শপথ করিতেছি যে

Feb 20, 2010
শপথের বহর খুব ভালভাবেই দেখেছেন সবাই। সারা দেশে। বড় থেকে ছোট, ছোট থেকে বড়। এইমাথা থেকে ওইমাথা। শপথ করছি নিজে বদলাব। দেশ বদলে দেব। বিশ্ব বদলে দেব। চুরি করব না, ছিনতাই করব না, ঘুষ নেব না, টেন্ডারবাজি করব না, দুর্নীতি করব না। ছবিটা ঠিকমত তুলেছেন তো!
তারপর কি কারনে সেই ঝড় থেমে গেল। নিশ্চয়ই সবাই বদলে গেছে। অন্যকে বদলে দিয়েছে। আর যদি সেটা না হয়, তাহলে শপথের সেই চিরাচরিত নিয়মই বলবত। চলে আসছে কয়েক হাজার বছর ধরে। সেই কোন গ্রীক ডাক্তার নাকি নিয়ম করে গেছেন, ডাক্তার হতে হলে আগে শপথ করতে হবে। তার নামেই শপথ। চিকিসা করাই ডাক্তারের মুল কর্ম। মুল ধর্ম। মানুষে-মানুষে ভেদাভেদ ছাড়াই চিকিসা করে যাব।
তারপর সেই শপথপর্ব শেষ হলে যেই লাউ সেই কদু। রোগি অপারেশন টেবিলে, টাকা কই ? যদি মইরা যায় তাইলে ট্যাকা দিব ক্যাডা ? আগে ট্যাকা ছাড়েন তারপর ছুরি চালাইতাছি।
শুধু ডাক্তার কেন, শপথের নিয়ম প্রচলিত সব যায়গায়। রীতিমত অনুষ্ঠান করে, টিভি ক্যামেরা সামনে এনে শপথ। চেয়ারম্যান হবেন, সংসদ সদস্য হবেন, মন্ত্রী হবে, প্রধানমন্ত্রী হবে, বিচারপতি হবেন, কোথাও মাফ নেই। শপথের দরজা পেরতে হবে। যা বলা হয় সুর মিলিয়ে সেটা বলে যেতে হবে। পড়ে দেখা প্রয়োজন নেই, সেকাজটা আরেকজন করে দেবে। তারপর হাসিমুখে ভুলে যাবেন তোতাপাখির মত কি বলেছেন (শপথের কাগজটা নিশ্চয়ই বাধাই করে দেয়া হয় না ড্রইংরুমে টাঙানোর জন্য)।
তা এতে অবাক হওয়ারই বা কি আছে! এতো শুধু এখানকার কথা না, সারা বিশ্বের কথা। ওইযে দুনিয়ার একেবারে উল্টোদিকে যে আমেরিকা সেখানেও একই নিয়ম। বারাক ওবামা শপথ করে বললেন তিনি সংবিধান মেনে চলবেন। সংবিধান রক্ষার মহান দায়িত্ব পালন করবেন। তারপরই প্রেসিডেন্ট অবস্থায় নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান হয়ে গেলেন। সেটা নাকি আমেরিকার সংবিধান ভংগ করা। সেখানে স্পষ্ট করে লেখা রয়েছে প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় নাকি ওসব হওয়া যায় না। একজন আবার শপথ আর সেই মিটিং, দুই ভিডিও একসাথে করে টিভিতে দেখিয়ে দিল। তার দোষ না হলে আমাদের দোষ কোথায় ?
রাজনৈতিক দলের সদস্য হওয়ার সময় নিশ্চয়ই শপথ করতে হয়। অন্তত মনে মনে হলেও। নিজের দলের স্বার্থ রক্ষা করব। দেশের স্বার্থ রক্ষা করব। কিন্তু সবসময় কি ওসব মানা যায়! আমাকে বাদ দিয়ে আরেকজনকে প্রমোশন দেবে, নমিনেশন পাবে আরেকজন তখন কি ওসব মানলে চলে। নিজে ঠিক থাকলে তবেই না দলের ভাল করা যায়। ওই সামান্য শপথ নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় কোথায়?
শপথের ব্যতিক্রম একটামাত্র যায়গাতেই। যেখানে কেউ শপথ ভাঙে না। ভাঙলে সরাসরি বিপদ। নিজে তখনকার মত কোনমতে কষ্ট থেকে রেহাই পাওয়া যায় বটে কিন্তু বাকী জীবনে শান্তির পথ বন্ধ। আর যদি বাংলার বাঘের কবলে পড়তে হয় তাহলে তো কথাই নেই।
কাজেই, শপথ করিতেছি যে, যদি ধরা পড়ি, তাহলে কেউ কারো কথা বলব না। চাকুরি ছাড়লে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে হবে, এলাকা না ছাড়লে পুলিশে ধরিয়ে দেয়া হবে।
আগে বলা হয়নি, এই শপথ নেয়া হয় মাজারে। গাড়ি চুরির দলে যোগ দেয়ার সময়।

0 comments:

 

Browse