চুরি বিদ্যা বড় বিদ্যা

Dec 5, 2010
বাংলাদেশের ভাবমুর্তি অত্যন্ত রঙিন। অন্তত বিদেশীদের কাছে তো বটেই। নানা রঙে উজ্জ্বল। রাজনীতি-অর্থনীতি-দুর্নীতি সবকিছু এতটাই উজ্জ্বল যে অন্যরা ধারেকাছে ঘেষতে পারে না। অবশ্য যুদ্ধআক্রান্ত দেশগুলিকে বাদ দিয়ে। তা সেগুলিকে আর দেশ বলেই বা লাভ কি ? ইরাক-আফগানিস্তানের সত্যিকারের মালিক কে জানার উপায় কি ? সিদ্ধান্ত যখন সেদেশের মানুষ নেয় না।
পরচর্চা করা প্রয়োজন নেই। বরং বাংলাদেশের বর্নিল দিকের কথাই বলা যাক।
ভাবমুর্তিতে অত্যন্ত রঙিন নতুন একটি পালক যোগ করলেন একজন। দারিদ্র দুর করার পথ আবিস্কার করে, সেপথে সারা জীবন কাটিয়ে শান্তির মানব হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করলেন। সারা বিশ্বের মানুষ ঝুকে পড়ল দারিদ্র দুরীকরনের এই পদ্ধতির দিকে। আর নিজের দেশে শতশত, হাজার হাজার প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠল দারীদ্র দুর করার মহান কাজে। এর পক্ষে-বিপক্ষে মত থাকবে এটা অস্বাভাবিক মনে করার কারন নেই। মানুষ ধর্মের পক্ষে-বিপক্ষেও কথা বলে।
সেকথা থাক। বরং ঘটনা কি দেখা যাক। হঠাত করেই একটা পুরনো খবর নতুনভাবে আবিভুত হল। নরওয়ের টিভিতে এইসব ঋনের কাযর্কারিতাকেই চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। আর সেটা করতে গিয়ে যে তথ্য তুলে ধরা হয়েছে বিপত্তি সেখানেই।
দারীদ্র দুরীকরনের পথপ্রদর্শক, নোবেল পুরস্কার বিজয়ী গ্রামীন ব্যাংক নরওয়ে থেকে অর্থগ্রহন করেছিল দরীদ্রদের শতকরা ২ ভাগ সুদে ঋন দেবার শর্তে। সেই অর্থ থেকে বড় একটি পরিমান (তাদের হিসেবে ৭০০ কোটি টাকা) তাদেরই আরেকটি প্রতিস্ঠানে স্থানান্তর করা হয়েছে। আপত্তি সেখানেই।
নানা মুনির যেমন নানামত থাকে তেমনি এখানেই বহুমত রয়েছে। বরং তাদের নিজেদের ব্যাখ্যার দিকেই দৃষ্টি দেয়া যাক। অর্থ যদি না সরানো হত তাহলে তাদের বিপুল পরিমান কর দিতে হত। তাহলে দরীদ্রদের ২% সুদে ঋন দেয়া সম্ভব হত না। কাজেই দরীদ্রদের স্বার্থে কাজটি করতে হয়েছে। আর বিষয়টি বছর পনের আগের। তখন  যদি কথা না ওঠে তাহলে এখন উঠবে কেন ?
আর বিপক্ষমত যদি শোনেন, এক ফান্ডের টাকা আরেক নেয়া কতটা আইনসম্মত, কতটা নৈতিক। মুল কারন যখন ট্যাক্স ফাকি দেয়া। কিংবা যে ২% সুদে ঋন দেয়ার কথা বলা হয়েছে সেই ২% সুদে কে কখন ঋন পেয়েছে। শোনা যায় ঋনের সুদ সরকারী-বেসরকারী-বানিজ্যিক যত ধরনের ব্যাংক আছে তাদের সবার থেকে বেশি। আসলে সেই হার কত কেউ জানে না। হোয়াইটহাউজ-পেন্টাগন কবে কোন চিঠিতে কি লিখেছে সেখবরও সারা পৃথিবীর মানুষ জানার সুযোগ পায়, কিন্তু কয়েক দশক ধরে একটি প্রতিষ্ঠান ঋন দিচ্ছে, বহুকোটি মানুষ ঋন নিয়েছে, প্রতিনিয়ত নিচ্ছে, তারপরও সেই ঋনের হার কত জানা যায় না।  
থলের বেড়াল যদি বেড়য় তাহলে বিপত্তি ঘটার সম্ভাবনা থাকেই। আর হয়েছেও তাই। এখানেও নানা মুনীর নানা মত। নরওয়ের সরকার চক্রান্ত করে এটা করেছে থেকে শুরু করে টেলিনরের সাথে গ্রামীনের বিরোধ সব কারনই উঠে এসেছে। এবং আগামীতে যা আসতে বাকী আছে তা হচ্ছে সরকার এবং বিরোধী দলের মুখোমুখি অবস্থান। অন্তত লক্ষন বলে দিচ্ছে বিষয়টি সেদিকেই যাচ্ছে। দুপক্ষ থেকেই খোচা মেরে পরীক্ষা করা হচ্ছে কোনপথে অগ্রসর হওয়া যায়।
আমাদের সবই সয়ে গেছে। দরীদ্রদের সেবা করে ধনী হওয়া কোটিপতি আমরা দেখেছি, দেশ এবং জনগনের সেবা করে কোটিপতি হওয়া নেতাও দেখেছি, আবার কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়ে কোটিপতি হওয়া ব্যবসায়ী-শিল্পপতিও দেখেছি। যাদের সেবা করা হয় তারা ধনী হয়নি এটাই বিষয়। তাতেও আমাদের আপত্তি নেই।
কিন্তু ওই যে, ভাবমুর্তির গায়ে নতুন পালক লাগানো, সেটাতেই যা সামান্য আপত্তি। চুরিবিদ্যা বড় বিদ্যা যদি না পড় ধরা।
চুরি করবেন করুন, ধরা পরেন কেন ?

0 comments:

 

Browse