লংকায় সবাই রাবন

Oct 9, 2011
বাংলাদেশ অনেক বিরল কৃতিত্বের অধিকারী সত্যি বলতে কি এগুলো একসাথে করলে রীতিমত মহাকাব্য লেখা যায় সেই জটিলতায় গিয়ে কাজ নেই বরং যা নিয়ে দেশের মানুষ সবচেয়ে বেশি চিন্তিত, মাথায় চুল ঝড়ে যাচ্ছে কিংবা রং লাগিয়ে কালো করতে হচ্ছে সেটা নিয়েই থাকা যাক
স্বাধীন বাংলাদেশের ৪ দশকের ইতিহাসে এক বড় দৃষ্টান্ত হচ্ছে কোন সরকার সন্মান নিয়ে ক্ষমতা ছাড়েননি হয় জীবন দিয়েছেন নয়ত গলাধাক্কা খেয়েছেন অন্যের কারনে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছে ৪০ বছর ধরে প্রত্যেক সরকারকে কাজেই এটা যে নিয়মে পরিনত হবে তাতে সন্দেহ কি ? মানুষ অভ্যেসের দাস, স্বভাব না যায় মলে এসব কথা তো মিথ্যে হতে পারে না!
কাজেই অতীতের সরকার, বর্তমানের সরকার, ভবিষ্যতের সরকার সবাই এই অভ্যেস অনুযায়ী চলবেন এটাই স্বাভাবিক যতক্ষন কেউ সরকারে থাকেন, সরকারের কাছাকাছি থাকেন সাথেসাথে তাদের রসবোধ চাগিয়ে ওঠে। গোপালভাড়-বিরবল-হোজ্জা তাদের কাছে তুচ্ছ। কে একজন বললেন ফাইনাল খেলার কথা। সাথেসাথে শুরু হয়ে গেল সেটা নিয়ে রসচর্চ্চা। কে কতদিক থেকে কতভাবে তার ব্যাখ্যা দিতে পারেন। কিংবা মরা গাছে ফুল ফোটানোর রসকথা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব হাস্যরস পরিবেশন করেন ভাড়। নাটককে হাস্যকর করার জন্য যেমন ভাড় কিংবা পাগল চরিত্র রাখা হয় তেমনি চরিত্র নিয়ে এরা উপস্থিত। মুল বিষয়ে এদের কোন ভুমিকা নেই।  
মুল ভুমিকার পাত্রপাত্রী সকলেরই চেনা। তাদের বক্তব্যও জানা। একজন একসময় তত্বাবধায়ক সরকার আনার অবদানের কৃতিত্ব অর্জণ করেছিলেন, পরবর্তীতে সেটা বাতিলের কৃতিত্বও অর্জন করেছেন। ১/১১ আনার কৃতিত্ব যেন দেখিয়েছেন সংবিধান পরিবর্তন করে সেটা বন্ধ করার কৃতিত্বও দেখিয়েছেন। কাজেই তিনি জনসমর্থন পাবেন এটা আশা করতে দোষ কোথায়।
আরেকজনের মুল অস্ত্র যারা সরকারের ব্যর্থতার কারনে দুর্ভোগের শিকার তাদের সমর্থন। সরকার যত ব্যর্থ তাদের সমর্থন তত বেশি। এই সমর্থন সংখ্যায় অনেক। এদের সাথে ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় যারা সুবিধে পেয়েছেন, আবারো পাওয়ার আশা করেন তারা যোগ দিলে জনসমর্থনের পাল্লা এদিকেই ভারী। তিনি ছেড়ে কথা কইবেন কেন ?
কাজেই দুই পক্ষ একসময় শক্তিপরীক্ষায় নামবে এটা নিশ্চিত। এবং তারফলে অবধারিতভাবে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ।
এই তৃতীয় পক্ষ সম্পর্কে দুকথা না বললে চলে না। খবরের কাগজে ছাপা হয়েছে চারজন স্কুলছাত্রকে পিটিয়েছেন কয়েকজন অব কর্নেল এবং তাদের সহকর্মীরা। একসময় বক্তব্য ছিল, পিটিয়ে মেরে ফেল। সেটা সম্ভব হয়নি অন্যরা সেখানে ভীড় জমিয়েছিল বলে। তাদের অপরাধ কোচিং সেরে বাড়ি ফেরার পথে পার্কের রাস্তায় উল্টোদিকে হেটেছে।
অবাক হয়ে ভাবতে পারেন ঢাকা শহরে এমন কোন যায়গা আছে যেখানে পার্কের রাস্তায় উল্টোদিকে হাটা পিটিয়ে মেরে ফেলার মত অপরাধ।
আছে। যেখানে অব-রা বাস করেন সেখানে নিয়ম একচুল এদিক-ওদিক হয় না। বৃষ্টির মধ্যে ছাতা দিয়ে গাছে পানি দেয়া হয়। এই দেবতারা যেদিন বিএমএ-তে পা রাখেন সেদিন থেকেই জেনে যান তাদের মত জ্ঞানী-গুনি-বুদ্ধিমান-দক্ষ-দেশপ্রেমিক-সত-যোগ্য আর কেউ নেই। সব সিভিলিয়ান কালপ্রিট। তাদেরকে পিটিয়ে সোজা রাখতে হয়। যখন অব হন তখনও কদর বিন্দুমাত্র কমে না (এই ঘটনাই প্রমান। কারো টু শব্দ করার সুযোগ নেই)। এমনকি মৃত্যুর পরও অব গিয়ে লাগে কবরের নামফলকে।
কাজেই দুইপক্ষের হাত থেকে দেশ রক্ষা করতে তৃতীয় পক্ষ খুব যে আপত্তি করবেন এটা ভাবার কোন কারন নেই। একজন তো বলেছেন গনতন্ত্রের এই অবস্থা হবে জানলে ৯০ সালে ক্ষমতা নিতেন। গনতন্ত্র রক্ষা করতেন।
এই তিন পক্ষের বাইরে জনগনকে চতুর্থ পক্ষ বলা যায় কিনা বলা শক্ত। সম্ভবত পক্ষ শব্দ ব্যবহারের যোগ্যতা তারা অর্জন করেনি। তাদেরকে দয়া করে কেউ যদি গনতন্ত্র দেয় তাহলে তারা সুখে সেটা ভোগ করতে পারে। অন্যসময় তাদের বক্তব্য পুরনো। শিখিনি শিং বাকানো, কেবল খাবো খোল-বিচিলি-ঘাস ...
সমস্যা হচ্ছে তিন পক্ষের যে পক্ষ লংকায় যান তিনিই রাবনে পরিনত হন। আর তাদেরকে লংকায় পাঠান এই চতুর্থ পক্ষই। যতধরনের সমর্থন প্রয়োজন সব দিয়ে।

0 comments:

 

Browse