উল্টোপিঠের দেশ

Oct 3, 2011
ঢেউ বিষয়টি এমন যা একবার তৈরী হলে চারিদিকে ছড়ায়। বাধা দিলে শক্তি বৃদ্ধি পায়। পথে যাকিছু আছে তাকে আলোড়িত করে।
মধ্যপ্রাচ্যের গনআন্দোলনকে ঢেউ হিসেবেই উল্লেখ করা হয়েছিল। এদেশ থেকে পাশের দেশ, সেখান থেকে আরেক দেশ। পশ্চিমা মিডিয়াগুলি দিনরাত ক্যামেরা ধরে রেখেছে সেখানে, বিশ্লেষকরা বিশ্লেষন করেছেন। যাক এতদিনে ওই স্বৈরশাসকদের হাত থেকে রক্ষা পেতে জেগেছে মানুষ। গাগো জাগো। আমরা আছি তোমার সাথে। গাদ্দাফিকে সরাও, অস্ত্র-অর্থ যা প্রয়োজন হয় সব দেব। সিরিয়ার জনগন জাগো, নেতাকে সরাও। আরব বিশ্ব জাগো, স্বৈরশাসকদের সরাও। কারজাইয়ের মত কাউকে খুজে বের কর। আমরা সবসময় জনগনের পক্ষে। একমাত্র প্যালেষ্টাইন বাদে। সেখানে জনগন বলে কিছু নেই।
সমস্যা হচ্ছে এই বিশ্ব-বিশ্লেষকরা ঢেউয়ের নীতি ভুলে গিয়েছিলেন। এমনকি ভারতে যখন একজন অনসন শুরু করলেন, লক্ষ লক্ষ মানুষ তাতে সমর্থন দিল তখনও তারা খুশিতে হাততালি দিয়েছে। এটাই তো আমরা চাই। জনগনের সচেতনতা।
সমস্যা হচ্ছে ঢেউ একসময় তার নীতি অনুযায়ী একসময় গিয়ে পৌছল তাদের দোড়গোড়ায়। একেবারে ওয়াল ষ্ট্রিটে।
বিষয়টি অবাক করার মত এতে সন্দেহ নেই। আমেরিকানরা শেষ করে পথে নেমেছিল মনে করা কঠিন। ভিয়েতনামের যুদ্ধের প্রতিবাদে সরব হয়েছিল তারা। সরকারকে বাধ্য করেছিল ভিয়েতনাম থেকে সৈন্য ফেরত আনতে। এরপর বড় ধরনের কিছু সম্ভবত দেখা যায়নি।
যদিও সে সম্ভাবনা ছিল পুরোমাত্রায়। আমেরিকা শুধুমাত্র অর্থ এবং অস্ত্র দিয়েই শক্তিশালী এমন তো না, মেধা, বুদ্ধি এবং সচেতনতাতেও এগিয়ে। যারা আমেরিকার বাইরে থাকেন তারা এধরনের কিছু মেধাবীর লেখা পড়ার সুযোগ পান, ভিডিও দেখার সুযোগ হয়। ফুড ইনক নামের ডকুমেন্টারী তাদেরই তৈরী। সেখানে তুলে ধরা হয়েছে বিশ্বজুড়ে খাদ্য নামের এই বিশাল পন্য কিভাবে কয়েকটি কোম্পানী নিয়ন্ত্রন করে। আমেরিকার একটা সুপারষ্টোরে গড়ে ৪৭ হাজার পন্য থাকে। তার ৯০ শতাংশ আসে ৪ কোম্পানী থেকে। প্যাকেটের গায়ে ঝলমলে খামারের ছবি, বাস্তবে খামার হচ্ছে চারিদিকে ঘেরা অন্ধকার কারখানা। সেখানে গরু, মুরগি থেকে সবকিছু উতপাদন হচ্ছে। ওষুধ দিয়ে এমনভাবে বাড়ানো হচ্ছে যে তারফলে মানুষের কি হচ্ছে দেখার সময় নেই। আপত্তি করবেন কোন কারনে, আপনার ব্যবসা শেষ। কৃষককে প্রতিবার বীজ কিনতে হবে। কেউ ফসলকে বীজ হিসেবে রাখতে কিনা দেখার জন্য ঘুরছে কোম্পানীর প্রতিনিধি। ধরা পরলে মামলা। সেটা চলতে থাকবে বছরের পর বছর। যতক্ষন পর্যন্ত ফতুর হয়ে পিছিয়ে না যান। আদালতের জ্ঞানী ব্যক্তিরা অন্যায় রায় দেবেন না তবে মামলা কিভাবে ১০-২০ বছর চালানো যায় সেটা তারা ভাল করেই জানেন।
একজন তো বলেই দিলেন বারাক ওবামা মিথ্যেবাদি, তার ফল অব দি রিপাবলিক নামের ডকুমেন্টারীতে। রীতিমত পক্ষে-বিপক্ষে বলা ভিডিও পরপর দেখিয়ে। বাংলাদেশে কেউ এই দুঃসাহস দেখাবেন না এটা নিশ্চিত। তারপরও তুলনার বিষয় এসে যায় কারন ওবামা ডিজিটাল আমেরিকার কথা না বললেও  ডিজিটাল বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছেন বহুবার। আগের নির্বাচনে ফেসবুক-টুইটার ব্যবহার করে উদাহরন তৈরী করেছেন। আবারও নির্বাচনের হাওয়া লাগতেই ফেসবুকের অফিস ঘুরে এসেছেন।
এসব অপ্রয়েজনীয় কথা বরং থাক। মুল বিষয় হচ্ছে আমেরিকায় জনগন-সরকার মুখোমুখি এমনটা বিরল ঘটনা। শতশত মানুষকে গ্রেপ্তারও বিরল ঘটনা। এসব তো থার্ড ক্লাশ দেশের উদাহরন। ফার্ষ্টক্লাশ দেশ যখন সেটা অনুকরন করে তখন কিছু প্রশ্ন সামনে না এসে যায় না।
ওবামা সরকারের কি ধারনা এটা করে শুধুমাত্র কর্পোরেশনগুলোর সহায়তা নিয়ে সরকার টিকে থাকবে। কোন নেতা কোন কর্পোরেশনের কোন পদে সেকথা যখন মানুষ জানে। সাধারন মানুষর জীবনযাপন এবং তাদের জীবনযাপনের পার্থক্য যখন জানে। নাকি তাদের পক্ষে রিমান্ড, ক্রশফায়ার, উধাও হয়ে যাওয়া এসব ঘটানো সম্ভব!
অসম্ভব বলে কিছু নেই। ইতিহাস বলে শাসক সবসময়ই শাসক। ইতিহাস আরো বলে ক্ষমতা দিয়ে কেউ টিকে থাকেনি। ইতিহাস আরো বলে জনগন যখন ঘুরে দাড়ায় তাদের থামানো যায় না।
বাংলাদেশ হয়ত গর্ব করতে পারে কিভাবে দেশ চালাতে হয়, কিভাবে বিশৃঙ্খলা বন্ধ করতে হয়, আইনের শাসন প্রতিস্ঠা করতে হয় এসব বিষয়ে উদাহরন তৈরীর। তারা চাইলে শান্তিরক্ষীর মত র‌্যাব রপ্তানীও করা যেতে পারে। কিংবা তারা এধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলার পদ্ধতি শিখতে পারে। কয়েকদিন আগে বিরোধীদলের সমাবেস ডাকা হয়েছিল। তাদের সমাবেসের যায়গা ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়নি, ঢাকাগামি সবগুলি গাড়ি-বাস-মোটরসাইকেল উল্টোদিকে ঘুরিয়ে দেয়া হয়েছে ঢাকায় ঢোকার পথ থেকে, ঢাকাগামী ট্রেনগুলি প্রতি ষ্টেশনে ৩০-৪০ মিনিট করে বিশ্রাম নিয়েছে। আবার অন্যভাবে আমেরিকার জনগনও শিখতে পারে এধরনের পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের মানুষ কি করে।
আমেরিকা মানচিত্রে বাংলাদেশের একেবারে উল্টোপিঠে থাকতে পারে, সরকারে পার্থক্য নেই। মুল পার্থক্য জনগনে। দেখা প্রয়োজন আমেরিকানরা কি করে।

0 comments:

 

Browse