এক প্রশ্নই যথেষ্ঠ

Mar 12, 2011
নিজাম ডাকাতের এতটাই কুখ্যাতি ছিল যে মায়েরা নাকি তার সন্তানকে ভয় দেখাতে বলতে, ওই যে নিজাম ডাকাত আসছে। তারা সাথেসাথে চুপ করে যেত। শিশুও বুঝত নিজামের নামের ওপর কথা চলে না।
কিন্তু যার হারানোর কিছু সে ভয় পাবে কেন ? এক সন্যাসী তাকে সামনাসামনি দেখেও ভয় পেল না। বরং উল্টো প্রশ্ন করল, তুমি জানো ডাকাতি করা খারাপ কাজ। তারপরও করছ কেন ?
নিজাম ডাকাত হলেও অন্তত আধুনিক বেয়াদপ ছিল না। সন্মানীকে সন্মান দিতে জানত। তার উত্তর, এটাই আমার বাচার পথ। এই করেই নিজে খাই, পরিবার চালাই।
সন্যাসীর প্রশ্ন, তাদের জিজ্ঞেস করে দেখ তো তারা ডাকাতি পছন্দ করে কি-না।
নিজামের উত্তর, অবশ্যই করে! ডাকাতি না করলে তারা খাবে কি ? যত বেশি ডাকাতি তত বেশি সম্পদ-
সন্যাসীর প্রশ্ন, তারা কি তোমার পাপের ভাগ নেবে ? জেনে এসো।
নিজামের কথাটা খারাপ লাগল না। ডাকাতি যদি খারাপ কাজ হয়, সে যদি অন্যায় করে থাকে তাহলে তার স্ত্রী-সন্তানও সেই অন্যায়ের অংশিদার। বাড়ি ফিরে সে সরাসরি সে প্রশ্নই করল।
তার স্ত্রীর উত্তর, আমি কেন তোমার পাপের ভাগি হব। তোমার দায়িত্ব আমাদের খাওয়ানো পড়ানো, কিভাবে করবে সে দায়িত্ব তোমার।
সন্তানের উত্তর, আমরা কেন পাপী হতে যাব। আমরা কি ডাকাতি করতে বলেছি ? পারলে অন্যকিছু কর।
এই গল্পের কতটা সত্য আর কতটা বানানো নিশ্চিত করা আমার পক্ষে অসম্ভব। এটুকু নিশ্চিত করে জানাতে পারি, নিজাম বাস্তব চরিত্র। আগ্রহি হলে দিল্লীতে গিয়ে নিজামের কবরস্থান দেখে আসতে পারেন। বহু মানুষ যায়। অবশ্য তাকে নিজাম ডাকাত বলে না, বলে নিজামউদ্দিন আউলিয়া। ওই একটিমাত্র প্রশ্ন তাকে ডাকাত থেকে সেরা আউলিয়ায় পরিনত করেছিল।
এক প্রশ্ন আমরা পছন্দ করি না। বহু বিষয়ে বহু প্রশ্ন আমাদের পছন্দ। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে সরকার। সরকার যদি অমুক করে তাহলে ভাল হয়। কাজেই যতরকমভাবে সম্ভব কথাটা সরকারের কানে পৌছানো যায় সেটাই করা প্রয়োজন। টিভি ক্যামেরার সামনে হলে তো কথাই নেই, নইলে সাংবাদিকের মাইক্রোফোন, কিংবা সভা-সমাবেশ, নিতান্তই যদি সে সুযোগ না থাকে তাহলে বন্ধুবান্ধবের মাধ্যমে। কোনটা ভাল, নৌকা নাকি ধানের শীষ, হাসিনা নাকি খালেদা, মুজিব নাকি জিয়া, জয়বাংলা নাকি জিন্দাবাদ।
আজকাল সন্যাসী বলে কিছু নেই। হয়ত তাদের নির্জনে ধ্যান করার যায়গা নেই বলেই। থাকলে হয়ত প্রশ্ন করতেন, তুমি নিজে কি করছ বাপু! লাল-সবুজ রং নিয়ে নেচে-গেয়ে দেশের মর্যাদা বাড়াচ্ছ আর সুযোগ পেলেই চুরি করছ। নিজামের উদাহরন দেখেছ। ডাকাতি করে বহু সম্পদের মালিক হয়ে ছিল কুখ্যাত আর সবকিছু ছেড়ে ভিখিরি হয়ে হল বিখ্যাত। তার কবর দেখতে লক্ষ মানুষ যায়। নিজেকেই প্রশ্ন কর, মর্যাদা কিসে বাড়ে ? নিজের আর দেশের ?
আপনি হয়ত মনের কথাটাই বলে বসলেন, কেন নিজের এবং দেশের উন্নতিই তো করছি। ব্যক্তির উন্নতি মানেই দেশের উন্নতি সেটা বোঝেন না। আমার দামি গাড়ি আছে বলেই তো লোকে বলে ওইদেশে মানুষ ধনী হচ্ছে। আমি টাকা না কামালে, গাড়ি না কিনলে, বাড়ি না বানালে দেশটার কি অবস্থা হত ভেবে দেখুন তো। সবাইকে আপনার মত সন্যাসি হতে হত। গাছতলায় বসে সময় কাটানো আর বড়বড় বুলি আওড়ানো। ওসব করলে কি দেশ চলত!
কিংবা হয়ত একজন মেধাবি ছাত্রকেই কেউ জিজ্ঞেস করে বসল, আরে বাবা পড়াশোনা করছ সেটাই কর, তারসাথে চুড়ি-দুল-মালা লাগিয়ে পাংক হওয়ার কি সম্পর্ক, মেয়েবন্ধুর সাথে পার্কে-রেষ্টুরেন্টে-সাইবার ক্যাফেতে আড্ডা দেয়ার কি সম্পর্ক, এইনেতা-সেই নেতার পিছনে ঘোরার কি সম্পর্ক। এখন নাহয় বাপের টাকায় চলছে, তারপর ছাত্রত্ব যখন ঘুচবে, ভাতা বন্ধ হবে, আরো কয়েক কোটি বেকারের মত পথে পথে ঘুরতে হবে তখনকার কথা কি ভেবে দেখেছ ?
ধুর মুখপোড়া। ততদিনে দেশ ধনী দেশে পরিনত হবে। প্রযুক্তিমন্ত্রী বলেছে একুশ সালের মধ্যে দেশে বিদ্যুত বেড়ে ৫ গুন হবে। তারসাথে মিল রেখে চলতে তো হবে। পোষাক-ভাষা-নাচগান আগে থেকে রপ্ত না করে গেয়ো হয়ে থাকলে চলবে ? জানেন, আগামীতে গ্রাম বলে কিছু থাকবে না। গ্রাম হবে শহর, দেশ হবে বিদেশ। এসব তো তারই প্রস্তুতি।
ওই নিজামের মত এক কথায় সমাধান আমাদের দরকার নেই। বরং সেটা বাদ দিয়ে বাকি যাকিছু আছে সেটা নিয়েই সময় কাটাই না কেন। দিব্বি দিন কেটে যাচ্ছে। সমস্যা কোথায় ! প্রশ্ন কেন ?

0 comments:

 

Browse