কাক খায় কাকের মাংশ

Jan 1, 2011
কাক নাকি সবকিছুই খায়। এটা প্রচলিত কথা। আবার কাক কাকের মাংশ খায় না এটাও প্রচলিত প্রবাদ। কারো বিভ্রান্ত হবার জন্য বিপরীতমুখি এই দুই বক্তব্য যথেষ্ট।
কাক বিষয়টা নিশ্চয়ই প্রতিকী। আসলে কাক কি খায়, না খায় তাতে কারো কিছু যায় আসে না। অন্তত হোটেলে গিয়ে বার্গার খাওয়ার সম্ভাবনা নেই যে তারকাছে ব্যবসার চিন্তা করবেন। কাক বলে উল্লেখ করার অর্থ হচ্ছে সেটা নিরাপদ। সে প্রতিবাদ করে রাজপথে নামবে না। গালাগালি করে উত্তর দেবে না। কাজেই তার নাম করে যাকিছু বলতে পারেন।
কথা হচ্ছে, কেউ নিজের গোত্রের ক্ষতি করে না। এমনকি মৃতদেহ হলেও। এই রীতি সমাজে প্রচলিত বেশ ভালভাবেই।
যেমন ধরুন, আপনি এক দোকানে কিছু কিনলেন। আপনার মনে হল আপনাকে ঠকানো হয়েছে। খুব গুরুতর রকমের ঠকানোর বিষয় থাকলে তবেই বাঙালী সেটা নিয়ে মাথা ঘামায়। হয়ত এক জিনিষের নামে করে অন্য জিনিষ দিয়েছে, দাম কয়েকগুন বেশি নিয়েছে।
প্রতিকার ?
আইনের কথা ভুলে যান। কাকে রিমান্ডে নিতে হবে আর কোন মামলা প্রত্যাহার করতে হবে এইসব জরুরী কাজে সেটা ব্যস্ত। শক্তি থাকলে নিজ দায়িত্বে সেই ব্যবসায়ীর সাথে হাতাহাতি করতে পারেন, কিন্তু সে সামর্থ্য সকলের হয়না। ক্রেতার হাতে দোকানদার মার খেয়েছে এমন ঘটনা সচরাচর ঘটে না। বরং ক্রেতার মার খাবার সম্ভাবনাই বেশি। ওই যে, গোত্র। দোকানদার দোকানদার ভাই ভাই। লাগলে রক্ষা নাই।
কাজেই, যে পথ খোলা থাকে তা হচ্ছে নিজের ক্ষতি স্বীকার করে সেখান থেকে সরে যাওয়া। অন্য কোথা, অন্য কোনখানে। আর এইখানেই গোত্র বিষয়টি প্রকট।
আপনি ভাবলেন ওর কাছে আর কখনো কিছু কিনব না। এভাবে একজন একজন করে সরতে সরতে যখন সব ক্রেতা সরে যাবে তখন ব্যাটা বুঝবে ব্যবসা কিভাবে করতে হয়। সার্ভিস মানে সেবা। সেটা ঠেকে শিখুক।
কিন্তু ওই যে কাকের উদাহরন। এক ব্যবসায়ী আরেক ব্যবসায়ীর ক্ষতি করে না। আপনি গেলেন আরেক যায়গায়, আরো বড় ঠক খেলেন। তারপর আরেক যায়গায়। তারপর আবারও। শেষমেশ বুঝলেন, আগেরজনই ভাল ছিল। এক ব্যবসায়ী সেবা দিয়ে আরেক ব্যবসায়ীর হক নষ্ট করেনি।
বাস্তব উদাহরন জানতে চান ?
ওই যে, পাইরেসি। যা নিয়ে বিশ্বখ্যাত ডিজিটাল বাংলাদেশ, ওই ব্যবসায়ীদের কথাই ধরুন না কেন। শতশত সিডি-ডিভিডির দোকানে তারা চিঠি পাঠিয়েছে। বিষয়, নতুন বছরের শুরু থেকে ডিভিডির দাম বেশি। সব পাইরেটরা সমবেত হয়ে এই সিদ্ধান্তে উপনিত হয়েছে যে কেউ আগের দামে বিক্রি করবে না। করলে ৫০ হাজার জরিমানা।
কিংবা সেই পুরনো উদাহরনই আবার দেখুন না কেন। ডিজিটাল দেশের ইন্টারনেট। অমুকের ২৫৬ কেবিপিএস এর আনলিমিটেড লাইনে ৫ কেবিপিএস পাওয়া যায়। আমি কেন বেশি দেব ? আমার হিসেবও ওই ৫ কেবিপিএস। তাতেও মন না ভরলে লাইন বন্ধ। চাবি আমার হাতে। তুই ব্যাটা কথা বলার কে ?
টাকা দিয়েছিস ভাল কথা, খুজে দেখ তো আরেকজন কি করছে ? ওরাও কাক। কখনো কাকের মাংশ খাবে না।

0 comments:

 

Browse