পক্ষির তৃতীয় পক্ষ

May 28, 2010
পক্ষির দুইখানা পাখা থাকে। তার ওপর ভর করে অনায়াসে বাতাসে ভেসে বেড়ায়। শুণ্যে ভেসে থাকা চিল দেখে মানুষও তাকে অনুকরন করেছে। গ্লাইডার নামের একধরনের বস্তু, দেখতে সেই পক্ষির পাখনার মতন, সেটা দিয়ে বাতাসে ভেসে বেড়ানো যায়।
মুলসুত্র একটাই, দুই পক্ষে সমতা রাখতে হয়। নইলে ঘুড়ির একদিকে ভারী হলে যেমন গোত্তা মারে তেমনই গোত্তা খেতে হয়।
এই নীতি বুঝেছিলেন জর্জ অরওয়েল, বহু বছর আগে। ১৯৮৪ নামে একখানা বই লিখেছিলেন। তার পৃথিবী শাসন করবে দুই সুপার পাওয়ার। একে অন্যের সমান হয়ে ভারসাম্য রক্ষা করবে। একসময় আমেরিকা-সোভিয়েত দেখে মানুষের এই ধারনা আরো বদ্ধমুল হয়েছিল। কিন্তু বিষয়টা চিরস্থায়ী হয়নি। অরওয়েলের সেই ৮৪ সালের স্বপ্ন পুরন হয়নি।
আরো বৈশিষ্টের কথা লিখে গেছেন তিনি। একপক্ষের নেতা ষ্টেজে উঠে জ্বালাময়ী ভাষন দিচ্ছে। জনগনকে রীতিমত তাতিয়ে তুলছেন। এরই মধ্যে একজন এসে হাতে একটা চিরকুট ধরিয়ে দিল। সেটা একনজর দেখলেন তিনি। তারপর বক্তৃতা আরো জ্বালাময়ী হয়ে উঠল। তবে, এবার গতি বিপরীত দিকে।
আমরা ভাল করেই এধরনের বিপরীত জ্বালাময়ী বক্তৃতার সাথে পরিচিত। যখন যেদিকে পাল তখন সেদিকে হাল। নৌকার এটাই নিয়ম। নৌকার সাথে যখন আওয়ামী লীগের নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত তখন তাকে উদাহরন হিসেবে ব্যবহার করা যেতেই পারে।
একসময় আওয়ামী লীগ প্রধান গর্ব করে বলেছিলেন এক-এগারো তাদের আন্দোলনের ফল। তখন পুরো জাতি এক-এগারো নায়কদের সমর্থন জুগিয়ে যাচ্ছিল। তারা যতদিন খুশি ক্ষমতায় থাকুন, দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করুন, গনতান্ত্রিক করুন। আমরা আছি তোমার সাথে।
তারপর, সেই সমর্থন একসময় কমতে শুরু করেছে। দুর্নীতিমুক্ত করার নমুনা, গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নমুনা দেখে জনগন আরেকবার ঠিকপথে এসেছে, আমাদের ওইসব নেতাই ভাল। তিন-উদ্দিন কি করেছে সেটা নিয়েও নানামুনির নানামত। কাজেই আর সমর্থন করা যায় না। এটা কখনো তাদের আন্দোলনের ফল হতে পারে না। কাজেই,
এক-এগারো হচ্ছে চারদলীয় জোট সরকারের দুর্নীতির ফল। তাদের কারনেই দেশের মানুষ কালো সময় অতিক্রম করেছে।
সে যাকগে। কথা হচ্ছিল পক্ষি এবং পক্ষ নিয়ে। পক্ষির দুটি পক্ষ না হয়ে তিনটি হলে কেমন হত আন্দাজ করা কি সম্ভব। জনগন যখন দুইপক্ষে সন্তুষ্ট না। একপক্ষ আওয়ামী, আরেক পক্ষ জাতিয়তাবাদী, তারপর তৃতিয় পক্ষ
এদের মাঝেমধ্যে দেখা যায়। একবার এদিকে হেলেন, আরেকবার ওদিকে। কখনোই স্থায়ী পক্ষ অবলম্বন করেন না। দুইই ভাল, দুইই খারাপ।
কেউ কেউ বলেন ওসব আওয়ামি-জাতিয়তাবাদী বলে কিছু নেই। পক্ষ দুটিই। সরকারী পক্ষ এবং বিরোধী পক্ষ। স্থান পরিবর্তন হওয়ার সাথেসাথেই বক্তব্য পাল্টে যায়। সেই অরওয়েলের চিরকুটের মত। একপক্ষ দেখতে পান হরতাল ছাড়া সমাধান নেই, আরেকপক্ষ দেখতে পান এরমত ভয়াবহ ক্ষতিকর কিছু নেই। একপক্ষ বোঝেন সংসদে সমাধান হওয়ার কোন সুযোগ নেই, আরেক পক্ষ হাড়ে হাড়ে বোঝেন সংসদ গনতন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দু। সব সমাধান সেখানেই। আর সেই তৃতিয় পক্ষ, দুদিকেই সমর্থন জোগান, দুদিকেই বিরোধীতা করেন।
বিজ্ঞান বলে, সমাধান এই তৃতীয় পক্ষের হাতেই। তারাই ঠিক করে দুই পক্ষের সমতার পর দুজনে কোনদিকে যাবে। পক্ষির অনুকরনে দুপাশে পাখা লাগিয়ে আদর্শ বিমান তৈরী হয়নি, কোনদিকে যেতে হবে ঠিক করার জন্য লেজের দিকে আরেকটা পাখা লাগাতে হয়েছে।
পক্ষির লেজ যাকে বলা হয় সেটা আসলে দিক ঠিক করার আরেকটি পক্ষ। সেকারনে পাখির দুটি পাখা না বলে তিন পাখা বলাই যুক্তিসংগত।

0 comments:

 

Browse