আধ্যাত্বিকতাই সম্বল

Oct 14, 2011
সমাজের যেখানে শুরু প্রতিবাদের শুরুও সম্ভবত সেখানেই। যখন পশু শিকার মানুষের একমাত্র জীবিকা ছিল তখনও নেতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হত। কেউ বলতেন আমারই নেতা হওয়া উচিত। তখন সমাধান ছিল তুলনামুলক সহজ। শক্তিপরীক্ষায় যে অন্যকে পরাজিত করত সেই নেতা হওয়ার যোগ্যতা লাভ করত। ক্রমে সেখানে পরীবর্তন হয়েছে। একসময় দেখা গেছে নেতার যোগ্যতা শুধুমাত্র শক্তিতে  পরিমাপ করে ভাল ফল পাওয়া যায় না। নেতৃত্বের জন্য মেধা, বুদ্ধি, অভিজ্ঞতা এসবও প্রয়োজন হয়। তখন দৃষ্টি দেয়া হয়েছে বয়স্কদের দিকে। কোন কোন সমাজে সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তিকে নেতা মানা হত অভিজ্ঞতার হিসেবে।
কিন্তু প্রতিবাদ তাতে বন্ধ হয়নি। যত গল্প-উপন্যাস-সিনেমা-নাটক সব ওই নেতৃত্ব পাবার লড়াই নিয়েই। কিছু মানুষ মনে করে নেতা হওয়ার যোগ্যতা তারই। অন্যকথায় যার হাতে নেতৃত্ব তিনি নেতা হওয়ার যোগ্য নন। কাজেই প্রতিবাদ।
এই প্রতিবাদের ধরনও বিচিত্র। যুগে যুগে, দেশে দেশে নানা ধরনের যে উদাহরন তৈরী হয়েছে সেগুলি তো বটেই, তারসাথে নিত্যনতুন পদ্ধতিও যোগ হচ্ছে।
প্রতিবাদের প্রসংগে গান্ধীর নাম উল্লেখ না করে পারা যায় না। তার এক পদ্ধতি ছিল না খেয়ে থাকা। তাতে সফলও হয়েছেন অনেক সময়। ইংরেজদের কাছে দাবী আদায় করে নিয়েছেন। আবার ব্যর্থতাও আছে। দেশভাগের প্রতিবাদেও তিনি অনশন করেছিলেন। সেটা কাজে আসেনি। বর্তমান যুগেও না খেয়ে প্রতিবাদ জানানোর প্রক্রিয়া বাতিল হয়নি। কদিন আগে ভারতে একজন না খেয়ে দাবী আদায় করেছেন। বাংলাদেশে একজন জনপ্রিয় ব্যক্তি ঘোষনা করলেন বঙ্গবন্ধুর খুনীদের দেশে ফিরিয়ে মৃত্যুদন্ড দেয়ার দাবীতে অনশন করবেন। যদিও আমার জানা নেই বিষয়টা কতটা গুরুত্বপুর্ন। যার মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেয়া হয়ে গেছে তার শাস্তিও হয়ে গেছে। মৃত্যুর আগ মুহুর্ত পর্যন্ত তিনি জানবেন তারজন্য ফাসির দড়ি অপেক্ষা করছে। এখনো সে বেচে আছে কেন এই প্রশ্ন সভ্যতার পরিচয় হতে পারে না। অনেক দেশেই মৃত্যুদন্ড বিষয়টি নেই।
প্রতিবাদের একটি বড় কারন প্রতিক্রিয়া। প্রতিক্রিয়া আশা করেই মানুষ প্রতিবাদ করে। যেমন মিসরের তাহরির স্কয়ারে কিংবা লিবিয়ায় কিংবা বাহরাইনে-সিরিয়ায়। সারা বিশ্বে প্রতিক্রিয়া হয়। বিবিসি-সিএনএন এর মত সংবাদমাধ্যম সরাসরি টিভিতে দেখায়। যুদ্ধের গোলাগুলির মধ্যেও তারা যায়। সারা বিশ্বকে দেখায় যুদ্ধ কত ভয়ংকর। তাদের মত গনতন্ত্রপ্রেমী নিরপেক্ষ সংবাদমাধ্যম হয় না। বাকি বিশ্বের সংবাদমাধ্যমগুলি কিভাবে নিজেদের স্বার্থে কাজ করে সেটা তারাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।
সেখানে একটু খটকা আছে। খোদ আমেরিকায় যেখানে কয়েক সপ্তাহ ধরে সাধারন মানুষ প্রতিবাদ করছে সেই খবর তাদের কাছে অনুপস্থিত। কেউ কেউ বলার চেষ্টা করেছেন ওদের নির্দিষ্ট দাবী নেই, নির্দিষ্ট নেতা নেই। এসব প্রতিবাদের কোন অর্থ হয় না। আসলে ওরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। তাদের মধ্যে গন্ডগোল লাগানোর চেষ্টাও হয়েছে। শতশত গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা গন্ডগোলে জড়ায়নি বরং ক্রমেই প্রতিবাদকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এরপরও, নির্লজ্জ সত্য এটাই, যে কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সেই কর্পোরেশনের মালিকানাধীন সংবাদ মাধ্যমে এখনও প্রতিমুহুর্তে লিবিয়া-সিরিয়া-ইরাক-আফগানিস্তানের খবরই প্রধান খবর। বিশ্বসেরা ইনভেষ্টিগেটিভ জার্নালিষ্টগন মাথা নিচু করে বিশ্রাম নিচ্ছেন। পরিস্থিতি কোনদিকে যাবে লক্ষ করছেন। দিক চিনলে নিষ্চয়ই ঝাপিয়ে পড়বেন সেদিকে।
সেখানে সংবাদ নিয়ন্ত্রন কিংবা সাংবাদিক নির্যাতনের বিষয় কতটা ঘটে জানা কঠিন। এবিষয়ে যেভাবে অন্যদেশের কথা প্রচার করা হয় তাতে ধারনা করা যায় সেটা ঘটে না। বাংলাদেশের প্রেক্ষিত ভিন্ন। কিছুদিন আগে রাস্তাঘাটের অবস্থা দেখে কিছু মহত ব্যক্তি প্রতিবাদ করতে পথে নেমেছিলেন। শহীদ মিনারে ঈদ করার মত মহত ঘোষনাও দেয়া হয়েছিল। সমস্যা হচ্ছে, বাংলাদেশের লোকজন দুরে দাড়িয়ে তামাসা দেখতেই বেশি পছন্দ করে। সরকার-পুলিশ-র‌্যাব-গোয়েন্দা আর সরকার সমর্থকদের মুখোমুখি দাড়িয়ে প্রতিবাদ! দরকার কি বাবা।
কাজেই সাধারন মানুষ যোগ দিল না, যারা উদ্দোক্তা ছিলেন তারাও নিরাপদ দুরত্বে সরে গেলেন। দুরথেকে দুএকটা কথা বলে যেটুকু মহত্ব দেখানো যায় সেটাই ভাল। যদিও বাস্তবতা হচ্ছে রাস্তা ঠিক তো হয়নি বরং সেই বিশেষ মন্ত্রীর সরাসরি দুর্নীতির কারনে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
বাংলাদেশের মত দেশে একটা সেতু না হলে কি যায় আসে ? এত সামান্য কারনে কি নিজের বিপদ ডেকে আনা যায় ? এরচেয়ে বরং খুনীর ফাসির দাবীতে আন্দোলন করা ভাল। খ্যাতি-পরিচিতি এমনকি পুরস্কার পাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে।
আমেরিকার প্রতিবাদকারীরা সরকারের বিপক্ষে যায়নি। সরকার সরাসরি দুর্নীতির সাথে জড়িত এমন প্রমান তাদের হাতে নেই। বরং সিদ্ধান্তের দায়িত্ব তারা ছেড়ে দিয়ে তাদের হাতেই। দেশে কিছু মানুষ সবকিছুর মালিক আর বাকিরা তাদের আজ্ঞাবহ, এই অবস্থার পরিবর্তন কিভাবে করবেন সেটা জানান। কে প্রেসিডেন্ট কে সেক্রেটারী এসব নিয়ে মাথা ঘামাতে চাই না। আমরা ফল দেখতে চাই।
বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভিন্ন। অনেকে সুযোগ পেলেই বলেন ধনী-দরিদ্র বৈষম্য বাড়ছে। শহর-গ্রামের পার্থক্য বাড়ছে।
তাতে কি ? বাধা দিচ্ছে কে ? একজন প্রমানিত দুর্নীতিবাজকে সরানোর সামর্থ্য যেখানে হয় না সেখানে এধরনের আধ্যাত্বিক কথা বলার প্রয়োজন আছে কি ?
নাকি আধ্যাত্বিকতাই একমাত্র সম্বল!

0 comments:

 

Browse