প্রযুক্তি বনাম প্রো-যুক্তি

Feb 12, 2011
গত কয়েক হাজার বছরের জ্ঞান ব্যবহার করে মানুষ অনেক কিছুই করতে পারে। একসময় অর্থনীতিতে পড়ানো হত জনসংখ্যা বিষয়ক তত্ত্ব। যদি জনসংখ্যা অত্যধিক হয় তাহলে প্রাকৃতিকভাবে সেখানে সমতা ফিরে আসে। দুর্ভিক্ষ-মহামারী এসব বড় কারন। বিপুল সংখ্যক মানুষ মরে সমাজে স্থিতাবস্থা ফেরে। কিন্তু মানুষ সেই তত্ত্বকে ভুল প্রমান করেছে। এখন কলেরা মহামারী হয় না। বলতে গেলে মানুষ প্রকৃতির নিয়মকে পাল্টে ফেলেছে।
এরপরও কোন কোন ক্ষেত্রে মানুষকে অসহায় অবস্থায় পরতে হয়। ঘুর্নিঝড়, বন্যা কিংবা খরা এখনো প্রতিরোধ করা যায়না। তবে মানুষ ব্যবস্থা নিতে পারে। কখন, কোথায়, কি পরিমান প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেবে সেটা আগাম জানা যায়। ব্যবস্থা নেয়া যায়। একটা বাদে।
ভুমিকম্প। মানুষ এখনো আয়ত্ব করেনি কবে কোথায় ভুমিকম্প হবে। বলা হয় প্রাচীন চীনে একধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হত ভুমিকম্প সম্পর্কে জানতে। প্রাচীনকালের সেই যন্ত্রে আগাম তথ্য না পেলেও ভুমিকম্প কোনদিকে কতদুরে হয়েছে সেটা জানা যেত। কারনটাও সংগত। রাজা রাজধানীতে বসেই জানতেন কোনদিকে হাজার মাইল দুরে ভুমিকম্প হয়েছে, তার শক্তি কত। সাথেসাথে ত্রানসামগ্রী পাঠিয়ে দিতেন সেদিকে। খবর পাবার অপেক্ষা কয়েকদিন বসে থাকতেন না।
ভুমিকম্পের হাত থেকে বাচতে আরেক পদ্ধতির ব্যবহার সবথেকে বেশি। ভুমিকম্পে ক্ষতি হবে না এমন ভবন তৈরী। জাপান এদিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে। তাদেরকে সবচেয়ে বেশি ভুমিকম্প সহ্য করতে হয়। কাজেই ইট-সিমেন্টের থেকে কাঠের বাড়ি তাদের বেশি উপযোগি। সেটাই ভাল প্রযুক্তি। এমনকি বর্তমানের উচু ভবন তৈরীর সময়ও এমন প্রযুক্তির ব্যবহার চালু হয়েছে যা ভুমিকম্প সহ্য করতে পারে।
ভুমিকম্প বাংলাদেশেও হয়। উল্লেখ করার মত বড় ধরনের ভুমিকম্প না হলেও মাঝেমধ্যে জানান দেয়, আসছে। সাথেসাথে সাংবাদিকরা ছোটেন যে তার ব্যাখ্যা দিতে পারেন তারকাছে। টিভিতে কিংবা খবরের কাগজে তাদের বক্তব্য শোনার সুযোগ পায় মানুষ। কখনো কখনো বিশেষজ্ঞের পরিমান যদি এতটাই বেশি হয় যে একসাথে সবার কথা শোনা যায় না, তখন তাদের ডাকা হয় গোলটেবিল-লম্বা টেবিলের চারিদিকে। প্রত্যেকে তাদের প্রফেশনাল যুক্তি তুলে ধরেন। সংক্ষেপে একে প্রো-যুক্তি বলতেও ক্ষতি নেই। অন্যান্য দেশের প্রযুক্তির কাছাকাছি।
বাংলাদেশের সবটাই প্রো-যুক্তি একথা হয়ত ঠিক না। এদেশেই একজন নির্মান সামগ্রী হিসেবে বিশেষ ধরনের বোর্ড তৈরী করেছিলেন। একেবারে সাধারন প্রাকৃতিক উপাদান থেকে তৈরী করা যাবে, খরচ কমবে, কাঠের বদলে ব্যবহার করা যাবে। এটা প্রো-যুক্তি না, রীতিমত প্রযুক্তি। কিন্তু বিষয়টা থেমে আছে সেখানেই। বাড়ি তৈরী উপকরন ওই ইট-বালু-সিমেন্ট-রড। কিসের অনুপাত কত হলে লাভ বেশি সেটাই বিবেচ্য। কেউ কেউ বলেই বসেন, জন্মমৃত্যু আল্লার হাতে, ওনিয়ে ভেবে কি হবে। এমনিতেই যখন বাড়ি হেলে পড়ে তখন ভুমিকম্প নিয়ে ভাবার কি আছে।
আসলেই ভাবার কিছু নেই। আল্লাহ এত ক্ষমতা মানুষকে দেননি। অন্তত ধার্মিক মুসলমানকে তো বটে।
যেসব দেশে মানুষ ধার্মিক না তারা বরং প্রযুক্তি নিয়ে মাথা ঘামায়। যেমন ধরুন সেই চীনের কথাই। তারা ১৫ তলা এক হোটেল তৈরী করেছে ৬ দিনে। ৯ মাপের ভুমিকম্পেও নাকি সেটার কিছু হবে না। তৈরীর খরচ কমেছে ২০ ভাগ। আর সেখানে নাকি বিদ্যুত খরচ হবে ৬ ভাগের ১ ভাগ। দেয়াল, জানালা, বিদ্যুত ব্যবহার এগুলি নাকি সেভাবেই হিসেব করা।
কাজেই ধরে নেয়া যায় সেখানে ওই ইট-সিমেন্ট-বালু-রডের ব্যবহার হয়নি। এমনকিছু ব্যবহার করা হয়েছে যা হাল্কা, শক্ত এবং খরচ কম। এজন্য নিশ্চয়ই ইট বানানোর জন্য হাজার হাজার ভাটা প্রয়োজন হবে না। সেটা পোড়ানোর জন্য গাছ কিংবা গ্যাস। তাদের প্রযুক্তিই অমন।
আমাদের ইটভাটাই ভাল। বহু মানুষের কর্মসংস্থান।
ভুমিকম্প সম্পর্কে প্রো-যুক্তিবিদদের যুক্তি শুনতে আমাদের কোনই আপত্তি নেই। নাটকের চেয়ে বেশি আকর্ষনীয়। দিব্যি সময় কাটে।

0 comments:

 

Browse