হেলায় করিল জয়

May 26, 2010
বাঙালীর ছেলে হেলায় লংকা জয় করতে পারে। অন্তত করেছিল হাজার বছর আগে। তারপর সেই জয় আরেকবার দেখতে কেটে গেছে দুহাজার বছরের বেশি।
কিংবা আরো সচেতন হলে এভাবেও বলতে পারেন, বাঙালীর ছেলে হেলায় করিল জয় এভারেষ্ট।
এটাই ঠিক। মুসা ইব্রাহিম বাঙালীর ছেলে। সে এভারেষ্ট জয় করেছে। হিলারীর নামের সাথে বলা হবে তার নামও। আর ওই বিজয় সিংহের লংকা জয়ের বিষয়টা অনায়াসে বাদ দিতে পারেন। অন্তত ঐতিহাসিকরা যখন বলেন বাঙালী জাতির বয়স হাজারখানেক বছর।
ইতিহাস নিয়ে টানাটানি করার কোন ইচ্ছে নেই। আমরা এখনো জানিনা কার ঘোষনায় বাংলাদেশ হয়েছে। জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের চর ছিলেন না মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তারচেয়ে বরং নির্জীব বিষয় নিয়ে কথা বলা যাক। অন্তত জয় করার বিষয় যেখানে রয়েছে।
বাংলা ভাষাকেও আমরা জয় করেছি বায়ান্ন সালে। আমরাই একমাত্র জাতি যারা ভাষার জন্য জীবন দিতে পারে (আমাদের দাবী, যদিও ভারতের মানুষ জীবন দিয়েছে একই কারনে)। আমাদের কারনে একুশে ফেব্রয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। আমরা না থাকলে কি হত!
কাজেই ভাষা নিয়ে আমাদের কৃতিত্বের অভাব নেই। পত্রিকায় একবার খবর চোখে পড়েছিল ডজন তিনেক গবেষক গবেষনাপত্র জমা দিয়েছেন কম্পিউটারে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিয়ে। আছে অন্য দেশে ?
মোটেই নেই। কম্পিউটার যখন মানুষের কাছে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর এক যন্ত্র তখনই মানুষ শুনেছিল বাসকি নামে এক শব্দ। ওদের আসকি আর আমাদের বাসকি। আমরা পিছিয়ে থাকব কেন ?
না আমরা পিছিয়ে নেই। একসময় বাংলাকে জয় করা হয়েছে। এই বিজয়ের নাম বিজয়। কয়েক হাজার টাকায় কিনতে হত একসময়। কমাস পর নষ্ট হলে আবার কয়েক হাজার টাকা। তবে এটা বিজয়। লংকা জয়ের নায়কের মতই আরেক বিজয় সিংহ। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ছাপা হত, এই বিজ্ঞাপনে কাচি ব্যবহার করা হয়নি। পুরোটাই কম্পিউটারে করা।
আমাদের দুঃখ এটাই, অন্যরা আমাদের দিকে চেয়ে দেখে না। সেই উইন্ডোঝে থামলে কি হত ? উইন্ডোজ থেকে নাইন্টিফাইভ, তারপর টু থাউজেন্ড, তারপর এক্সপি, তারপর ভিসতা, তারপর সেভেন। এতকিছুর দরকার কি বাবা। প্রতিবার যে আমাদের বাংলায় পরিবর্তন আনতে হয়। একসময় রীতিমত গিট্টু খেয়ে বসে থাকতে হয়। বসে বসে কি আঙুল চুসব!
না-না, কে যেন বিজয় কিবোর্ড নকল করেছে। ব্যাটার সাহস কত। এইযে একটা কাজ পাওয়া গেছে। দেখি কতটা নাকানি-চুবানি খাওয়ানো যায়। ব্যাটার মাতব্বরী করার শখ। ভিসতায় বাংলা চালাবে। আবার বিনে পয়সায়। একেই তো ভাত মারা গেছে আগামীতে কিছু করার পথটাও বন্ধ করছে।
আর যারা কম্পিউটার ব্যবহার করেন ?
সরকার নির্দেশ দিয়েছে দুসপ্তাহের মধ্যে ওপেনটাইপ বাংলা চালু করতে হবে মন্ত্রনালয়ে। নইলে-
কার বাংলা ?
এখন ওসব কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। কারো নামে যদি স্বত্ব দেয়া হয় তাহলে তার। উনি দেখিয়েছেন কিবোর্ডে জে চাপলে ক লেখা হবে, সেটা ওনার আবিস্কার। দেখতে পাননা বিজয় চালু করলে ওনার ছবি দেখা যায়। আপনার ওই অক্ষর ব্যবহার করবেন না। পারলে অন্য অক্ষর ব্যবহার করুন। মেধার দাম না দিলে মেধার বিকাস ঘটে না শোনেননি।
আর, ওপেন টাইপ। চিঠিপত্র লিখবেন, ইমেল করবেন, বাংলায় চ্যাট করবেন। আরকি চাই ? বলছেন অনেক সফটঅয়্যারে ব্যবহার করা যায় না। এডবির কোন সফটঅয়্যারেই না।
ওসবে আমার দরকার কি ? নিতান্তই দরকার হলে এক্সপি ব্যবহার করবেন। ওখানে ঠিকমত কাজ করে। কসম। কম্পিউটারের দাম কমিয়েছি, সফটঅয়্যার কিনতে হয় না। এরবেশি আর কি করতে বলেন।
যে ভাষায় বড়জোর ১০ লাখ মানুষ কথা বলে সেই ভাষায়ও উইন্ডোজ আছে বলছেন। জনসংখ্যায় ৭ম হয়েও বাংলায় নেই কেন প্রশ্ন করছেন ? ওই প্রশ্ন বিল গেটসকে করুন। সে জানে।
আমাদের এই-ই ভাল। আমরা পারি না এমন কাজ নেই। এভারেষ্ট জয় পর্যন্ত করতে পারি। ওসব ছোট বিষয় নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় নেই।
১৬ কোটি মানুষের দেশে, একটা জাতির হাজার বছরের ইতিহাসে একজন মুসা ইব্রাহিম। সংখ্যাটা কমই। অন্তত কম্পিউটারে বাংলা ভাষার সমাধানের জন্য তারমত একজন জেদি মানুষ প্রয়োজন ছিল।

0 comments:

 

Browse