বাংলাদেশে জনপ্রিয় ব্যক্তির যে কমতি নেই সেটা টিভি খুললে কিংবা খবরের কাগজে চোখ রাখলেই দেখা যায়। প্রতিদিন, প্রতি মুহুর্তে সাক্ষাতকার। জনপ্রিয় ব্যক্তিদের জনপ্রিয়তা নিয়ে একটাই বক্তব্য, ওটা ভাল জিনিষ না। একজন বললেন গরুর হাটে যেতে খুব ইচ্ছে হয় কিন্তু জনপ্রিয়তার কারনে যেতে পারেন না। কে জানে গরুও যদি চিনে গুতো মারতে আসে। আরেকজন আবার বললেন উল্টোকথা। তিনি নিজে গরুর হাটে গিয়ে গরু কিনেছেন। জনপ্রিয়তার কারনে সুবিধে পেয়েছেন কিনা সেটা অবশ্য বলেননি।
কাজেই জনপ্রিয় ভাল জিনিষ না খারাপ জিনিষ এনিয়ে বিতর্ক করতে পারেন। বিতর্ক অত্যন্ত মুখরোচক বিষয়। খাওয়া-ঘুম বাদ দিয়েও চালিয়ে যাওয়া যায়, এই পক্ষ না ওই পক্ষ, এইদল না ওই দল।
এধরনের ছোটখাট সমস্যা নিয়ে সময় নষ্ট করা হচ্ছে না। জনপ্রিয়তা যখন জীবনের হুমকি হয় তখন তাকে আর সময় নষ্ট করা বলা যায় না বরং সময় থাকতে শতর্ক হওয়াই বুঝায়। কাজেই,
সরকারী দলের একজন নেতা, একজন নির্বাচিত মেয়র খুন হয়েছেন। যথারীতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন যেই হোক না কেন কঠোর ব্যবস্থা ...
সাথেসাথে বিরোধী দলের নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদিও নিহতের পক্ষ থেকে তার নাম কখনো উল্লেখ করা হয়নি। রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। বিচারক জানতে চেয়েছেন, তারনামে অভিযোগ তো নেই। রিমান্ড দেয়া যাবে না।
কিন্তু ততক্ষনে আরো দুই মামলা হাজির।
সে যাকগে। জেলে থাকলে নেতাগিরি পোক্ত হয়। বরং খুনের বিষয় নিয়েই থাকা যাক। নিহতের পরিবার থেকে মামলা করা হয়েছে। যাদের নামে মামলা তারা প্রায় সবাই তাদেরই দলের নেতা। একজন বর্তমান এক মন্ত্রীর ভাই।
কিছু কথা বাদ পড়েছে সেটা আগে বলে নেয়া যাক। ঘটনা ঘটার পর সাধারন মানুষ বিক্ষোভ করেছে, ট্রেনে আগুন দেয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। একটা ষ্টেশন বন্ধ রাখতে হয়েছে অনির্দিস্টকালের জন্য। এবং মামলা হয়েছে ঘটনার দুদিন পর। তারপরও সপ্তাহখানের পেরিয়ে গেছে। আসামীদের একজনকেও পুলিশ খুজে পায়নি।
আজকাল আবার ঘটনার পেছনের ঘটনাও বেরিয়ে আসে। মামলায় যে দুদিন দেরী হয়েছে এই সময়ে নাকি সরকারের পক্ষ থেকে সমঝোতা করার চেষ্টা করা হয়েছে। টাকা চান ? বাড়ি চান ? যা চান পাবেন শুধু আওয়ামী লীগের নেতার নামে মামলা দেবেন না।
এরই মধ্যে এলাকার জনগনের মধ্যে জড়িপ পর্যন্ত চালানো হয়েছে। তাদের বক্তব্য, যাদের নামে মামলা করা হয়েছে তারাই অপরাধী।
বেশ জট পাকিয়ে যাচ্ছে সবকিছু। খুনের মুল কারনটাই চাপা পড়ে যেতে পারে। কারনটা হচ্ছে সেই নিরীহ জনপ্রিয়তা। তিনি নিজ দলেরই প্রতিদ্বন্দি নেতার থেকে জনপ্রিয় ছিলেন।
কাজেই বক্তব্য সংক্ষিপ্ত রাখা যাক। যদি সরকারী দলের কেউ হয়ে থাকেন তাহলেও জনপ্রিয় হবেন না। অন্তত এমন কারো সাথে প্রতিদ্বন্দিতা করবেন না যিনি কেন্দ্রের কাছে বাস করেন। খুন হলেও মামলা দিতে পারবেন না, মামলা দিলেও আসামী গ্রেপ্তার হবে না, আসামী গ্রেপ্তার হলেও তাদের বিপক্ষে রায় যাবে না, তাদের বিপক্ষে রায় গেলেও রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করে দেবেন।
নিরাপদে থাকুন। জনপ্রিয়তা থেকে দুরে থাকুন।
0 comments:
Post a Comment