দিনে দিনে যত বাড়িয়াছে দেনা

Mar 6, 2011
বাংলাদেশের ইতিহাসে বিতর্কের বাইরে থাকার যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি খুব বেশি নেই। সাবাবুদ্দিন আহমেদ একজন ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, একদল যদি পুবদিকে যায় আরেকদল চোখ বন্ধ করে পশ্চিমে রওনা দেয়।
তিনি দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের কথাই বলেছিলেন। এখন অবশ্য দুই দল নেই, দুই জোটে পরিণত হয়েছে। যার অর্থ, যারা এই সরাসরি এই দুই দলের কোনটির সাথেই জড়িত নন তারাও এখন জোটের শরিক। পুরো দেশের মানুষই দুভাগে বিভক্ত, একেবারে মুখোমুখি, কিংবা পিঠাপিঠি। একজন হ্যা বললে অপরজনকে না বলতেই হয়।
এই প্রফেসর ইউনুস এর কথাই ধরুন না কেন। সরকার (মহাজোট) বলছে তার গ্রামীন ব্যাংকের প্রধান পদে থাকার যোগ্যতা নেই। তাকে সরে যেতে হবে। একটু ঘুরিয়ে বললে, যুক্তসংগত কারনে, আইনানুগ পন্থায় তাকে বিদায় করা হল।
অবধারিতভাবেই বিরোধী জোটকে এর প্রতিবাদ জানাতে হয়। তিনি কত ভাল মানুষ ছিলেন, দেশের জন্য কত কি করেছেন থেকে শুরু করে দেশের জন্য নোবেল পুরস্কার এনে দিয়েছেন, এসব করে দেশের ভাবমুর্তি নষ্ট হচ্ছে পর্যন্ত। আর বিরোধী জোট যখন একথা বলে তখন তাদের সমর্থকদের সাতে সাড়া দিতেই হয়।
সাথে তাদের নিজস্ব বিশাল কর্মী বাহিনী। লক্ষ নাকি কোটি নিশ্চিত করা কঠিন, তবে সেটা বিশাল। তাদেরও ভবিষ্যতের কথা ভাবতে হয়। তাদের পেটে লাথি মারার ব্যবস্থা করা হবে আর তারা চুপ করে থাকবেন তাতো হয় না।
সাথে অনুসারীরা। দরীদ্রের থেকেও যারা দরীদ্র তাদের কাছেও টাকা কামানো যায় এই সুত্রে যারা পথে নেমেছেন, নিজেরা শতশত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন, তাদেরকেও আগে থেকেই সাবধান হতে হয়।
আবার বিদেশীরাও রয়েছেন। অনেকে নিজের দেশে এই প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। সরকার যেখানে ব্যাংকের সুদের হার কমাতে কমাতে শুন্যের দিকে নিতে শুরু করেছেন তখন তাদের সুদের হার আধাআধি।
কাজেই প্রতিবাদের দল অনেক বড়। এদের সাথে সাধারন মানুষ যোগ দেবেন এটাই তো স্বাভাবিক। ওই যে ক্রিকেট খেলার সমর্থনের মত, এবার বিশ্বকাপটা দেশেই রেখে দেব। আমরা সাথে আছি। ১০ হাজার টাকার টিকিটেও খেলা দেখতে রাজী। তারপর দল যখন ৫৮ রানে অলআউট তখন ওদের গাড়িতে ঢিল মার। হুজুগ বলে কথা।
অনেকেই বলেন বাঙালী কথা বলতে পছন্দ করে। যত শুনতে চান তত শুনবেন। তবে, প্রয়োজনীয়টা বাদ দিয়ে। গ্রামীন-ব্রাক দেশের উন্নতি করতে করতে একেবারে এভারেষ্টের চুড়ায় নিয়ে যাচ্ছে। যারা ঋন পায় না, বন্ধক রাখার মত কিছু নেই তাদেরও ঋন দিচ্ছে। অমুক গ্রামে তমুকের ভাগ্য ফিরেছে সমুকের কল্যানে। কত উদাহরন চান ?
একটা কথা কেউই বলতে রাজী নন, সরকার যখন শতশত কোটি টাকা ঋন দিচ্ছেন শিল্পের নামে, ১০% এর কম সুদে, সেই সুদ পাচ্ছেন না, মুল টাকাও পাচ্ছেন না, তারা দিব্বি বাড়ি-গাড়ি করে আয়েসে দিন কাটাচ্ছেন, নেতাগিরি করছেন, তখন এই দরীদ্র মানুষকে সামান্য টাকা ঋন দেয়ার দায়িত্ব সরকার নিচ্ছে না কেন ? সরকার তো এজন্যই। না-কি বন্ধক রাখার মত কিছু নেই বলে তাদের পুরো নাগরিক হওয়ার যোগ্যতা নেই। দলের হয়ে কাজ করতে পারেননি বলে পুরো নাগরিক হননি। আধানাগরিক কিংবা সিকি নাগরিক হয়ে রয়েছেন।
কিংবা ওই বেসরকারী ব্যাংক, যারা শেয়ার বাজারে হাজার হাজার কোটি টাকা মুনাফা করেছে, বাড়ি-গাড়ি-এসি-টিভি কেনা থেকে শুরু করে বিয়ে-পিকনিক করা পর্যন্ত সবধরনের ঋন দিতে হা করে বসে রয়েছে। টিভিতে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। তারাই বা একজনকে দরীদ্রকে ব্যবসার জন্য ১০ হাজার টাকা ঋন দিচ্ছে না কেন ?
ইতিহাস বলে, সময় সবকিছু সমান করে দেয়। বহু বছর ধরে বহু ঋন জমেছে মধ্যপ্রাচ্যে, আফ্রিকার দেশগুলিতে। তাদের জনগন বুঝেছে এখন সেই ঋন শোধ করার পালা। পালাবদল শুরু হয়েছে। অনেকে বলেন বাংলাদেশেও যুগ যুগ ধরে বহু ঋন জমেছে। ইতিহাস যদি সত্য হয় তাহলে একসময় এই ঋন শোধ হবে।
কখন এবং কিভাবে সেটাই কথা। বাঙালীর স্বভাব তো এটাই, সামনে যেতে রাজি নই। তুমি এগিয়ে চলো, আমরা আছি তোমার সাথে।

0 comments:

 

Browse