সত্যবাবু মারা গেছেন

Feb 3, 2010
সত্য নাকি একটাই হয়!
একদম বাজে কথা। সেই অন্ধের গল্প মনে আছে নিশ্চয়ই। চোখে দেখতে পায় না বলে কয়েকজন মিলে হাতড়ে দেখার চেষ্টা করল হাতি কেমন। তারপর তাদের বক্তব্য, হাতি দেয়ালের মত, হাতি কলাগাছের মত, হাতি কুলার মত।
আপনি বলছেন তারা মিথ্যেবাদি ? মোটেই না। সকলেই সত্য বলেছেন।
কখনো কখনো বিষয়টি হাতি দেখার এত সরল থাকে না। রীতিমত খটকা লাগিয়ে দেয়। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন তিনি ক্রশফায়ার পছন্দ করেন না, স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন ক্রশফায়ার বলে কিছু নেই। আর র‌্যাব প্রধান বলছেন এটা প্রয়োজনে করা হয়।
সবার কথাই ঠিক। প্রধানমন্ত্রী সত্যিসত্যিই পছন্দ করেন না। কাজেই তার কথা ঠিক। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যেমনটা বলেছেন, ক্রশফায়ার বলে কিছু নেই এটাও ঠিক। বিশ্বে আজ পর্যন্ত এমন অস্ত্র তৈরী হয়নি যেটা গিয়ে গুলি করলে ক্রশফায়ার হয়। তাকে বড়জোর ফায়ার বলা যেতে পারে। আর র‌্যবের প্রধান বলেছেন বাস্তবতার কথা। কাকে মিথ্যেবাদী বলবেন ?
কিংবা ধরুন দেশের মানুষের কথাই। রীতিমত গবেষনা করে, তথ্য উপস্থাপন করে বলা হল ৪ বছরে দেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত হবে। আর জাতিসংঘ হিসেব করে বলছে দারিদ্র কমছে না বরং বাড়ছে। দক্ষিন এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে বাংলাদেশ একমাত্র দেশ যেখানে এই ঘটনা ঘটছে। তাদের হিসেবে দারিদ্রসীমার নিচে বাস করছে ৫০ ভাগের বেশি মানুষ।
এখানেও, বাহুল্য হলেও বলতে হচ্ছে, দুজনার কথাই ঠিক। শতকরা হিসেব যখন করা হয় তখন সাড়ে ৫০ ভাগ বলতে ৮ কোটির বেশি মানুষ বুঝায়। তারা দরীদ্র হয়েছে, হচ্ছে, আরো হবে। চালের দাম, যাতায়াত খরচ, বাড়িভাড়া বাড়ছে বানের পানির মত। সরকার দশটাকা কেজি চাল দেয়ার কথা বলেছিল, মানুষ ৪০ টাকাতেও পাচ্ছে না। সেখানে আবার নতুন প্রতিভার সন্ধান পাওয়া গেছে। ইউরিয়া দিয়ে চাল সাদা করা। যাই হোক, মানুষের আয় বেড়েছে যত টাকা ব্যয় বেড়েছে তারচেয়ে অনেক বেশি টাকা। কাজেই জাতিসংঘের রিপোর্ট ঠিক।
আবার চারিদিকে যদি একবারমাত্র দৃষ্টি বুলান, মধ্যম কেন রীতিমত ধনী দেশে পরিনত হচ্ছে, হয়ে গেছে এটাও ঠিক। কোটি টাকার গাড়ি, কোটি টাকার বাড়ি চারিদিকে। বাড়ি ভাড়া নেবেন, লক্ষ টাকা এডভান্স। দোকান ভাড়া নেবেন, দশ লক্ষ।
একবার পোষাকের দিকে দৃষ্টি দিন। ইউরোপ-আমেরিকা থেকে বিন্দুমাত্র পিছিয়ে নেই। খাবারেই বা পিছিয়ে থাকবে কেন ?
কাজেই কেউই ভুল বলেননি। মিথ্যে বলেননি। মিথ্যে বলা মহাপাপ। এদেশে কোন মহাপাপী নেই।
মন্ত্রী বলেছেন ৪ বছরে দেশের নিরক্ষরতা দুর করা হবে। কাজ বহুদুর এগিয়ে গেছে। আর রিপোর্ট বলছে দেশে নিরক্ষরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিবিসি রীতিমত উদাহরন দেখাচ্ছে পঞ্চম শ্রেনী পাশ করা ছাত্র বাংলা বর্নমালা চেনে না। এমন ঘটনা নাকি ভুড়ি ভুড়ি।
এখানেও দুপক্ষই ঠিক। তারা পঞ্চম শ্রেনী পাশ করেছে। ৫ বছর ধরে স্কুলের খাতায় নাম রেখেছে, সেই নাম দেখে সরকারী টাকা গেছে। সেই টাকা মহত শিক্ষক থেকে শুরু করে ভাতা হিসেবে ছাত্রও পেয়েছে। কাজেই তারা নিরক্ষর নেই। রীতিমত শিক্ষিত। যেটুকু শিক্ষিত অবশিষ্ট আছে তা দুর হবে কদিনেই। অন্যদিকে,
সেই স্বাক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন  ব্যক্তি যখন কাজে গেছেন, কাগজে লেখা ঠিকানা কোথায় দিতে হবে বোঝেন না তখন তখন তাকে নিরক্ষর বললে নিশ্চয়ই মিথ্যে হয় না।
আসলে সত্য বহুরুপী। কোনদিক থেকে দেখবেন সেটাই বিষয়। নিতান্তই যদি এই গোলমেলে হিসেবে না যেতে চান তাহলে ধরে নিন, সত্যবাবু মারা গেছেন।

0 comments:

 

Browse