রেকর্ড ভাঙাগড়ার খেলা

Jan 11, 2011
রেকর্ড ভাঙা কথাটি কিভাবে চালূ হয়েছে আমার জানা নেই। সিডি কিংবা ক্যাসেটের আগের যুগে গানের রেকর্ড বের হত জানি। কিন্তু নতুন রেকর্ড বের হলে আগের রেকর্ড ভেঙে ফেলার উল্লেখ কোথাও পাইনি। তারপরও কথাটি চালু। নতুন কিছু ঘটার সাথেসাথেই বলা হয় আগের রেকর্ড ভাঙা হল। কখনো কখনো এই ভাঙাভাঙি শুধু রেকর্ডেই সীমাবদ্ধ থাকে না, আশেপাশের অনেককিছুতে ঘটে।
যেমন ধরুন শেয়ার বাজারের কথা। ৫০ মিনিটে দরপতনের নতুন রেকর্ড তৈরী হল। সাথেসাথে পুরনো রেকর্ড যেমন ভাঙল তেমনি রাজপথে গাড়ি ভাঙাভাঙিও শুরু হল। বন্ধ করে দেয়া হল শেয়ারের দোকান। হরতালের ভাঙাভাঙির ভয়ে যেমন দোকানপাট বন্ধ থাকে অনেকটা তেমনই।
অবশ্য কোন ভাঙাভাঙিতেই কর্তা ব্যাক্তিরা নিরব থাকেন না। তাদের মাথা দ্রুত কাজ করে। এখানেও সেটাই ঘটল। জরুরী পদক্ষেপ নেয়া হল। ঋন নেয়া সহজ করা হল। এখন নাকি দ্বিগুন ঋন নেয়া যাবে। ১ এর বিপরীতে ২। ১ লক্ষের এর বিপরীতে ২ লক্ষ।
কাজেই পরদিন আবারও নতুন রেকর্ড গড়া এবং পুরনো রেকর্ড ভাঙা। এবারে বিপরীতমুখি। ১ ঘন্টায় সুচক বেড়ে গেল হাজার পয়েন্ট। পার্থক্য শুধু এটাই, পতনের রেকর্ডের সাথে মিল রেখে যেমন গাড়ি ভাঙাভাঙি ঘটে সেটা ঘটেনি। এমনকি এর বিপরীত চিত্র যদি কল্পনা করেন, বিক্ষোভ মিছিলের বিপরীতে আনন্ত মিছিল, কিংবা মিষ্টি বিতরন সেটাও ঘটেনি। এমনকি যাদের মেধার গুনে এমনটা ঘটল তাদের কথা একবারও স্মরন করা হল না। তাদের ছবি হাতে কেউ পথে নামল না। বাঙালী আসলেই অকৃতজ্ঞ।
আমি ৩০ লক্ষ বিনিয়োগকারীর একজন নই। কাজেই আমাকে কোনপক্ষে দেখার সম্ভাবনাও নেই। আমার চিন্তা অন্য যায়গায়। একেবারে স্বার্থপরের মত নিজের চিন্তা।
শেয়ার কেনার জন্য যে টাকা ব্যবহার করা হচ্ছে সেটা কার টাকা ? আমার নয়তো ? যে টাকা ব্যাংকে রেখেছি।
সন্দেহের কারন একটু আছে বৈকি। আমেরিকায়-ইউরোপে এমনটা ঘটে গেছে আগেই। সেসব খবর পত্রিকায়-টিভিতে-রেডিওতে প্রচার করা হয়েছে। কিছুটা কানে এসেছে বৈকি। যদি তেমনটা ঘটে ? বিশ্বের বাঘাবাঘা অর্থনীতিবিদরা যখন ওয়ালষ্ট্রিটের কথা আগাম বলতে পারেননা, সেখানকার ধ্বস থামাতে পারেন না, তাদের ব্যাংক বন্ধ হয়ে যায়, তখন সেটা এখানে ঘটবে না সে নিশ্চয়তা দিচ্ছে কে ? তারাও নাকি বলতে পারে না শেয়ার বাজারের হাজার হাজার কোটি ডলার আসলে কোথায় যায়।
অবশ্য বাঙালীর মেধা বলে কথা। এনিয়ে সন্দেহ করার কোন অবকাস নেই। এইতো উদাহরন চোখের সামনে। একদিনে উল্টোদিকের রেকর্ড। কই, কেউ পেরেছে এটা করে দেখাতে!
নিজের কথাতেই ফেরত আসি। যদি কোনভাবে আবারও বিপরীত দিকের রেকর্ড তৈরী হয়, যদি শেয়ার বাজারের টাকাগুলো কোথায় গেছে জানা না যায় তাহলে কি হবে ? যতদুর জানি ব্যাংকের নিজস্ব টাকা বড়জোর কয়েকশ কোটি। যে লক্ষকোটি টাকা লেনদেন করে সেগুলো আমার মত গরীব মানুষের টাকা। প্রতিমাসের বাসাভাড়া-বাসভাড়ার টাকা। খাবার টাকা হিসেবে উল্লেখ করছি না। না খেয়ে দিব্বি কদিন কাটানো যায় কিন্তু বাড়ি ছেড়ে ফুটপাতে থাকা, একদিনের জন্যও কষ্টকর।
কাজেই আমার চিন্তা, যদি টাকাগুলোর খোজ না পাওয়া যায়, যারা ব্যাংক থেকে টাকা নিয়েছেন তারা যদি কোন কারনে ফেরত দিতে না পারেন, তাহলে ব্যাংক প্রয়োজনের সময় আমার টাকা দেবে কোথা থেকে ? তারা যদি ৬ হাজার কোটি ডলারের লেহম্যানের মত দেউলিয়া হয় তাহলেই বা আমার কি করার আছে ? কাকে ধরব ? তাকে পাব কোথায় ?
শেয়ার বাজারের বিনিয়োগকারী ৩০ লক্ষ। কিন্তু ব্যাংকে টাকা রেখেছে যে কয়েক কোটি। এই কয়েক কোটি মানুষের টাকা বাজি রেখে ৩০ লক্ষ মানুষকে বাচানোর চেষ্টা আমাকে সত্যিই ভীত করছে। আবারও বলছি, আমি ওই ৩০ লক্ষের দলের কেউ নই, কয়েক কোটির দলে।
রেকর্ড ভাঙাগড়ার খেলা খেলবেন খেলুন। আমাকে ভাঙবেন না।

0 comments:

 

Browse