স্বাধীনতা মানে মাথা নিচু করা

Mar 23, 2011
স্বাধীনতার মাস বলে কথা। পুরো মাস জুড়ে প্রচার করতে হবে স্বাধীনতার জন্য এদেশের মানুষ কি করেছে। স্বাধীনতা দিবস পালন করা বলে কথা। এইদিনে লাল-সবুজ রং ছড়াতে হবে। না ছড়ালে কি দেশপ্রেম প্রকাশ করা হয়। যে স্বাধীনতার জন্য কয়েক লক্ষ মানুষ জীবন দিয়েছেন তাদের শ্রদ্ধা জানানো হয়! স্বাধীন জাতি গর্ব হিসেবে করা যায়!
কাজেই সেটা করতে হবে। সমস্যা হচ্ছে একাজ বিনে পয়সায় করা যায় না। এখানে খরচ, ওখানে খরচ। সরকারের একেবারে কাছের কেউ না হলে এই খাতে সরকারী অর্থও পাওয়া যায় না। আবার নিজের টাকাও খরচ করা মানায় না। নিজের খেয়ে বণের মোষ তাড়ায় কে!
কাজেই, সমাধান হচ্ছে অন্যের সাহায্য নেয়া। স্কুল শিক্ষক নিশ্চয়ই নিজে হাত পাততে পারেন না। সন্মান বলে একটা বিষয় তো রয়েছে। তাদের হয়ে কাজটি করে দিতে পারে স্কুলের ছাত্ররা। এরকাছে ওরকাছে হাত পেতে অর্থসংগ্রহ করতে পারে।
এটা অবশ্য খবর না। যারা খবর প্রচার করেন তারা এসব নিয়ে মাথা ঘামান না। তাদেরও লাভ বিজ্ঞাপনে। দুএকজন ব্যতিক্রমি ব্যক্তি রয়েছেন যারা একেই খবর মনে করে অন্যদের সামনে এনে হাজির করেন। সেকারনেই এটা খবর। একেবারে সামান্য খবর।
এতে অবাক হওয়ারই বা কি আছে ? সংসদে যখন সরকার সুখবর শোনান কোন দেশ থেকে কত সাহায্যের আশ্বাস পাওয়া গেছে তখন বাকিরা ছোটবেলায় ফিরে সংসদেই মনের আনন্দে টেবিল চাপড়াতে শুরু করেন। এমন সুখবর আর হয় না। টাকা হাতে আসছে। যদিও সকলেই জানেন ওই অর্থসাহায্য আসলে নিঃশর্ত সাহায্য না। সাধারন মানুষকেই খেয়ে নাখেয়ে সুদে আসলে সেটা ফেরত দিতে হয়। হাততালি তো সেখানেই দিতে হয়। সরকার যদি বলে আমরা সাহায্য নেব না, প্রয়োজনে না খেয়ে থাকব, সবাইকে কষ্ট করতে হবে তাহলে সেই সরকারের সাথে থাকে কে ? তাকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় পাঠায় কে ? লাভ কি তাতে ?
ওই যে সমাজ সেবকদের দল, তারাই বা কম কিসে ? কোথায় কে না খেয়ে আছে, কে অভাবে পড়ে কি করেছে তার ছবি উঠিয়ে প্রদর্শনী করছে ইউরোপে-আমেরিকায়। কত শিশু অভুক্ত, অবহেলার শিকার, নির্যাতনের শিকার দেখে যদি তাদের দয়া হয়, যদি ডলার-পাউন্ড-ইউরো দান করে তবেই কাজের কাজ। সেই টাকায় হবে সমাজের উন্নতি, দেশের উন্নতি, নিজের উন্নতি। ওরা ওই অবস্থায় থাকে, হাত পেতে থাকে বলেই তো বিদেশীরা টাকা দেয়। আল্লার কাছে কিছু পাওয়ার জন্যও হাত তুলতে হয়। ওদের কাছে তুললে সমস্যা কোথায়। নগদ পাওয়া যায়।
কাজেই টাকা যখন হাতে আসছে তখন হাততালি দেওয়াই উত্তম। কিছুটা নিজের পকেটে তো যাবেই। ম্যানেজমেন্ট খরচ বলে একটা কথা তো আছে। নেতৃত্ব দেয়া বলে কথা।
মুলকথা, স্বাধীনতার মর্যাদা রাখতে হবে। মাইক বাজাতে হবে, লাল-সবুজ রং মাখতে হবে, লাল-সবুজ পোষাক পড়তে হবে, গানবাজনা করতে হবে। তবে না স্বাধীনতা উপভোগ করা।
কজন শিশু হাত পাতল তাতে কি যায় আসে। সরকার যখন মাথা নিচু করে স্বাধীনতার প্রসার ঘটাচ্ছেন তখন একজন শিক্ষক তার ছাত্রকে স্বাধীনতার শিক্ষা দিতেই পারেন। সেই স্বাধীনতা হচ্ছে লাল-সবুজ রং প্রচার। মাথা নিচু করায় কিছু যায় আসে না। এখন থেকেই শিখে নিক, স্বাধীনতা মানে মাথা নিচু করা, অন্যের কাছে হাত পাতা। সেই হাতে যা পাওয়া যায় তা দিয়ে স্বাধীনতার পতাকা উড়ানো।

0 comments:

 

Browse