চুরি করুন, কাজ করবেন না

Nov 20, 2011
চুরি সম্ভবত মানবসমাজের সবচেয়ে প্রচীন কাজগুলির একটি। মানুষ যখন শিকার করে জীবিকানির্বাহ করত তখন যার সেটা করার সামর্থ্য ছিল না তাকে চুরি করতে হত। অন্যের সম্পদে ভাগ বসাতে হত গোপনে। চুরি বলতে অবশ্য না বলে সরানো বুঝায় না, রীতিমত বুদ্ধি খাটিয়ে নিজের দখলে আনা বুঝায়। চোরে দক্ষতা এতই বেশি যে প্রবাদ তৈরী হয়েছে, পুলিশের চেয়ে চোর বুদ্ধিমান। আর এর ফল হচ্ছে, সমাজের উন্নতির সাথে সাথে পুলিশ যেমন বেড়েছে তারসাথে পাল্লা দিয়ে চোরও বেড়েছে। পরে দলেই পাল্লায় ভারি। আর পুলিশ আর চোরের পার্থক যে কি সেটাও অস্পষ্ট। কে কাকে চালায় সেটাও বোঝা কঠিন। পরিচিত একজনের মন্তব্য, গাড়ি চুরি হওয়ার ভয় নাই। এসআই মোখলেস গাড়ি চোরের রাজা।
কাজেই চুরিকে অবজ্ঞা করার কোন সুযোগ নেই। বরং চুরির ধরন নিয়ে কিছু প্রশ্ন থাকে পারে। আজকাল ঐতিহ্যবাহী সিদকাটা চোর কোথাও নেই। এমনকি ঢাকা শহরের পকেটমারও ছিনতাইকারীতে পরিনত হয়েছে। চোর শব্দটিরও ব্যাপক সংস্কার হয়েছে। যেমন, দুর্নীতি মানে হচ্ছে কৌশলে টাকা হাতানো। একে চুরি বলবেন না।
বাংলায় প্রবাদ, চোরের মত পুলিশ-পুলিশ। যুক্তিবিদ্যার খাতিরে সরাসরি বলতে পারেন পুলিশের মন চোর-চোর। অবশ্য এই যুক্তিতে বেশিদুর যাবেন না। তাহলে আবার বলতে হয় পুলিশ আপনাকে দেখে চোর মনে করে আর আপনি চোর দেখে পুলিশ মনে করেন। এর সমাধান খুব জটিল।
বরং প্রচলিত বিষয় নিয়েই কথা বলা যাক। সবাই আজকাল বলছেন দেশ কিবাবে ধনী দেশে পরিনত হবে সেই কথা। সুত্র আউটসোর্সিং। কদিন পর ই-এশিয়া সন্মেলন হতে যাচ্ছে। আয়োজকরা খুব খুশি। কাকে বিশেষজ্ঞ হিসেবে বক্তব্য দেয়ার জন্য রাখবেন কাকে বাদ দেবেন সেই তালিকা মেলাতে হিমসিম খাচ্ছেন। বিশেষজ্ঞের অভাব যখন নেই। শুরু হয়েছে দশক দুই আগে। ডাটা এন্ট্রি করে বিলিয়ন-ট্রিলিয়ন ডলার আয় করা যাবে একথা দিয়ে। এরপর ওয়াপ কনভার্শন, মেডিক্যাল ডাটা ট্রান্সক্রিপশন, কল সেন্টার এসব পর্ব শেষ হয়েছে। কিছুদিন আগেও কল সেন্টারের লাইসেন্স নেয়ার জন্য লাইন দিয়েছিল কিছু মানুষ। তার বেশির ভাগই চালু হয়নি, কিছু চালু হয়ে বন্ধ হয়েছে আর যেকটি চালু আছে সেগুলিও বন্ধ হবে। কাজেই এখন ওসব পুরনো কথা বলে ভাত পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। বরং আউটসোর্সিং অনেক ভাল বিষয়।
সমস্যা হচ্ছে আউটসোর্সিং নিয়েও কিছু সমস্যা তৈরী হয়েছে। লোকবল নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সংখ্যায় ১৫ কোটি হলেও কাজের সময় ১৫ জনের নাম উল্লেখ করা কঠিন, বিশেষজ্ঞ ছাড়া। ইন্টারনেট-বিদ্যুত এসব নিয়ে মানুষ কথা বলে। কাজেই আগে থেকেই পরবর্তী শব্দ নিয়ে ভাবা ভাল।
সেকারনেই এরসাথে এখনই যোগ করা হয়েছে ফ্রিল্যান্সিং। এটা অনেকটা নিরাপদ। কোন দায়িত্ব নিতে হচ্ছে না, যার যার তার তার। মাঝে যদি কিছুটা ভাগ বসানো যায় মন্দ কি ? কিছুদিনের মধ্যে আউসোর্সিং শব্দটি পুরনো ভার্শন হবে এতে কোন সন্দেহ নেই।
সমস্যা হচ্ছে, এখানেও সমস্যা। বাংলাদেশে একাজ কেউ করেন না এমন না। এমনকি যারা করেন তাদের সংখ্যাও খুব কম না। তারা করেন গোপনে। চোরের মত। যদি প্রশ্ন করেন টাকা কিভাবে হাতে পান সে প্রশ্নের উত্তর পাবেন না। একেকজনের একেক পদ্ধতি। চোর যেমন তার পদ্ধতি অন্যকে জানান না তেমনি এখানেও একজনের পদ্ধতি আরেকজনের জানার সুযোগ নেই।
কারন একটাই, দেশ যারা চালাচ্ছেন, হুকুম দিয়ে কিংবা নীতিবাক্য দিয়ে তারা কেউই সরাসরি ওটা দিতে রাজী নন। ফ্রিল্যান্সিং করে দেশকে ধনী দেশ বানান। তবে পেপল-ক্রেডিট কার্ড, ব্যাংকের সহজ ব্যবহার ওসব কথা বলবেন না। টাকা পেতে চোরের পদ্ধতি অবলম্বন করুন।
একে স্লোগান হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। চুরি করুন, কাজ করবেন না।

0 comments:

 

Browse