আমরাও পারি

Nov 2, 2011
বাঙালী পারে না এমন কাজ সম্ভবত নেই। যে অর্থেই বুঝুন না কেন, বাঙালী দেখাতে পারে। অন্তত যারা ১০ হাজার টাকার ল্যাপটপ দেখতে চেয়েছিলেন তারা সেটা দেখেছেন। সবগুলি সংবাদ মাধ্যমে দেখানো হয়েছে আর প্রধানমন্ত্রী সেটার উদ্বোধন করে বলেছেন, আমরাও পারি।
আমরাও পারি কথাটির মধ্যে নির্দিষ্ট কাজের উল্লেখ করা হয়েছে। দোয়েল নামের ল্যাপটপ নিজেদের তৈরী, এটাই সেই নির্দিষ্ট কাজ। এর ৬ শতাংশ যন্ত্র দেশেই তৈরী হয়েছে। আগামী ৬ মাসে ৬০ শতাংশ তৈরী হবে। যদি নিতান্তই বাচাল হয়ে থাকেন তাহলে আরেকটু আগ বাড়িয়ে বলতে পারেন, ৬ মাসে ৬০ শতাংশ, ১০ মাসে শত শতাংশ। ইন্টেল-এএমডিকে দেখিয়ে দেব আমরাও পারি।
কোন যন্ত্রাংশ দেশে তৈরী হয়েছে সেকথা অবশ্য কেউ উল্লেখ করেননি। সত্যি বলতে কি সংবাদ মাধ্যম চোখে কালো চশমা এটে রেখেছে। যারা এই খবরের সাথে জড়িত তাদের প্রত্যেকেই একাধিক কম্পিউটার ব্যবহার করেন। এমনকি তাদের সাথে যে মোবাইল ফোন সেটাও রীতিমত কম্পিউটার। কাজেই কনফিগারেশন শব্দটি তারা খুব ভালভাবেই বোঝেন। কালো চশমাটি এতই কালো যে সেটা ভেদ করে কনফিগারেশনের বিষয়টিতে আলো পড়েনি। জনগন অপেক্ষা করছেন, কবে হাতে পাব। সাথে নিয়ে পার্কে-চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দেব। পিঠে ঝুলিয়ে বেড়াব।
বাংলা প্রবাদ, দুদিনের চাদ ঘরে বসে দেখা যায়। দেশের সংবাদমাধ্যম চোখ বন্ধ রাখলেও বিদেশের সংবাদমাধ্যম সেটা করেনা। অন্তত বিশ্বের সবচেয়ে গরীব একটি দেশে কিভাবে সবচেয়ে কম টাকায় ল্যাপটপ কম্পিউটার তৈরী হল সেকথা তাদের দৃষ্টি এড়াবে এটা ভাবা যায় না।
কাজেই, কথা না বাড়িয়ে যা জানা গেছে সেটাই দেখা যাক। সেই কনঠিগারেশন বিষয়টি।
এর প্রসেসর ৮০০ মেগাহার্টজ ভায়া (ভিআইএ-৮৬৫০), র‌্যাম ৫১২ মেগাবাইট, ডিসপ্লে ১০.১ ইঞ্চি, ষ্টোরেজ ১৬ গিগাবাইট ফ্লাশ মেমোরী। আরো আছে ওয়েবক্যাম, ওয়াইফাই কানেকটিভিটি ইত্যাদি। এবং অপারেটিং সিষ্টেম এন্ড্রয়েড।
অন্য সবকিছু বোধগম্য না হলেও একটি বিষয় অন্তত লক্ষ্য করে থাকবেন। হয়ত প্রশ্ন করবেন, হার্ডডিস্ক কত ? নয়ম ধরে নেবেন দাম কমানোর কারনে ওটা দেয়নি। যাকগে পড়ে লাগিয়ে নেয়া যাবে।
রহস্য না করে বিষয়টি খোলাসা করেই বলা যাক (উপায় নেই কারন বাংলাদেশে কম্পিউটারের প্রসার এমনভাবেই ঘটেছে যে সফটঅয়্যার টাকা দিয়ে কিনতে হয় শুনলে অনেকেই ক্ষেপে ওঠেন)।
এর অপারেটিং সিষ্টেম এন্ড্রয়েড। গুগলের তৈরী এই সফটঅয়্যার যাত্রা শুরু করেছিল মোবাইল ফোনে, বর্তমানে ট্যাবলেট নামের যন্ত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে হার্ডডিস্ক বলে কিছু থাকে না। মোবাইল ফোনের সাথেই তুলনা ভাল মানানসই। অন করলেই কিছু কাজ করা যায়, বাকি কাজের জন্য সফটঅয়্যার ইনষ্টল করতে হয়। সফটঅয়্যার ইনষ্টল করতে হয় গুগলের এন্ড্রয়েড ষ্টোর থেকে। আবারো মনে করিয়ে দিতে হচ্ছে, সফটঅয়্যার পাওয়ার অন্য কোন যায়গা নেই।
তাতে আপত্তি কি ? ওয়াইফাই যখন আছে ...
ওয়াইফাই কোথায় আছে ? এতদিন তো গর্ব করা হয়েছে আমরা ওয়াইফাইয়ের মত পুরনো প্রযুক্তি ব্যবহার করি না। আমরা ব্যবহার করি ফোরজি, ওয়াইম্যাক্স। ভারতের আগে চালু করেছি। ইদানিং শোনা যাচ্ছে থ্রিজি চালু হবে। ওয়াইফাই কোথায় ? আর ডিভিডি রম ? ওটা না থাকলে ভিডিও দেখব কিভাবে ?
সে যাকগে। বাংলাদেশের মানুষ সবই পারে। দেখবেন কোনভাবে মাইক্রোসফটের সফটঅয়্যারও এন্ড্রয়েডে চালানোর ব্যবস্থা হয়ে গেছে। গ্রামিন কিংবা টেলিটকের সিম দিয়ে ওয়াইফাই ব্যবহার করা যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আপনারা সব লাইব্রেরীকে ডিজিটাল বানিয়ে ফেলুন। ওই ল্যাপটপ দিয়ে সব বই ব্যবহার করা যাবে। ডিজিটাল বইয়ের জন্যও যে টাকা খরচ করতে হয় সেটা ভাবার সময় কোথায়।
আসলে, বাঙালী সবই পারে। ভালও পারে মন্দও পারে। নারায়নগঞ্জে দেখা গেছে একজন নেতা এবং সাধারন মানুষ সরাসরি সরকারের বিপক্ষে নিজের দাবি প্রতিস্ঠা করতে পারে। গ্রাম্য ভাষায় প্রবাদ হচ্ছে থুথু ফেলে নিজের থুথু চাটা, সেটাও করানো যায়। প্রয়োজন হলে সরকার সমর্থিত প্রার্থী কিংবা প্রধানমন্ত্রী সবাই সেটা করতে পারেন।  
প্রধানমন্ত্রী তো বলতেই পারেন, আমরাও পারি।

0 comments:

 

Browse