সোনার ডিম

Mar 7, 2011
সোনার ডিম শুনে অবাক হওয়ার কিছু নেই। ইচ্ছে করলেই তৈরী করে নেয়া যায়। অন্তত সোনার নৌকা যখন হর-হামেশা তৈরী হচ্ছে (হয়ত সোনার ধানের শীষও) তখন কেউ একজন ডিম মার্কায় নির্বাচনে দাড়ালে তার সমর্থকেরা তৈরী করতেই পারেন। নির্বাচন কমিশন ইচ্ছে করলেই ব্যবস্থা করতে পারেন।
বলছিলাম সেই গল্পের সোনার ডিমের কথা। যে হাস সোনার ডিম পারে। হাসে মালিক সোনার ডিমের বদৌলতে সুখে থাকে। কিন্তু ওই যে কথা আছে, সুখে থাকতে ভুতে কিলায়, তাকেও ভুতে কিলাল। মাথায় বুদ্ধি চাপল দিনে একটা করে ডিম না নিয়ে একবারে পেট কেটে সব বের করে নেবার। ফল যা হবার তাই, দৈনিক ডিম পাওয়ার পথটিও বন্ধ হল।
আপনি হয়ত জানেন ডিমের আরেক নাম হিরন্যগর্ভ। যার গর্ভে সোনা রয়েছে। ডিমের কুসুমের রং একেবারে ঝকমকে সোনার মতই। কাজেই যে কোন ডিমই আসলে সোনা। এক হাস থেকে দৈনিক একটা, বছরে ৩৬৫ না হলেও অন্তত ২৬৫। ২৬৫ ডিমের দাম হচ্ছে ... একসাথে করলে সোনা কেনা যায়। যদিও মানুষ সোনা খায় না ডিম খায়। তাহলেও ডিমের থেকে সোনার দাম বেশি। অনেক অনেক বেশি।
মুল বিষয়ে ফিরি। বিষয়টি আসলে দৃষ্টিভঙ্গির। কিংবা বলতে পারেন স্বভাবের। একদিনে সব পেতে চাই। হাস দিনে একটা করে ডিম পারবে তার সেটা কুড়াতে হবে এত সময় কোথায়। সব ডিম একবারে পাড়লেই তো হয়!
প্রাকৃতিক নিয়মে জোরাজুরি চলে না। অপ্রাকৃতিক নিয়মে অনায়াসে চালানো যায়। ধরুন ব্যবসা করছেন। এক কেজি চালে লাভ ৫ টাকা। ১০০ কেজিতে ৫০০ টাকা। আপনার দোকানে হয়ত দিনে ১০০ কেজি বিক্রি করা সম্ভব। তাহলে এই নিয়ম কাজে লাগাবেন কিভাবে ?
কেন, লাভ বাড়িয়ে দিন। প্রতি কেজি ১০ টাকা। ওই ১০০ কেজিতেই হাজার টাকা লাভ। কিংবা বাড়িয়ে দিন আরো ৫ টাকা। ওই ১০০ কেজিতেই ১৫০০।
নীতিকথা বলছেন। বহু বছর আগে একজন গুনী ব্যক্তি আধুনিক ব্যবসার মুলকথা প্রকাশ করে গেছেন। যত কমে কিনবেন এবং যত বেশিতে বেচবেন আপনি তত দক্ষ ব্যবসায়ী। মহাত্মা গান্ধীও জন রাস্কিন নামের এই ইংরেজের কথা শুনে মহাত্বা হয়েছিলেন। তার সময়ের সবচেয়ে দামী লেখক তলস্তয় নিজের বইয়ের টাকা পর্যন্ত নেয়া ছেড়েছিলেন।
সে অনেক পুরনো কথা। বর্তমানে আধুনিক ব্যবসায় সুযোগ-সুবিধে অনেক বেশি। সরকার ব্যবসায়ী, ব্যবসায়ী সরকার। সরকার বলে দিচ্ছে, ধান চাষ করতে কৃষকের কেজিপ্রতি খরচ কত ? ২৫ টাকা ? তাহলে আমরা ২৭ টাকায় কিনব। কেজি প্রতি লাভ করবে দুটাকা, মন্দ কি ? বীজ, সার, সেচ, পরিশ্রম, ঝুকি তারপর তাদের পরিবারের খরচ সব চলে যাবে ওই টাকায়। বাংলাদেশের বাজারদর বিশ্বের থেকে অনেক সস্তা। জানেন আমেরিকানরা এককাপ কফি খায় ২ ডলারে। মানে দেড়শ টাকায়। এখানে এককাপের দাম বড়জোর ১০ টাকা। বাংলাদেশের কৃষক কফি খাবেই বা কেন ? তাতে কি কৃষকের মর্যাদা থাকে ? ওদের জন্য পান্তা, হুকো, লুঙ্গি-গামছা মানানসই। আর্টিষ্টিক।
আর ব্যবসায়ীদের কথা বলছেন ? ওরা ৫০ টাকা কেজি বিক্রি করতেই পারে। কেজিপ্রতি ২০ টাকা লাভ না করলে ওদের চলবে কেন ? লাভের জন্যই ওরা ব্যবসা করে। সরকার নিশ্চয়তা দিচ্ছে, ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোনরকম ব্যবস্থা নেয়া হবে না। মাঝেমধ্যে দুচারকথা শোনাতে পারি, ওতে কিছু মনে করবেন না। পেটে খেলে পিঠে সয়, প্রবাদ আছে। আমরা অন্তত পিঠে দিচ্ছি না। বড়জোর কানে দিচ্ছি। ইচ্ছে করলে কান বন্ধ রাখতে পারেন। আমরা আসলে গালাগালিও করি না। খুববেশি দার্শনিক বক্তব্য শোনাই। মনের জন্য উপকারী।
সরকারের নিজেরও লাভের বিষয় আছে।  এটাও ব্যবসা বৈকি। এখানেও তুমুল প্রতিযোগিতা। সময়মত আখের গুছিয়ে নিতে হয়। নিজের ব্যাংক, ব্যবসাপ্রতিস্ঠান, শিল্পকারখানা সবকিছু গোছগাছ করে নিতে হয় ক্ষমতায় থাকতেই। কখন ক্ষমতা অন্যের হাতে যায় তার কি ঠিক আছে ? সুবিধে এটাই, এক ব্যবসায়ী আরেক ব্যবসায়ীর পেটে লাথি মারে না।
মুল কথা একটাই। আমাদের ওই দিনে একডিমে চলবে না। দ্রুত ডিম চাই। কম সময়ে বেশি।
দেশটাকে যদি হাস ভাবেন তাহলেও তাই। যত কম সময়ে যত বেশি ডিম পাওয়া যায় তত লাভ। হাসের কি হল তাতে কি যায় আসে!

0 comments:

 

Browse