অন্ধ ঠকিয়ে লাভ

May 23, 2010
লাভ সবাই পছন্দ করে। বস্তুত এর ওপর ভিত্তি করেই সব কাজের উসাহ উদ্দীপনা। বাংলা-ইংরেজিতে ভেদাভেদ নেই। সব লাভই লাভ। শেয়ার ব্যবসায়ী আশা করেন কম দামে কিনবেন আর বেশি দামে বেচবেন। লাভ না হয়ে যায় না। একবারের জন্যও ভাবেন না সবাই যদি একই লাভ খোজে তাহলে তারকাছে কমদামে বেচবে কে, বেশি দামে কিনবে কে। সে কি অন্ধ ?
কিন্তু, সবাই যখন একধরনের চিন্তা করে এবং একধরনের চিন্তা বাদ দেয় তখন লাভে সমস্যা হয় না। অন্তত বাংলাদেশে অনায়াসে ১০০ টাকার শেয়ার হাজার টাকায় পৌছে। এমনকি যে কোম্পানীর শেয়ার তার মরনদশা হলেও, তার অস্তিত্ব না থাকলেও। মাইক্রোসফট-এপলের শেয়ারের দাম ওঠানামা করে কোম্পানীর ভালমন্দ কিছু ঘটলে। বাংলাদেশে শেয়ার ব্যবসা যখন নিজেই ব্যবসা তখন ওসব কোম্পানীর তোয়াক্কা করে কে ?
কাজেই, লাভ করতে হবে। অন্ধকে ঠকিয়ে হলেও।
ভারতের সাথে আমাদের বন্ধুত্ব-শত্রুতা-তুলনা সবই চলে সমানভাবে। রাজনৈতিক বিষয়ে না গিয়েও নিরাপদে উল্লেখ করা যায় আইটির কথা। ভারত সবে ওয়াইম্যাক্সের লাইসেন্স নিলাম করছে, আমরা চালু করেছি। তুলনা চলতেই পারে।
ভারত নাকি আউটসোর্সিং কাজে বিশ্বে ১ নম্বরে। সিলিকন ভ্যালীতে এমন কোম্পানী পাওয়া কঠিন যেখানে ভারতীয় নেই। কোন কোন কোম্পানীর প্রধান তারাই। বাংলাদেশিও আছেন অবশ্যই। মাঝেমাঝে তাদের কৃতিত্বের কথা পত্রিকায় ছাপা হয়। এবিষয়ে আমরা বিন্দুমাত্র ছাড় দেই না। তারপরও, পার্থক্য কিছুটা থাকেই। যেমন,
ভারতের কিছু ব্যক্তি কিংবা কোম্পানী সেখান থেকে কাজ সংগ্রহ করেন। তারপর ভারতের মধ্যে খুজে বের করেন কাকে দিয়ে সেই কাজ করানো যায়। সন্মিলিত ফল হচ্ছে, কিছু মানুষ যাদের কাজ করার দক্ষতা আছে, তারা কাজ খোজার জন্য অলিগলি না ঘুরেই হাতের কাছে কাজ পাচ্ছে। আর কিছু মানুষ যাদের অলিগলি জানা তারা মধ্যস্থতা করে লক্ষ ডলার কামাচ্ছে। লাভ দুপক্ষেরই।
এরই আংশিক চিত্র বাংলাদেশে। হাজার হাজার (নাকি লক্ষ লক্ষ) মানুষ ইন্টারনেটে কাজ খুজে মরছে। শোনা যায় কিছু বাংলাদেশি সিলিকন ভ্যালী থেকে কাজ এনে ফেরত নিয়ে গেছেন যোগ্য মানুষ না পেয়ে। ভারতের এই সমস্যা হয়নি কারন তারা আগেই লক্ষ ডলারের কাজে হাত দেয়নি। যে ওয়ার্ড প্রসেসিং জানে তারজন্য ওয়ার্ড প্রসেসিং, যে গ্রাফিক ডিজাইনার তারজন্য গ্রাফিক ডিজাইন, যে প্রোগ্রামার তারজন্য প্রোগ্রামিং এই পদ্ধতেই চলেছে। তাদের কাজ ফেরত দেয়া প্রয়োজন হয়নি।
যে যাকগে। বলছিলাম লাভ করার কথা। সেটা যেহেতু করতে হবে সেহেতু লাভের পথ খুজতেই হয়। এখানে লাভের পথ একটু অন্যরকম। আপনি ইন্টারনেটে কাজ করতে চান ? আসুন বলে দিচ্ছি কাজ কিভাবে হয়। কোথায় খুজতে হয়, কত সহজে কত টাকা পাওয়া যায়। সেমিনারে যোগ দেয়ার ফি মাত্র ১ হাজার টাকা। আচ্ছা ৫০০ টাকাই সই। আসুন সব শিখিয়ে দিচ্ছি কিভাবে ঘরে বসে হাজার ডলার কামানো যায়। ভারতকেও ছাড়িয়ে যাবেন।
কি শিখতে হবে জানতে চান ? কিভাবে করবেন জানতে চান ?
সে দায়িত্ব আপনার। নিজেই শিখে নিন না কেন। ওইযে ব্যানার ঝুলানো ১ হাজার টাকায় ১৬ কোর্স, ওদের কাছে যান। ডস-উইন্ডোজ থেকে শুরু করে সি শার্প শিখিয়ে আপনাকে শার্প করে দেবে। সেই ধারে সব কাটবে।
আপনি নানা ঘাটে পানি খেয়ে একসময় নিজেই ইন্টারনেট ঘুরতে পারেন। তারপর নিজের চোখে দেখে, সবকিছু জেনে অনুনয়-বিনয় করে বলতে পারেন, আরকিছু দরকার নেই শুধু পে-পল টা চালু করুন। শেখার দায়িত্ব আমার, কাজ খোজার দায়িত্ব আমার, করার দায়িত্ব আমার। কাজশেষে ১০০ ডলার যেন আমি হাতে পাই সে ব্যবস্থাটুকু করুন।
সে গুড়ে বালি। আপনি অনলাইনে অবৈধ লেনদেন করবেন, সরকারের লাভে বাধা দেবেন সেটা হবে না। এভাবেই তো দুর্নীতি বন্ধ রাখা হয়েছে। জানেন না আমেরিকা-ইউরোপে ওরা বিলিয়ন-বিলিয়ন ডলারের দুর্নীতি করে। ওসব করলে কি এই দেশ টিকবে ?
আমরা ওসব হতে দেব না। সরকারের লাভ সরকারকে করতে দিন। আপনার লাভ আপনি খুজে নিন।
অন্ধকে ঠকিয়ে হলেও।

0 comments:

 

Browse