শয়তানের ভাই

Dec 26, 2010
ঢাকা শহরের পুরনো বাসিন্দাদের হয়ত মনে থাকার কথা, প্রেস ক্লাবের মোড়ে আইল্যান্ডে বিশাল আকারে বাণী লেখা ছিল একসময়। অপচয়কারী শয়তানের ভাই। নিশ্চয়ই বক্তব্য ছিল আপনি যদি নিজেকে শয়তানের সহোদর বানাতে চান তবেই অপচয় করুন, নইলে মিতব্যায়ী হোন।
সে অনেক পুরনো কথা। দেশ বহুদুর এগিয়ে গেছে। শয়তানও নিশ্চয়ই পরিবর্তিত হয়েছে। হয়ত সে নিজেই এখন অপব্যয় ছেড়ে মিতব্যায়ী হয়েছে, আর সেটা পুরোটাই চাপিয়ে দিয়ে গেছে ঢাকাবাসীর ওপর। কিংবা দেশবাসির ওপর।
দুএকটা উদাহরন দিলেই বিষয়টা পরিস্কার হতে পারে। ধরুন ওই শিক্ষা ব্যবস্থার কথাই। শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। কাজেই মেরুদন্ড শক্ত করতে শিক্ষাকে যথেষ্ট পুষ্টি দেয়া প্রয়োজন। শিশুকে স্কুলে পাঠানোর আগেই কোচিং সেন্টারে পাঠিয়ে সেটা শুরু। তারপর বছরের পর বছর চলতে থাকে সেই পুষ্টিদান। বেশিরভাগ সময় মা, কখনো কখনো বাবাকেও অফিস-ব্যবসা ফেলে সন্তান নিয়ে হাজিরা দিতে হয় স্কুলে। বাড়ি থেকে বেরতে হবে দুঘন্টা আগে, আবার ছুটির দুঘন্টা আগে রওনা দিয়ে গেটে পৌছুতে হবে তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য। আপডাউন রিক্সা বা ট্যাক্সিভাড়া। অথবা নিজের গাড়ির তেল-গ্যাস-ড্রাইভার খরচ। কেউ কেউ স্কুলের পুরো সময়টাই স্কুলের সামনে ফুটপাতে বসে সময় কাটান। কোথাও কোথাও অবশ্য সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশলীর কল্যানে ফুটপাত ঘিরে ঘর বানিয়ে বসার যায়গা করে দেয়া হয়েছে। রীতিমত স্থায়ী, পাকা ঘর। নির্মাতার নাম জ্বলজ্বল করছে সেখানে।
কথা বাড়িয়ে কাজ নেই। কথা হচ্ছিল অপচয় নিয়ে। হিসেব করে সহজেই বের করে নিতে পারেন এখাতে কত পরিমান টাকা, কি পরিমান সময় এবং কতখানি শ্রমের অপচয় হচ্ছে। শতকোটি, সহস্রকোটি কিছুএকটা হবে নিশ্চয়ই।
তাই বলে নিজেকে শয়তানের ভাই ভাববেন না। সরকার এনিয়ে বিস্তর মাথা ঘামাচ্ছেন। স্কুলের বাসের চিন্তাভাবনা করছেন। একদিন সেটা হবেই হবে।
স্কুল পেরিয়ে, কলেজ পেরিয়ে পরের ধাপে যাওয়ার সাথেসাথে ধরনটাও পাল্টে যায়। শুরুটাই একবার দেখা যাক।
দেশে যত ধরনের যতগুলি শিক্ষার সুযোগ রয়েছে সব যায়গায় ভর্তির প্রস্তুতি নেবেন। সব ধরনের কোচিং সেন্টারে যাবেন। তারপর সব যায়গার ফরম কিনবেন, ভর্তি পরীক্ষা দেবেন। কোথায় সুযোগ পাবেন সেটা যখন জানা নেই তখন না করে করবেনই বা কি!
প্রশ্ন করতে পারেন একযুগ ধরে যে পড়াশোনা, এসএসসি-এইচএসসি নিয়ে এত তোড়জোর, সেটার ফল কি কাজে লাগে। সেটা দেখেই তো ভর্তি করা যায়। যে আগের দুই পরীক্ষায় ভাল করেছে তার অগ্রাধিকার, তারপর ক্রমাম্বয়ে ...
ওসব কথা বলবেন না। জানেন এটা কত টাকার বানিজ্য ? কোচিং সেন্টারগুলির টাকা কার কার পকেটে যায় ??
দেশের অর্থনীতির কথা তো ভাববেন। কত মানুষ করে খাচ্ছে এই পদ্ধতিতে সে খোজ রাখেন ? কিছু মানুষ টাকা খরচ করছে ঠিকই, কিন্তু যার সামর্থ্য আছে সেই তো খরচ করে। যাদের পকেটে যায় তারা রীতিমত মাথা ঘাটিয়ে, শ্রম দিয়ে, কষ্ট করে, নিয়মতান্ত্রিকভাবেই আয় করে।
আর যাই হোক একে অপচয় বলবেন না। ধর্মপ্রাণ এই দেশে শয়তানের ভাই বাস করতে পারে না।

0 comments:

 

Browse