বই পড়লে বুদ্ধি কমে

Feb 16, 2011
সাক্ষাতকারের সুবিধে অনেক। এখানে নাট্যকারের লেখা সংলাপ মুখস্ত করতে হয় না, পরিচালকের কথামত অভিনয় করতে হয় না। একেবারে নিজের পছন্দমত অভিনয় করা যায়, নিজের পছন্দমত শব্দ ব্যবহার করা যায়। কাজেই এই পদ্ধতি জনপ্রিয় হবে এতে অবাক হবার কি আছে!
টিভিতে পুরো ১ ঘন্টার অনুষ্ঠানই হোক আর খবরের এখানে সেখানেই হোক, কিংবা অমুক ব্যাংকের বিজ্ঞাপন বিরতিতেই হোক, সাক্ষাতকার চলতেই পারে। নানা বিষয়ে, নানা কারনে।
এটা ভাষার মাস। কাজেই আলোচনা সেখানেই সিমাবদ্ধ থাকুক।
বছরের অন্তত একমাস ভাষা চর্চ্চা হতেই পারে।
পুরো মাসজুড়ে বইমেলা। বিশ্বে আর কোথাও একমাস বইমেলা চলে কিনা জানা নেই। আমাদের সেটাই প্রয়োজন। অন্তত বাকি মাসগুলিতে যখন ভাষা কিংবা বই প্রয়োজন নেই তখন একমাস চললে আপত্তি কেন ? যতদিন পর্যন্ত মানুষ ক্লান্ত হয়ে ঝিমুতে শুরু না করে, যতদিনে না বিরক্ত হয়ে বলে ওঠে, ধুত্তোর ...
বলছিলাম সাক্ষাতকারের কথা। লেখক, পাঠক, প্রকাশক, দোকানদার, ভবঘুরে সকলের। সকলেই পঞ্চমুখ ভাষা নিয়ে কথা বলা বিষয়ে, তা দোআশলা ভাষায়ই হোক আর অন্যকিছুই হোক। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হয়েছে আমাদের কারনে, একি যেমন তেমন কথা। নিতান্ত দেশদ্রোহি হলে তবেই প্রশ্ন করতে পারেন কয়েক লক্ষ মানুষের ভাষায় উইন্ডোজ তৈরী হলেও বিশ্বের ৭ নম্বরে থেকেও বাংলায় হয়নি কেন। বাংলায় লেখার জন্য আলাদা টাকা খরচ করতে হয় কেন ? কিংবা শত্রুতা করে বলতে পারেন কিবোর্ডে কোন কি চাপলে কোন অক্ষর তৈরী হবে সেটা একজনের পৈত্রিক সম্পত্তি হল কিভাবে ?
ওসব ফালতু কথা।
কথা হচ্ছে, ভাষা নিয়ে, বই নিয়ে এবং বইমেলা নিয়ে। আর বই মানেই লেখক।
অতীতের যেসব গুনিজন লেখক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন তাদের কাছ থেকে শোনা, তারা স্বপ্ন দেখতেন লেখক হবেন। লিখতেন আর প্রকাশকের পেছনে ঘুরতেন। কোন একসময় লেখা ছাপা হয়ে পাঠকের হাতে পৌছলেই হয়ে গেল, সাথেসাথে খোজ পড়ে গেল লেখকের। রাতারাতি খ্যাতি।
আজকাল কেউ ওকথা ভাবেন না। লেখক ভালভাবেই জানেন লেখা ছাপতে চাইলে খরচটা নিজেকেই দিতে হবে। পত্রিকার কথা ভুলে যান। সাহিত্য পত্রিকা বলে কিছু নেই। সাহিত্যপাতা নামে যা আছে সেখানে যায়গা পাবেন না। আপনে কেডা ? লেখক ? পথ ছাড়েন। বিজ্ঞাপনদাতা হইলে কথা কন।
কাজেই নিজের টাকায় রংচঙে বই ছাপা। এবং মুরগা লেখক হিসেবে পরিচিতি। বইয়ের শেষ ঠিকানা ফুটপাত, হরেদরে একদামে বিক্রি।
কাজেই, লেখক যদি কমতে থাকে, পাঠক যদি কমতে থাকে, এবং যদি সেটা স্বীকার করা হয়, তাহলে একটামাত্র পরিনতিই সম্ভব।
আগেভাগে একটা কথা বলে নেয়া ভাল। পাঠক কমছে, বইয়ের বিক্রি কমছে, বইমেলায় ভীড় কমছে একথা না বলাই ভাল। দেশের ভাবমুর্তি নষ্ট হতে পারে।
এবারে সত্য বলা যাক। এবারের বইমেলায় বইয়ের সংখ্যা কমেছে। আজকাল তথ্য জানা খুব সহজ। সেই তথ্য বলছে আগের বছর যে পরিমান বই ছাপা হয়েছে এবার তারথেকে অনেক কম। মুরগা লেখকগন আগ্রহ হারিয়েছেন। খ্যাতিমানরা তাদের সব রস বেচে ফেলেছেন। পানি মিশিয়ে যতদিন চালানো যায় সে সময়টাও পার হয়ে গেছে। কাজেই, বই কম। বিক্রি কম।
এটা যদি বর্তমান বছরের ঘটনা হয় তাহলে নিশ্চিত থাকুন, আগামী বছর বইয়ের সংখ্যা আরো কমবে।  
সময় থাকতে একটা বুদ্ধি দিয়ে রাখি। ভাষার মাসে যদি একমাস মেলা চালাতে হয় তাহলে পরিবর্তন প্রয়োজন। পদ্ধতিও খুব সহজ। বইয়ের দোকানের ভীড় কোথায় গেছে খোজ নেয়া।
সিডি-ডিভিডির দোকানে দেখুন সেখানে ভীড়ের কমতি নেই। আর কে-না জানে কম্পিউটারে গেম খেললে বুদ্ধি বাড়ে। বিজ্ঞানীরা গবেষনা করে বলেছেন। ডিজিটাল দেশে ডিজিটাল সরকারও সেকাজ সহজ করে দিয়েছেন। ৪০ টাকায় এক ডিভিডি। ২৫ টাকায় সিডি। সন্তানকে গেম কিনে দেবেন আর তাদের বুদ্ধি তরতর করে বাড়তে থাকবে। খামোখা বইয়ের পেছনে টাকা খরচ করে কে ?
কাজেই, আয়োজকগন, এখন থেকেই প্রস্তুতি নিন। মেলায় ভীড় বাড়াতে চাইলে বইয়ের দোকান কমান, সিডি-ডিভিডির যায়গা বাড়ান। মেলা উপলক্ষে ২০ টাকায় ডিভিডি এবং ১৫ টাকায় সিডি বিক্রির ব্যবস্থা করুন (সেটা সম্ভব)। ওসব সাক্ষাতকারে কান দেবেন না।
আর নতুন যুগের নতুন স্লোগান দিন, গেম খেললে বুদ্ধি বাড়ে, বই পড়লে বুদ্ধি কমে।

0 comments:

 

Browse