কপিরাইট বনাম কপি-রাইট

May 17, 2010
কপিরাইট করেন ?
সিডির দোকানে ক্রেতার প্রশ্ন। দোকানদার বুঝে ওঠেননি ক্রেতা কি চান। ক্রেতাকেই পকেট থেকে একটা সিডি বের করে দেখাতে হল, এইডার একটা কপি রাইট কইরা দিতে পারবেন ?
একেবারে স্পষ্ট ব্যাখ্যা। তিনি কপিরাইট করেন বৈকি। সারাদিনই করেন। সিডি-ডিভিডি সবই। গান-গেম-সফটঅয়্যার-মুভি কোনটাই বাদ নেই। পকেটে করে সিডি বয়ে আনারও প্রয়োজন নেই। সবই কপিরাইট করা আছে। চাহিবামাত্র পাইবেন। সিডি পচিশ, ডিভিডি চল্লিশ। কপি রাইট করার জন্যই তৈরী হয়েছে সিডি রাইটার, ডিভিডি রাইটার। ব্লুরে রাইটারের কথাও শোনা যায়। এখনও দামটা বেশি। দাম কমলে ওটাও পাবেন। হলিউডের আগেই পাইবেন।
কপিরাইট অন্যভাবেও হয়। ফটোকপির প্রচলন তো বহুকাল ধরেই। সার্টিফিকেট, নোট থেকে শুরু করে বই পর্যন্ত। দেশি বই-বিদেশী বই। দেশের সবচেয়ে প্রচলিত সংবাদপত্র (তাদের দাবী) রীতিমত প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে ফিচার লিখে ফেলল, নিলক্ষেতে কমদামে উচ্চশিক্ষার বই। ৫ হাজার টাকার বই পাবেন দুশো টাকায়। অর্ডার দিয়ে যাবেন, তারা তৈরী করে দেবে। বাজারে পাওয়া যায় না এমন বইও পাবেন। জাতিকে উচ্চশিক্ষিত করে উচ্চতায় তোলার মহত দায়িত্ব নিয়েছেন এইসব অর্ধশিক্ষিত-অশিক্ষিত গবীব সহজ-সরল মানুষগুলো। নামমাত্র লাভে দেশের সেবা করে যাচ্ছে। সরকারের উচিত এদের দিকে দৃষ্টি দেয়া। শিল্প হিসেবে বিকাশ ঘটানো। কেউ কেউ ফটোকপির প্রাচীন পদ্ধতি ছেড়ে আধুনিক পদ্ধতির দিকে যাত্রা শুরু করেছেন। রীতিমত অফসেট প্রিন্টারেই ছাপা হয়। লেখকের খরচ নেই, কম্পোজ-ডিজাইনের মামলা নেই। স্ক্যানিং-ট্রেসিং-প্রিন্ট পদ্ধতি। হুবহু এক বই। চাররঙা প্রচ্ছদ।
সবাই এতে সহযোগিতা করছেন এমনটা বলা যায় না। কিছু মানুষ তো রীতিমত মুখিয়ে আছে শত্রুতা করার জন্য। পাঠ্যবই করবে কর, সুনীল-শীর্ষেন্দু-সমরেসের বই যত খুশি কর আমরা দেখছি না।  তাই বলে দেশি উপন্যাস করবে ? জানেন কত মানুষ টিকে আছে এই শিল্পে। উপন্যাস না থাকলে বাংলা সাহিত্য কবে বুড়িগঙ্গায় তলিয়ে যেত।
কাজেই মাঝেমাঝে পত্রিকায় ছবিসহ বিজ্ঞাপন দিতে হয় (বিজ্ঞাপনই, খবর না। নিজের টাকা খরচ করে ছাপতে হয়) হুমায়ুন আহমেদের নকল বইসহ গ্রেপ্তার। আসলে গ্রেপ্তার হয়েছে নাকি দুচারজন মডেল দাড় করিয়ে ছবি তুলে ছাপা হয়েছে কে জানে ? বিজ্ঞাপন ছাপা হ্য় প্রকাশকের টাকায়। হয়ত ভয় দেখানো। হুমকি-ধামকিতে যদি কাজ হয়। মাইক্রোসফটের ধামকিতে যেমন হয়েছে। আপনারা কপিরাইট করবেন করুন। যত খুশি করুন। তাইবলে উইন্ডোজ আর অফিসের সিলভার ডিস্ক বানিয়ে আমেরিকায় রপ্তানি করবেন সেটা হবে না। অন্যদেশের বই নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই, দেশের জনপ্রিয় লেখকের বই কপিরাইট করবেন না।
মাইক্রোসফটের এক কথায় কাজ হয়। কিন্তু অনেকেই জানেন তাদের এক কথায় কাজ হবে না। দেশের মধ্যে হর্তাকর্তা-বিশেষজ্ঞ হলেও না। তাই কথা ঘুরিয়ে বলতে হয়। আপনারা দেশি সফটঅয়্যারের কপিরাইট মেনে চলুন। তবে বিদেশী সফটঅয়্যারের বিষয় সাবধানে মোকাবেলা করতে হবে। এই মুহুর্তে সেটা বন্ধ করা যাবে না। বন্ধ করলে অনেক টাকার সফটঅয়্যার কিনতে হবে।
তার এই কথায় কাজ হয়নি। এখন দেশি সফটঅয়্যার কেউ টাকা দিয়ে কেনে না। এমনকি অনেকে ব্যবহারও করে না। রীতিমত নকল করে নিজের নামে চালিয়ে দেয়। বিজয় নাকি ভিসতা-সেভেনে চলে না, অভ্র চলে। বেয়াদ্দপ। বিজয় না হলে বাংলা কম্পিউটারে বাংলা ভাষা ব্যবহার হত ? এটা ছেড়ে দেয়া যায় না। জেলে ঢুকাতে হবে। কোথায় কপিরাইট আইন। কোথায় অফিস ?
কপিরাইট অফিস একটু নড়েচড়ে বসল। এইবার লোকজনরে একটু জানান দেই দেশে কপিরাইট অফিস বইলা কিছু আছে। লেখেন তো একখান উকিল নোটিস। কপিরাইট ল ইনফ্রিঞ্জমেন্ট। কি জানি হয় বাংলায়। কাকে নেড়েছ বাবা! একহাত দেহায়া দেই।
কি কইলা ? বাংলা ঠিকমত টাইপ হয় না ? ভিসতা ইনষ্টল করছ ? আইচ্ছা, ওই অভ্র না কি, ওইডা দিয়া লেখ।

0 comments:

 

Browse