গরুর কদর

Nov 7, 2011
বিবিসি অনেক সময় অদ্ভুত বিষয় নিয়ে অনুষ্ঠান করে। কাজ না থাকলে যা হয় আর কি। এমনই এক অনুষ্ঠান, গরু না থাকলে পৃথিবীটা কেমন হত।
আপনি খুব ভাল করেই জানেন কি হত। গরু না থাকলে আপনি শিক্ষিত হতেন না। ইংরেজি বলুন আর বাংলা বলুন, রচনা লেখা শুরু করতে হয় গরু দিয়ে। চারখানা পা, দুখানা শিং আর একখানা লেজ আছে এই লিখে। যদিও অনেকের আপত্তি আছে তাতে। কোন প্রানীর লেজ থাকতে পারে অথবা না থাকতে পারে। যদি থাকে তাহলে একটাখানাই হয়, একাধিক লেজের কোন প্রানী নেই। কাজেই গরু লেজবিশিষ্ট প্রানী লেখাই যথেষ্ট হতে পারত।
বিবিসির হিসেব একটু অন্যরকম। তাদের প্রধান বক্তব্য গরু না থাকলে আমেরিকানরা আমেরিকান হত না। মানে বিশ্বের সেরা ধনী দেশ হত না। টাকাপয়সা যা আয় করেছে সেটা ওই গরু পুষেই। অবশ্য তারা অকৃতজ্ঞ না। কাউবয় শব্দটা এখনো সবচেয়ে গৌরবের বিষয়। বরং ঢাকা শহরের কোন কোটিপতিকে যদি রাখাল বলেন তাহলে অপঘাতে মরার সম্ভাবনা আছে। তাদের চৌদ্দশ পুরুষের মধ্যে কেউ ওই জঘন্য কাজ করতেই পারেন না।
আমেরিকানরা গরুকে খাটায় না পর্যন্ত। চাষবাস করে যন্ত্রপাতি দিয়ে। গরুর কদর যদি দেখতে হয় তাহলে তাদের মত উদাহরন নেই। বাংলাদেশে হালটানা বলুন আর মালটানা বলুন, গরুই প্রধান। আর যদি ভারতের কথা বলেন তাহলে বিষয়ের মাত্রা আরেকরকম। সেখানে গরু দেবতার মত। পথে ঘুরে বেড়াচ্ছে, যার তার জিনিষ খাচ্ছে, নষ্ট করছে, ধর্মের ষাড়ের মত ঘুরছে। কেউ বাধা দেয় না। এতে আর যাই হোক পৃথিবীতে বিপুল পরিমান গরু যে রক্ষা পেয়েছে সেটা নিশ্চিত। লোকে বলে বিশ্বে চালের অভাব হবে যদি চিনেরা কাঠি ছেড়ে হাত দিয়ে ভাত খেতে শুরু করে। আর ভারতের সবাই যদি গরু খেতে শুরু করে তাহলে কি হবে তা আর বলা প্রয়োজন নেই। এখনই লোকজন গবেষনা করে বের করেছে আমেরিকানরা যে পরিমান মাংশ খায় সেটা যদি অন্যরা থেকে শুরু করে তাহলে গরু সাপ্লাইয়ের জন্য ৫টা পৃথিবী দরকার হবে। অন্য ভাষায় দেড়শ কোটি মানুষ পৃথিবীর সব গরু খেয়ে ফেলবে। আর সেটা হচ্ছেও। সবাই নিজের দেশে বসে আমেরিকান গরু খায়। অন্তত ঢাকা শহরে মানুষ আমেরিকান গরু খায় এটা নিশ্চিত। দেশি গরু, দেশি মুরগী, দেশি আলূ এসব যখন রান্না হয়ে টেবিলে আসে তখন আমেরিকান। আমেরিকান পোষাক পড়ে দোকানে ঢুকতে হয়, ডলারের হিসেবে টাকা দিতে হয়।
সে যাকগে। গরুর জন্মই মানুষের জন্য। দুধ দেবে, হাল টানবে, মাল টানবে তারপর সবশেষে মাংশ খাওয়াবে। তাতেও শেষ হচ্ছে না, চামড়া দিয়ে জুতা, ব্যাগ থেকে শুরু করে সব ব্যবহার করবে তারপর মনের সুখে গরুর চামড়া দিয়ে বানানো ঢোল বাজাবে। তার ওপর আবার কারনে অকারনে মানুষকেই বলবে গরু। এই নির্লজ্জ, লোভি প্রানীকে গরু বলে গরুর অসন্মান করা কি মেনে নেয়া যায়।
একবার ভেবে দেখুন তো গরু না থাকলে আসলেই এই বিশ্বের কি অবস্থা হত। ধনে-প্রানে মারা যেতে হত। একেবারে অকেজো হয়ে যেত সমাজ। এভাবে কি কেউ বলতে পারেন অমুক ব্যক্তি না জন্মালে মন্ত্রীর পদটা খালি থাকত! তাহলে তাকে গরু বলা কেন ?
বাংলাদেশ প্রোটিন খায় বিশ্বে সবচেয়ে কম। কিন্ত্র একদিনে যা খায় সেটা বিশ্বে অন্য কেউ খায় না। কয়েকদিন ধরে পুরো রাস্তাজুড়ে শুধু গরু আর গরু। লক্ষ লক্ষ। তারপর কয়েকঘন্টার মধ্যে সব শেষ। কয়েকদিনের মধ্যে সব মানুষের পেটে। ধর্মে নাকি বলা হয়েছে যে প্রানী কোরবানী দেয়া হবে শেষ বিচারের দিনে তার পিঠে চড়ে পুল পার হওয়া যাবে। গরু যত শক্তসমর্থ তত আরামে পার হওয়া নিশ্চিত। তাহলে বাবা, পুল তো পার হবে একবারই, জীবনে একটা কোরবানীই যথেষ্ট হতে পারে। প্রতিবছর সেটা দরকার কেন ? নেতারা যেমন হজ করেন প্রতিবছর, সরকারী টাকায়।
বিবিসি একটা তথ্য এড়িয়ে গেছে। তারা বলেনি বছরের এই একটা দিনের কথা। কেউই গরুর কদর দিতে শেখেনি।

0 comments:

 

Browse