বাঙ্গালের স্বপ্নভঙ্গ

Feb 8, 2011
দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে মিসরের তাহরির স্কয়ারে মানুষের জমায়েতের। কাউফিউ-প্রতিপক্ষের আক্রমন-বৃষ্টি কোনকিছুই সরাতে পারেনি তাদের। দাবী তাদের একটাই, বর্তমান সরকারকে বিদায় নিতে হবে। সেটা না হওয়া পর্যন্ত সরব না এখান থেকে।
মিসরের মানুষের সামনে অনেক স্বপ্ন সরকার বদল হলেই অবস্থার পরিবর্তন হবে মানুষ চাকরী পাবে জিনিষপত্র কেনার মত টাকা হাতে আসবে জীবনযাত্রা উন্নত হবে এরই মধ্যে তারা দেখিয়েছে লক্ষ মানুষ একসাথে হলে অস্ত্রহাতে মিলিটারী কিছু করতে পারে না। তাহলে পথে নামব না কেন ?
বিশ্বের কোথাও যখন এমন ঘটনা ঘটে তখন বাকিরা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সেদিকে।  শুরু হয়েছিল তিউনিসিয়ায়। এখন হচ্ছে মিসরে। আশেপাশের অনেক দেশে লক্ষন দেখা যাচ্ছে। সকলেরই স্বপ্ন, এটা যদি সত্যিই হয়। যদি সরকারকে সরানো যায় তাহলেই সকলের ভাগ্যের পরিবর্তন। দেশের উন্নতি। সকলের চোখে একই স্বপ্ন।
বাঙালী এই স্বপ্ন দেখে না কারন এই না যে বাংলাদেশে সমস্যা নেই সেই একই সমস্যা, আরো প্রকটভাবে বিদ্যমান বেকারের সংখ্যা কয়েক কোটি, জিনিষের দাম বাড়ে ঘন্টায় ঘন্টায় জনসংখ্যা আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল দেশের দ্বিগুন, আয়তনে ক্ষুদ্র প্রাকৃতিক সম্পদ আর পিরামিড দেখা মানুষ থেকে যে আয় তার কানাকড়িও এদেশে হয়না। সম্পদ সীমিত একমাত্র জনসম্পদে। সেই জনসম্পদের বড় অংশ বেকার। সেইসাথে রীতিমত ঘোষনা দিয়ে দলের লোকজনদের কোটিপতি বানানোর প্রক্রিয়া টেন্ডার-ব্যবসা-চাকরী সবকিছু দলের মানুষের হাতে তুলে দেয়া সরকারের পতন চাই একথা বলার মত কারনের অভাব নেই বিরোধীদলের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে, প্রয়োজনে মিসরের মত আন্দোলন গড়ে তোলা হবে সরকারের পতন ঘটানো হবে
সমস্যা একটুখানি মিসরের মানুষ স্বপ্ন দেখছে কারন সেটা তাদের কাছে নতুন বাঙালী এই স্বপ্ন বহুবার দেখেছে বহুবার সরকার বদল হয়েছে এইদল-ওইদল, এই পদ্ধতি-সেই পদ্ধতি সবই দেখা হয়ে গেছে ফলাফল, যেই লাউ সেই কদু
বাংলাদেশের ইতিহাসে সবথেকে বেশি সময় রাজত্ব করেছেন এরশাদ সাহেব। তাকে সামরিক শাসক, স্বৈরাচার যাই বলুন না কেন, অন্য কেউ তারমত টানা দীর্ঘ্য সময় ক্ষমতায় থাকার সুযোগ পায়নি। বাধ্য হয়ে ক্ষমতা ছাড়লেও এখনও তিনি অনেকের প্রিয় নেতা।
অন্যদের মধ্যে দুই প্রধান দলের দুই প্রধান নিহত হয়েছেন। আর এরশাদ সাহেবকে জোর করে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে যে গনতন্ত্র প্রতিস্ঠা করা হয়েছে সেখানে প্রধান দুই দল কিংবা দুই জোট মানুষকে এতটা সন্তুষ্ট করতে পারেনি যাথেকে তারা পরপর দুবার ক্ষমতায় যেতে পারে। প্রতিবার নির্বাচনে সরকার বদল হয়েছে। মানুষের যাকিছু করার মানুষ করেছে। সরকার বদল হলেই যদি ভাগ্যের পরিবর্তন হয় তাহলে সেটা হওয়া উচিত ছিল এরই মধ্যে।
সেটা হয়নি। সরকার বদলের সাথে সাথে সরকার এবং বিরোধীদলের ভাষা এবং আচরন হাতবদল হয়েছে। একদল দেশে উন্নয়নের বন্যা বইয়ে দিচ্ছেন, আরেকদল দেশের ভাবমুর্তি নষ্ট করার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মানুষ জেনে গেছে তাদের চাকরী পাওয়ার আশা নেই, ব্যবসা করার সুযোগ নেই, নিজে উতপাদনশীল কিছু করবেন সেটা হবে না। সব যায়গায় দল, চাদাবাজি, দখলদারীত্ব। একটামাত্র যায়গা রয়েছে সামনে, শেয়ার বাজার। সেখানেও দাম একদিন বাড়ে তো দুদিন কমে। সরকারের ব্যর্থতা নাকি বিরোধীদলের কারসাজি কে জানে ?
এই জনগনকে যদি বলা হয় অবস্থা পরিবর্তনের কারনে সরকারের পতন ঘটাতে হবে, জীবনের ঝুকি নিয়ে পথে নামতে হবে, তারা প্রশ্ন করে, সে তো কতবারই দেখলাম। কত সরকারই তো এলো- গেল। শেষ ফলটা কি ?
আর একথা বলছে কে ? বক্তাকে তো ভালভাবেই চিনি
বাঙালীর স্বপ্ন ভেঙে গেছে

0 comments:

 

Browse