অবশেষে

Nov 14, 2010
অবশেষে বেগম খালেদা জিয়াকে ৬০০ কোটি টাকার সম্পদ ছেড়ে যেতে হল। কিংবা বলতে পারেন ৬০০ কোটি টাকার সম্পদের অবৈধ দখলমুক্ত করল সরকার। তিনি কখনোই স্বেচ্ছায় যেতেন না। এখন দাম ৬০০ কোটি টাকা, ভবিষ্যতে আরো বাড়বে। তখন বিক্রি করে বহু টাকার মালিক হবেন এই আশায় সেখানেই থেকে যেতেন। কাজেই, সরকার দেশের সম্পদ উদ্ধার করে একটি পবিত্র, মহান দায়িত্ব পালন করল।
মুল পথের আশেপাশে যেমন অসংখ্য অলিগলি থাকে আপনি চাইলে তেমনি অলিগলি দেখতে পারেন। মানে নানারকম যুক্তি আরকি। যেমন তিনি কোর্টের রায় মেনে স্বেচ্ছায় চলে গেছেন, তার সাড়ে তিন দশকের সংসারের সবকিছু ফেলে। তাকে ধন্যবাদ জানাতেই জানালা কেটে, দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকা হয়েছিল। কোর্টে যে আবেদন করেছেন, কোর্ট যে সময় নিয়েছে মাসের শেষ পর্যন্ত ওসব আসলে কিছু না। কোর্ট কি জানাবে সেটা আগেই জেনে খুশি হয়ে চলে গেছেন।
অন্যদিকেও দৃষ্টি দিতে পারেন। আকারে ইঙ্গিতে এরই মধ্যে প্রকাশ করা হয়েছে কাজটি সরকার করেনি। করেছে সেনাবাহিনী। জনগনের সরকার এমন কাজ করতেই পারে না।
কিংবা যে কথাগুলি এতদিন ধরে প্রচার করা হয়েছে সেগুলি আবারও জাবর কাটতে পারেন। ক্যান্টমেন্টের মধ্যে বেসামরিক বসবাস নিষেধ (কোন আইনে কে জানে ? বনানী, মিরপুরসহ আশেপাশের অনেক এলাকা ক্যান্টমেন্টের নিজস্ব। ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের নিজস্ব আইনে নাকি বলা আছে কমপক্ষে ১০ হাজার বেসামরিক লোক থাকতে হবে ক্যান্টমেন্ট এলাকায়), কিংবা ক্যান্টনমেন্টে বসে রাজনীতি করা যায় না (বানিজ্যমন্ত্রী যেখানে বাস করেন তাকে ক্যান্টমেন্টে বাস করা বলা যায় না। তিনি বর্তমান মন্ত্রী) ইত্যাদি ইত্যাদি।
কথা যাই হোক না কেন, বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতির মুল যে কাজ সেই হরতাল ডাকা হয়েছে। ঈদের দুদিন আগে। যখন রমরমা ব্যবসা, মানুষের বাড়ি ফেরার মিছিল ঠিক সেই সময়ে। তাদের মানবিকতা বলে কিছু নেই। ৬০০ কোটি টাকার বাড়ি রক্ষার জন্য সারা দেশের মানুষকে জিম্মি করেছে। ৩৫ লক্ষ গার্মেন্টস কর্মী ভাইবোনসহ ২ কোটি দরীদ্র মানুষের ভাগ্য অনিশ্চিত করছে। ঈদের আগে ব্যাংক বন্ধ রেখে চামড়া শিল্প ধ্বংশ করছে। হরতাল অগনতান্ত্রিক সমাজের বৈশিষ্ট। একদিনে হরতালে ক্ষতির পরিমান ..
এসব তথ্য সকলেরই জানা। অতীতে শতশতবার শুনেছেন। গত সরকারের সময় তালিখ ঘোষনা করে দেয়া হয়েছিল, অমুক তারিখের মধ্যে সরকারের পতন ঘটানো হবে। আপনারা ততদিন পর্যন্ত হরতাল করুন।
তখন সবাই জেনেছেন হরতালের ব্যাখ্যা কি। নতুন করে আর বলার কি আছে। সরকার-বিরোধীদল-ব্যবসায়ী নেতা-বুদ্ধিজীবী সকলেই আরেকবার ঝালিয়ে নেবেন তাদের বক্তব্যগুলো। আরো ধারালো করবেন। বরং সাধারন মানুষের দিকটাই দেখা যাক (অবশ্য যদি সাধারন মানুষ বলে কিছু থাকে)।
অনেকের মতে এটা হরতালের প্রস্তুতি। ঈদের আগে হরতাল ডাকার কোন পরিকল্পনা ছিল না। ঈদের পর আন্দোলনের কথা বলা হয়েছিল। কেউ কেউ আগ বাড়িয়ে এটাও বলছেন সেজন্যই একে মোক্ষম সময় মনে করা হয়েছে। যাই হোক না কেন, হরতাল ডাকা হয়েছে। এটা প্রস্তুতি মুলক। এরপর বিরতি দিয়ে দিয়ে, তারপর বিরতিহীনভাবে ডাকা হবে।
আর হরতাল অর্থ দল আ লীগের মুখোমুখি অবস্থান। একপক্ষের চাদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলদারী, খুন সবকিছু করার অধিকার দেয়া হয়েছে এই সময়ে পথে নামবেন এই সর্তে। আরেকপক্ষ বছর চারেক ধরে সব হারিয়ে সেগুলি ফিরে পেতে মরিয়া। মাঝখানে জনগন। সরকারী চাকরী করলে অফিসে যাওয়া না যাওয়া আপনার ইচ্ছে, হরতালের দিন বাদ দিয়ে। চাকরী বাচাতে চাইলে আগের দিন অফিসে গিয়ে রাতে সেখানে ঘুমাবেন এবং পরদিন অফিস করবেন। বিটিভিতে দেখানো হবে অফিসের উপস্থিতি স্বাভাবিক।  সরকারী সাংসদের গার্মেন্টস হলে সেখানেও একই কথা। সেলাইকল চালানো দেখানো হবে বিটিভিতে। রাজপথে কিছু বাস চলবে যেখানে যাত্রীদের সবার কাছে পিস্তল। এই বাসগুলি কোথাও থামবে না। সারা শহর ঘুরে বেড়াবে। সেটাও দেখানো হবে বিটিভিতে। ফুটপাতের কোন ব্যবসায়ী অসন্তুষ্ট, কোন মিনিবাস চালক হরতালের শিকার, কোন রিক্সাচালক খেতে পাচ্ছে না সেই সাক্ষাতকারও দেখানো হবে (লক্ষ্য করলে মুখের কোনে হাসিটাও দেখে নিতে পারেন। হরতাল মানেই রিক্সাভাড়া দুই থেকে তিনগুন), কোন পথচারী কতঘন্টা ধরে কত মাইল হেটেছেন সে বর্ননাও শুনবেন।
আজকাল আবার বিটিভি একা নেই। প্রতিদ্বন্দি অনেক। চ্যানেলগুলিতে এসবের সাথে হরতালের পক্ষ-বিপক্ষের ছবি দেখবেন।  সেখানে দুপক্ষের উপস্থিতি সমান। কথায়, স্লোগানে, শক্তিতে। একেবারে রেসলিংএর উত্তেজনা। একেবারে টাটকা, সরাসরি সম্প্রচার।
যারা টিভিতে ঝিমধরা, বস্তাপচা নাটক দেখে দেখে বিরক্ত তারা অবশেষে উত্তেজনার খোরাক পেলেন। ধন্যবাদ জানাতেই পারেন দুপক্ষকে।
আর যদি নিতান্তই নিরামিশভোজি হন তাহলে জনগনের কথা ভেবে ইতিহাস থেকে উদাহরন দেখাতে পারেন বেগম খালেদা জিয়াকে। সম্রাট আকবর যখন ক্ষমতায় তখন খবর পাওয়া গেল ইংরেজরা এক কুকুরে গলায় কোরান শরীফ ঝুলিয়ে শহরে ঘুরিয়েছে। তিনি এতটাই ক্ষিপ্ত হলেন যে ঘোষনা দিলেন গাধার গলায় বাইবেল ঝুলিয়ে দেশ ঘোরাবেন।
তার মা (ইতিহাসে তার খুব পরিচিতি নেই) বললেন, ওরা অন্যায় করেছে।  সেই একই অন্যায় করে অন্যায়ের প্রতিবাদ করা যায় না।
তিনি বাংলাদেশে ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘসময় দেশ চালিয়েছেন। সন্মান তার প্রাপ্য। যা করা হয়েছে তাতে অনেকেই দুঃখ পেয়েছেন। বিএনপি কিংবা তার শাসনামলের ভক্ত না হয়েও। 
তারপরও, অন্তত দেশ এবং জনগনের কথা ভেবে তিনি যেন এমন কিছু না করেন যেখানে প্রতিহিংসা প্রকাশ পায়।

0 comments:

 

Browse