রাজনীতি নেই রাজনীতিতে

Mar 14, 2011
সাদা চামড়া কথাটা আপত্তিকর। একসময় সাদাদের কাছে কালো চামড়া যতটা আপত্তিকর ছিল ঠিক ততটাই। কিন্তু দির্ঘ্যদিনের যা অভ্যেস তা-কি বদল হয়। কাজেই,
যদি চামড়া সাদা হয় এবং সেই সাদা চামড়ার মুখ থেকে যদি নিজের পক্ষে মত পাওয়া যায় তাহলে ঢাক পেটাতেই হয়।
একজন মার্কিন সাংবাদিক ঢাকায় এসেছেন রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে। তার মত শোনার বিষয়ে দুপক্ষের আগ্রহ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তিনি কার পক্ষ নেন, কার বিপক্ষে যান। এরচেয়ে বড় সার্টিফিকেট আর কি হতে পারে।
বিষয়, কর্নেল তাহেরের ফাসি। সেজন্য জিয়া কতটা দায়ী সেটা প্রমান করা।
এতে জিয়ার সম্পৃক্ততা ছিল না একথা সম্ভবত জিয়ার নিজের দলও বিশ্বাস করে না। মুখরক্ষার জন্য তারা বিচারের কথা তুলতে পারে কিন্তু অন্যদের মত তারাও জানে ওই ট্রাইবুনাল নামের নাটকে কি হয়। সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা যার তার সিদ্ধান্ত নেয়াই যথেষ্ট। কাজেই, তখনকার ক্ষমতাশীন জিয়ার ভুমিকা সেখানে ছিল এটাই সত্য। কথা হচ্ছে, সেটা প্রমান করা। কারন এই না যে জিয়াকে ফাসিতে ঝুলানো হবে। তিন দশক আগে তিনি মরে সেপথ বন্ধ করেছেন। তার কবরস্থানে তার লাশ আছে এটাও অস্বিকার করে বিপক্ষ দল। তাহলে এটা নতুনভাবে প্রমান করলে কি হবে ? কি ব্যবস্থা নেয়া হবে ? কার বিরুদ্ধে ?
তার উত্তরসুরীর বিপক্ষে হয়ত। তার সন্তানকে হয়ত একারনে ফাসিতে ঝুলানো যায় না, তার দলকে যায়। কাজেই প্রমান করতে হবে। আর প্রমানের জন্য প্রয়োজন সাক্ষী। সাক্ষী হাজির।
মার্কিন ভদ্রলোকের বক্তব্য, মেজর জেনারেল মঞ্জুর নামে জিয়ার ঘনিষ্ঠ একজন বিচার শুরু আগেই জানতেন জিয়া ফাসির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি সেকথা তাকে বলেছেন।
নিখুত সাক্ষ্য। আপনি সেই মঞ্জুরকে ডেকে এনে জিজ্ঞেস করতে পারেন না কারন তিনিও মৃত। কাজেই তিনি যা বলেছেন সেটা ঠিক।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী রাজনীতিতে বহু আবর্জনা রয়েছে। আবর্জনা ঘাটলে দুর্গন্ধ বের হয়, কাজেই তা থেকে দুরে থাকাই মংগল মনে করি। তারপরও একটা কথা না বললে চলে না, ১৫ আগষ্টের পর দেশের অবস্থা ছিল অস্বাভাবিক। ক্ষমতা কখন কার হাতে, কে কি কারনে মারা যাবেন কেউ জানে না। সেকারনে ১৫ আগষ্টের পরও অনেক মৃত্যু ঘটেছে। মুক্তবুদ্ধির বলে পরিচিত মুক্তিযুদ্ধের একজন সেক্টর কমান্ডার কেন ক্ষমতা হাতে নিতে গেলেন, তার বক্তব্য কি ছিল, তিনি কেন কিভাবে মারা গেলেন থেকে শুরু করে জেলখানায় জাতিয় নেতা হত্যা কিংবা কর্নেল তাহেরের ফাসি, সবকিছুই ঘটেছে অস্বাভাবিক সরকারের সময়ে। সে তুলনায় সিরাজ শিকদার হত্যা (সেখানে ট্রাইবুনাল কিংবা কোন কারন দেখানো প্রয়োজন হয়নি), কিংবা জাসদের ভাষায় মুজিববাদীদের হাতে তাদের ২০-২৫ হাজার কর্মী কিংবা ১৫ আগষ্টের হত্যা হয়েছে স্বাভাবিক সরকারের সময়ে। এমনকি জিয়া নিহত হয়েছে যখন তিনি সামরিক খোলস ছেড়ে বেসামরিক নেতা হিসেবে পরিচিতি তৈরী করেছিলেন। যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। আর তাকে খুন করেছে .....
আশ্চর্য বিষয়, যিনি তাহের হত্যার সাক্ষী সেই মঞ্জুর সাহেব। হে-হে-হে। তিনি নিশ্চয়ই চেয়েছেন জিয়াকে হত্যা করে তাহের হত্যার বদলা নেবেন। এরশাদ ক্ষমতায় আসবেন। জিয়ার চেয়ে এরশাদ ভাল। একসময় তিনি মহাজোটে যোগ দেবেন সেকথাও তিনি জানতেন। সাংবাদিক সাহেবকে একথাও জানিয়ে গেছেন নিশ্চয়ই। সরকার বদল হলে হয়ত জানা যাবে।
অতীত রাজনৈতিক আবর্জনা নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। যতদিন অতীত রাজনীতি ভুত হয়ে বর্তমান রাজনীতির কাধে চেপে থাকবে, মৃত নেতারা বর্তমান নেতাদের কাধে চেপে দেশ চালাবেন ততদিন দেশের সত্যিকারের ইতিহাস চর্চ্চার কোন সম্ভাবনাও নেই। কোন ইতিহাসবিদ নিজের জীবনের ঝুকি নিয়ে একাজে নামবেন না। ইতিহাসের নামে যা লেখা হবে তা দলের প্রচারপত্র।
আমার আগ্রহ একটি বিষয়েই, আমাকে ৫০ টাকা কেজি চাল কিনতে হয়, না খেয়ে হলেও ক্রমবর্ধমান বাড়িভাড়ার টাকা গুনতে হয়, বিদ্যুতের অভাবে কাজ বন্ধ করে বসে থাকতে হয় (গরমের কষ্টের কথা বলছি না, ওটা প্রাকৃতিক বিষয়)। নিজের স্বল্পবুদ্ধিতে বুঝি, এগুলির সমাধান দিতেই সরকারের ব্যবস্থা। প্রতিপদে মানুষ এজন্যই কর দেয় সরকারকে। আর এসব নিশ্চিত করার জন্যই রাজনীতি।
রাজনীতি আছে ভালমতই। সেই রাজনীতিতে রাজনীতি নেই।

0 comments:

 

Browse