ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন

Feb 28, 2011
আড়াই হাজার বছর আগের কনফুসিয়াস কি বলে গেছেন তা নিয়ে এখনও মানুষ মাথা ঘামায় কেন ? একজন পশ্চিমা লেখক তার ব্যাখা দিয়েছেন এভাবে, তখনকার সাথে বর্তমানের খুব বেশি তফাত নেই। তখনও যারা ক্ষমতায় ছিল তারা অনবরত মিথ্যে বলত, জনগনকে মিথ্যে আশ্বাস দিত অর্থনীতি, শিক্ষা এসব নিয়ে, বাগাড়ম্বর করত আর নিজেরা সমস্ত সম্পদ ভোগ করত।
বর্তমানে বিষয়গুলি কমেছে না বেড়েছে বলা কঠিন। তবে সমাজ যে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়েছে তাতে সন্দেহ নেই। ব্যক্তি নিজেকেই চেনে। বড়জোর নিজের পরিবারকে। তার অর্থ প্রয়োজন, সম্পদ প্রয়োজন, ক্ষমতা প্রয়োজন। কতটা তার পরিসীমা নেই। যত বেশি তত ভাল। আর যারা ক্ষমতায় থাকেন তারা সেগুলি দিতে বিন্দুমাত্র কার্পন্য করেন না। পরের জমি দখল করবেন, করুন। টেন্ডারের নামে সরকারী টাকার শ্রাদ্ধ করবেন, করুন। ব্যবসার নামে গলা টিপে ধরবেন, ধরুন। খুন করবেন, করুন। পুলিশ পেটাবেন, সাংবাদিক পেটাবেন, পেটান। আমরা বাধা দিচ্ছি না। তবে ভুলে যাবেন না, আপনি আমাদের লোক। আমাদের বিরুদ্ধে যদি কথা বলেন তাহলে ওই যে অপরাধগুলো করেছেন সেজন্য জেলে যেতে হবে। লক্ষ রাখবেন বিরোধী দলের দিকে। আর জনগনের দিকে। দুটো যেন কোনভাবে একসাথে না মেশে।
ইতিহাস বলে এমন অবস্থায় ভুমিকা নেন কিছু শিক্ষিত মানুষ। তারাই বলে দেন, আসলে ক্ষমতায় কোন বংশের কে আছে তাতে কিছু যায় আসে না। তারা কি করছে সেটাই বিষয়। আপনার প্রয়োজন খাবার, থাকার যায়গা, পোষাক, চিকিতসা, কাজ। এগুলি নিশ্চিত করাই সরকারের কাজ। একারনেই মানুষ সরকারকে প্রতিপদে টাকা দেয়। তারা কতবড় জাতিয় পতাকা ওড়াল দেখে পেট ভরে না।
বর্তমানের ক্ষমতাশীনরা এইসব তথাকথিক শিক্ষিতদের থেকে অনেক বুদ্ধিমান, অনেক ধুর্ত। বিদেশ সফরে যান শতসখা সনে। একেবারে নিশ্চিত এই শতজন একেবারে পকেটের মধ্যে। ভুলেও এদের মুখ থেকে টু শব্দ বেরবে না। এরাই শিক্ষিত করবেন অন্যদের। তারাও এই নিয়মেই চলবে।
এর বাইরে যে শিক্ষা সেটা নিয়ন্ত্রন করবে ব্যবসায়ীরা। কোচিং সেন্টার দিয়ে শুরু, ইউনিভার্সিটি দিয়ে শেষ। শিক্ষালাভ কতরবেন কেন, অর্থ উপার্জনের জন্য। কোন বিষয়ে শিক্ষালাভ করবেন, যেখানে বেশি অর্থ উপার্জন করা যায়। বহু বছর আগে বঙ্কিম এভাবেই বলেছিলেন কথাটা। এরা সেটা শিখেছেন, খুব ভালভাবেই কাজে লাগাচ্ছেন। অনেকেই বলে থাকেন বাঙালী বই পড়া ছেড়ে দিয়েছে। মোটেই না। সেই মানিক বন্দোপাধ্যায়ের কথাই ধরুন না কেন। বাজারে খুজলে বই পাওয়া দুস্কর মনে হতে পারে। কিন্তু কিছু মানুষ সেগুলি পড়েন, বাস্তবে প্রয়োগ করেন। শিশুকে কোন পদ্ধতিতে পঙ্গু বানাতে হয়, ভিক্ষুক বানিয়ে অর্থ উপার্জন করতে হয়।
গনতন্ত্র নাকি সরকারী দল আর বিরোধী দলের লড়াই। একে অন্যকে পাহাড়া দিয়ে রাখেন। সে পদ্ধতিও সব সমাজে কাজ করে না। তারাও জানেন আসলে গনতন্ত্র কি জিনিষ। সময় হলে সবাই মিলে ভোট দেবে। যারা কয়েকবছর লুটপাট করেছে তাদের ওপর বিরক্ত হয়ে বিপক্ষ দলকে ভোট দেবে। দিক না কেন ? সতটা সম্ভব চেষ্টা তো করছি। ওই যে, যাদের সবকিছু দিয়ে হাতে রেখেছি, যে পুলিশদের বেতন দেই তারা থেকে শুরু করে দলের নিয়োগ দেয়া বিচারপতি পর্যন্ত। তারপরও যদি কাজ না হয়, ওরা যাক ক্ষমতায়। কি করতে পারে সেতো জানিই। এক চোর আরেক চোরের প্রতিদ্বন্দি হতে পারে তাইবলে চোরের পেটে লাথি মারে না।
কথা একটাই, ওই দলের সাথে জনগন যেন কোনভাবেই এক হতে না পারে। ভয় ওই জনগনকেই। ওই যে তিউনিসিয়া, মিসর, লিবিয়া, বাহরাইন, আরো কি কি দেশ ... কিভাবে দেশের ক্ষতি করছে। ভারতেও নাকি লক্ষ মানুষ পথে নেমেছে দাম বেড়েছে এই কারনে।
আমরা আগে থেকেই সাবধানী। ওরা যেন কোনভাবে একসাথে না হয়। যারা কথা বলতে জানে তারা যেন ভুলেও বিপক্ষে না যায়। ওইসব ইন্টারনেট নিয়ে যারা মাথা ঘামায় তারা ভিডিও-এমপিথ্রি নিয়েই ব্যস্ত থাকুক। ইন্টারনেটে প্রেমালাপ করুক। এসব সামাজিক যোগাযোগে আমাদের কোন আপত্তি নেই। ওয়াইম্যাক্স চালু করেছি, এরপর থ্রিজি করব।
তাইবলে বাজারের খবর নিয়ে আলাপ করবেন না। চাকরী চাই বলবেন না। দেশের কথা যদি বলতে হয় মুক্তিযুদ্ধের কথা বলুন, ভাষা আন্দোলনের কথা বলুন। গর্ব করুন গর্বিত অতীত নিয়ে। বর্তমানের দিকে দৃষ্টি দেবেন না।
সেবিষয়ে বিচ্ছিন্ন থাকুন।
আর কনফুসিয়াসের কথা বলছেন! ওসব ফালতু বিষয় নিয়ে সময় কাটানোর সময় আমাদের নেই।

0 comments:

 

Browse