হেগেল, নিউটন এবং নাটক

Jul 20, 2013


দার্শনিক হেগেল এর জনপ্রিয়তা এতটাই যে তাকে সাহিত্যিকের সাথে তুলনা করা যেতে পারে দার্শনিকরা সাধারনত সাধারন মানুষের প্রিয় হন না কিংবা আলোচনার বিষয় হন না তিনি হয়েছিলেন খুব সংক্ষেপে উল্লেখ করলে তার বক্তব্য ছিল একেবারে সাধারন, জগতের সমস্তকিছূ বিভিন্ন ধরনের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ফল
আমাদের চারিদিকে যাকিছূ রয়েছে, যাকিছু ঘটছে সবকিছুই একের সাথে অন্যের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া একটি মতবাদের সাথে আরেকটি মতবাদের বিরোধ ঘটে, তাদের প্রতিক্রিয়ায় নতুন আরেকটি মতবাদ তৈরী হয় তারসাথে বিরোধ বাধে আরেক মতবাদের শেষমেষ যা দাড়ায় তা হচ্ছে ক্রমাগত পরিবর্তনশীল কিছু এর কোন স্থায়ী রূপ নেই
হেগেল বর্তমান বাংলাদেশ দেখলে হয়ত তার মতবাদের সত্যিকারের সার্থক চেহারা দেখতেন আজ এক জোট তৈরী হল তো আগামীকাল বিপক্ষে আরেকজোট আজ একজন এককথা বললেন, পরদিনই বিপরীত মতবাদ নিয়ে হাজির আরেকজন

দৃষ্টান্ত দিয়ে দেখা যাক শাহবাগে অনেক মানুষ জমায়েত হলেন কিছু বক্তব্য নিয়ে তাদের বিপক্ষে জোট তৈরী হল তাদের হাত থেকে ধর্ম রক্ষা করতে এর প্রতিক্রিয়ায় শাহবাগিদের পেছনে ভিডিও ক্যামেরা ছুটল তাদের কে কোন মসজিদে নামাজ পড়েন, কে কিভাবে কোরান পড়েন সেটা প্রচার করতে এতেও যদি কাজ না হয় তাহলে ধর্মের কথা বলে তাদের বিপক্ষে আরেক ধর্মীয় জোট এই মুহুর্তে সরব জোটের সংখ্যা কত বলা কঠিন আজিমপুরের গোরখোদকও শাহবাগে এসে নিজেদের অস্তিত্ব জানিয়েছেন, তারা যুদ্ধাপরাধীদের গোর খুড়বেন না।
দিনের পর রাত, রাতের পর দিন। একসময় এই সুদিনও শেষ হয়েছে। ছাত্রলীগ শাহবাগিদের লাঠিপেটা করে এরশাদ সাহেবের প্রশংসা কুড়িয়েছেন।
শেষফল বিষয়ে হেগেলের শেষ সিদ্ধান্ত, এই ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার শেষ চেহারা কি কেউ জানেনা এটা কোথায় থামবে সেটাও জানা নেই
বিজ্ঞানী নিউটন আবার এই ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আরো সরলভাবে এক সুত্র দিয়ে গেছেন সব ক্রিয়ারই সমান এবং বিপরীত প্রতিক্রিয়া থাকে আপনি হেগেলের মতবাদ নিয়ে তর্ক করতে পারেন, নিউটনের সুত্র নিয়ে তর্ক করার সুযোগ নেই বিশ্ব-মহাবিশ্ব সবই চলে এই নিয়মে
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নিউটনের সুত্র মানুষ অনেকবার দেখেছে বিশেষ করে ৯০ এর পর প্রতিটি সরকার তাদের ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া দেখেছেন নির্বাচনে সেই নিয়ম মানলে বর্তমান সরকারের ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়াও দেখার কথা অন্তত শেয়ার বাজার, ডেসটিনি, হলমার্ক, পদ্মা সেতুর কথা যখন মানুষ পুরোপুরি ভোলেনি বিরোধীদল আবার ক্ষমতায় এলে হাওয়া-ভবন, এধরনের কথা ততটা ফল আনছে না। বরং তারা তালেবানের সাথে যুক্ত, বিদেশী বিদ্রোহীদের ট্রেণিং দিয়েছে এসব থেকে ফল ফলতে যেতে পারে। বলা যায় না আমেরিকা-ভারত এতে সায় দিতেও পারে। যদিও বাস্তবতা বলে আমেরিকা বাংলাদেশে তালেবানের ছায়া দেখেনি। আর ভারত আলাপ করছে সেই বিদ্রোহিদের সাথে। তাদের সামনেও নিজেদের নির্বাচন।
হেগেলে কথায় ফেরা যাক তার মতবাদের কিছুটা পরিবর্তন করে একটি জোট তৈরী হয়েছিল তাদের বলা গত নব্য হেগেলিয়ান এদেরই মধ্যে থেকে একসময় উঠে এলেন কার্ল মার্কস তিনি হেগেলে কথাই সমর্থন করলে, তবে বিপরীতভাবে তিনি বললেন, সমাজ বিভিন্ন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ফল একথা ঠিক, একে বিপরীতভাবে দেখলে সমাজ ইচ্ছে করলে সেই ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রন করতে পারে মানুষ ইচ্ছে করলে একে নির্দিষ্ট পরিনতির দিকে নিতে পারে। হয়ত বলে দেয়া প্রয়োজন নেই সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার কথা এসেছে সেখান থেকেই
সমাজতন্ত্রের কথা যখন উঠল তখন সমাজতন্ত্রীদের সম্পর্কে দুকথা না বললে চলে না একসময় বলা হত মস্কো-পিকিং এ বৃষ্টি হলে তারা বাংলাদেশে ছাতা ধরেন বর্তমানে মস্কো-পিকিং এসব নিয়ে মাথা ঘামায় না পরগাছার স্বাভাবিক নিয়মে তাদেরকে অন্য অবলম্বন খুজতে হয়েছে তাদের অনেকেই শংকিত তাদের ভবিষ্যত নিয়ে বর্তমান গাছ ছাড়া ভবিষ্যতের গাছের দেখা তেমন পাওয়া যাচ্ছে না কাজেই একে টিকিয়ে রাখা জরুরী সমস্যা হচ্ছে, একসময় মার্কিনিরা ধর্মের কথা হাতিয়ার ব্যবহার করত সমাতজন্ত্রের বিরুদ্ধে সেটা জনমনে এতটাই প্রভাব রেখেছে যে এখনি ঝেড়ে ফেলা যায় না বর্তমানে মার্কিনীরা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে ইসলামি সন্ত্রাস পুরোপুরি সেপথে গেলে আবার নাস্তিক পরিচিতি পেতে হয় কাজেই, প্রয়োজন নানা ধরনের মতবাদ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ধর্মনিরপেক্ষতা, নামাজ-কোরান, যুদ্ধাপরাধ, গনতন্ত্র, মুক্তচিন্তা, অপপ্রচার রোধ সব মতবাদ একসাথে করা
হেগেল এই বিচিত্র ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া দেখলে হয়ত বলতে পারতেন না কোনটা ক্রিয়া আর কোনটা প্রতিক্রিয়া হয়ত বলেই বসতেন, নাটকে সবই থাকে যে নাটকে দ্বন্দ যত বেশি দর্শক সেই নাটক তত পছন্দ করে

0 comments:

 

Browse