গন্ডারের চামড়া

Nov 19, 2011
বাংলাদেশ থেকে গন্ডার বিলুপ্ত হয়েছে অনেক আগে। যদিও এমন না যে গন্ডারের চামড়া থেকে ভালকিছু হয় কিংবা মানুষ গন্ডারের মাংশ খায়। কারন যাই হোক, গন্ডার নেই এটাই কথা। দেখতে ইচ্ছে হলে চিড়িয়াখানায় গিয়ে বিদেশী গন্ডার দেখতে হয়। তারপরও গন্ডারের চামড়া শব্দটা থেকে গেছে। থেকে গেছে অনেক গল্প। একেবারে প্রচলিত গল্প দিয়েই শুরু করা যাক।
দুবন্ধ গেছেন বনে। তখনো গন্ডার ছিল এমন বনে। একসময় গন্ডারের সামনাসামনি পড়ে গেল এবং গন্ডার তাড়া করল। একজন দৌড়ে পালাল ঠিকই আরেকজনের সেটা সম্ভব হল না। আর কোন উপায় না দেখে একটা গাছে উঠে রক্ষা পেল। মনে ইচ্ছে, গন্ডারটা বিদায় হলে নেমে বাড়ি ফিরবে।
কিন্তু গন্ডার আর যায় না। সে যে ডালে বসে ঠিক তার দিচে দাড়িয়ে আছে গন্ডারের মত। একসময় রাত হল। তবুও সে নড়ে না। সে ডালে বসেই ঝিমুতে শুরু করল। একসময় গুমের ঢুলুনিতে ডাল থেকে হাত ছুটে আছড়ে পড়ল একেবারে গন্ডারের পিঠে। পড়িমড়ি করে আবার উঠল গাছে।
রাতটা পার হল সেভাবেই। সকালেও দেখা গেল গন্ডার সেখানেই দাড়িয়ে। তারপর হঠাত কি ঘটল, গন্ডারটা ঘুরেই দিল এক দৌড়।
সে ফেরার সুযোগ পেল। সেই বন্ধুর সাথে দেখা। তাকে সবকিছু জানিয়ে সে প্রশ্ন করল, আচ্ছা বলত গন্ডারটা ওভাবে দৌড় দিল কেন ?
বন্ধুর উত্তর, গন্ডারের চামড়া তো! তুই যে রাতে পড়েছিলি সেটা বুঝতে সকাল হয়ে গেছে।
রাত থেকে সকাল হতে কয়েক ঘন্টা। গন্ডারের চামড়ায় এটুকু সময় লাগতেই পারে। কিন্তু পরিস্থিতি বুঝতে যদি বছর পার হয়, যদি যুগ পার হয় তাকে কার চামড়ার সাথে তুলনা করা যায় ?
ইচ্ছে করলে একে শেয়ার বাজারের সাথে তুলনা করতে পারেন। দাম কমছে এটা বুঝতে বছর পার হয়ে গেছে (কয়েকদিন বাকি আছে)। এখনো অনেকের আশা, আবারও দাম বেড়ে আগের মত হবে। তখন সুদেআসলে সব ক্ষতি পুশিয়ে নেব। প্রধানমন্ত্রী নিজে হাত লাগিয়েছেন। সমাধান না হয়ে যায় না।
বিষয়টি একটু অন্যভাবে দেখা যাক। আজকাল মামলার সাক্ষী হিসেবে যখন বিদেশী আনা হচ্ছে তখন বিদেশী উদাহরনটাই ভাল মানায়। মাইক্রোসফট-গুগল এরা যদি নিজেদের আধিপত্য ব্যবহার করে ব্যবসা করে তাহলে তাদের নামে মামলা হয়, জরিমানা গুনতে হয়। বাংলাদেশের শেয়ার বাজারে প্রতিযোগিতা হয় যাদের একজন কোনমতে ধারদেনা করে ৫ লক্ষ টাকা জোগাড় করেছেন তারসাথে ৫ হাজার কোটি টাকার মালিকের। ফলটা অনুমেয়। তিনি চাইলেই দাম বাড়ে, চাইলেই দাম কমে। দুদিনে সুচক ৫০০ পয়েন্টের বেশি বাড়িয়ে দেখিয়েছেন তারা কতটা দক্ষ।
অনেকেই ধরে নিয়েছেন তারা দাম বাড়িয়ে যে লাভ করেছেন সেই টাকা ফেরত আনবেন। বাস্তবতা হয়ত অন্যরকম। তারা কখনো দাম বাড়ান না। দাম সবসময়ই কমান। এখন তাদের হাতে টাকা, ক্ষদ্র বিনিয়োগকারীদের হাতে শেয়ার। তারা কমদামেই সব কিনবেন। দাম বাড়তে থাকবে। এখনও যাদের ঘটিবাটি আছে তারা সেগুলি বিক্রি করে আবারও ছুটবেন। তখন তারা টাকা ফেরত নেবেন তাদের হাতে শেয়ার ধরিয়ে দিয়ে। একপর্ব যখন শেষ হয়েছে আরেক পর্ব শুরু করতে সমস্যা কোথায় ?
একে কি গন্ডারের চামড়ার উদাহরন বলতে পারেন? সম্ভবত না।
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশে মানুষ মাসদুয়েক ধরে আন্দোলন করছে। গ্রিস-ইতালীতে মানুষ পথে নেমে পুলিশের সাথে ঠেলাঠেলি করছে। বাংলাদেশের মানুষ বড়জোর দাম বেড়েছে এটুকুই বলে। একে কি গন্ডারের চামড়া বলতে পারেন ?
মোটেই না। গ্রীসে নাকি বেকার ৩০ শতাংশ। সেতুলনায় বাংলাদেশের মানুষ রাজার হালে আছে। ১৫ কোটির দেশে বেকার মাত্র ২৮ লক্ষ। পশ্চিমের যেকোন দেশের থেকে কম। গন্ডারের চামড়া বলার কোন সুযোগ নেই।
পথে হাটার সময় একটা গাড়ি আপনাকে ঠেলে ঘুরিয়ে দিয়ে এগিয়ে গেল। ড্রাইভার টেরও পেল না গাড়ির সাথে কারো ধাক্কা লেগেছে। তারপরই ব্রেকের বিকট শব্দ শুনে ঘুরে তাকালেন। ভাবলেন ড্রাইভারের হয়ত গন্ডারের চামড়া। তাকে ধাক্কা দিয়েছে এটা বুঝতে সময় লেগেছে।
গাড়ির সামনে রাস্তার মাঝখানে একটা বিদেশী কুকুর দাড়িয়ে। একে ধাক্কা দেয়া যায় না। রীতিমত বাঘের বাচ্ছা। ধাক্কা দিলে বাঘ এসে হাজির হবে।
একেও গন্ডারের চামড়া বলার কারন নেই। আসলে গন্ডারের চামড়া শব্দটাও সত্যিকারের গন্ডারের মত বিলুপ্ত হওয়া উচিত।

0 comments:

 

Browse