। ব্যাটার সাহস কত, সমাজে দুর্নাম রটাইতে চায়।
বিষয়টি যখন অর্থ নিয়ে এবং এর পেছনে অর্থমন্ত্রী নামে এক ব্যক্তি রয়েছেন, তিনি আর কত চুপ করে থাকবেন। অনেকে এখনই বলতে শুরু করেছেন তিনি টিভি ক্যামেরার সামনে মডেল তারকার হাসি হেসে দিন কাটাচ্ছেন। একটু হাসি দিয়েই মুখ অন্যদিকে সরিয়ে নেন। টুথপেষ্টের বিজ্ঞাপনে ভাল করবেন। কিংবা হাজার পর্বের ধারাবাহিকে।
আর কথা বাড়িয়ে কাজ নেই। তিনি ব্যবস্থা নেবেনই নেবেন। মতিঝিলে সিসি ক্যামেরা বসাবেন, সেখানে ঢুকতে আইডি কার্ড রাখতে হবে। এইসব নানারকম পদ্ধতি। ডিজিটাল বাংলাদেশে সবকিছু ডিজিটাল পদ্ধতিতে হবে।
সে যাকগে। এসব প্রজেক্টের বহু ভাল দিক আছে। কেউ কন্ট্রাক্ট পাবে, কেউ আমদানী করবে, কেউ ইনষ্টল করবে, কেউ তদারকি করবে, কেউ সুপারিশ করবে। সবখানেই টাকা। তারপর রাস্তার মোড়ের লাল-হলুদ-সবুজ আলোকসজ্জার মত আরেকধরনের সৌন্দর্যবর্ধক হিসেবে কাজ করবে।
নিতান্ত বে-রসিক হলে প্রশ্ন করতে পারেন এরসাথে শেয়ারবাজারের ওই লক্ষকোটি টাকার সম্পর্ক কি। সিসি ক্যামেরায় কাকে দেখা হবে, আইডি কার্ডই বা কে কখন কাকে দেখাবে। নাকি মতিঝিল এলাকায় ঢুকতে ওটা ব্যবহার করতে হবে।
চুপ করেন। অকারনে হাউকাউ কইরেন না। একটা গুরুত্বপুর্ন কথা হইতাছে। কথাডা হইল, অপরাধীতে শাস্তি দিতে হইব। ওই ক্যামেরায় ধরা পড়ব কেডা অপরাধী। ওইযে খবরে শোনেন নাই ঠ্যাং কাটা গেছে যে লিমন সে কতবড় সন্ত্রাসি, তার বাপে সন্ত্রাসী, তার ভাইবোন-আত্বীস্বজন চৌদ্দগুষ্টি সন্ত্রাসী। শোনেন নাই বিএনপিপন্থী ড্যাবের জাহিদরে এরেষ্ট করা হইছে। ক্যান ধরা হইছে শুনবেন ? ওই যে তেজগায় দুর্ঘটনা ঘটল সেইহানে একজনের নাম জাহিদ। তারনামে নাম থাকব ক্যান ? সেই ব্যাটাও দায়ী।
কিছু মানুষ এরই মধ্যে বেয়াদপে পরিনত হয়েছে। কাকে কি বলা যায় বোঝে না। আলেকজান্ডারের সেই ডাকাতের মত। আরে ব্যাটা শেয়ার বাজারের ডাকাতি কেডা করছে সেইডা তো ভাল কইরাই জানস। অহন মুখ বন্ধ করবি না-কি ভিডিও দেইখা ঠ্যাংয়ে গুলি করমু।
0 comments:
Post a Comment