বহুরঙা গনতন্ত্র

May 27, 2013


অনেকের মতে দক্ষিন আফ্রিকার বর্নবাদ মানব ইতিহাসের সবচেয়ে কলংকজনক অধ্যায়। একজন মানুষের গায়ের রঙের কারনে তাকে নির্যাতন করা, মেরে ফেলা ছিল অধিকার। নেলসন ম্যান্ডেলা তার প্রতিবাদ করেছিলেন। ৩ দশক কারাগারে কাটাটে হয়েছিল তাকে। এরপর যখন মুক্তি পেলেন, ক্ষমতার অধিকারী হলেন তখন খুবই সম্ভাবনা ছিল বিপরীত ব্যবস্থা নেয়ার। যারা এতদিন তার ওপর এবং স্বগোত্রিয়ের ওপর নির্যাতন করেছে তাদের অন্তত বিচারের সামনে দাড় করানোর।
তিনি শোনালেন অদ্ভুত কথা। তাদের বিচার করা প্রয়োজন নেই। নতুন দেশ হবে নানা রঙের। তাদের সবাইকে ক্ষমা করা হবে। একটাই শর্ত, অতীতের মত কাজ করা যাবে না।

এটা রীতিমত জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা। অনেকে সেকথা বলেছেও। তাকে টলানো যায়নি। কদিন আগে যারা তাকে মেরে ফেরার চেষ্টা করেছে তাকেই দেহরক্ষীর দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। তার বক্তব্য একটাই, তার যে যোগ্যতা আছে সেটা কাজে লাগানো প্রয়োজন।
বর্তমান দক্ষিন আফ্রিকার পরিচিতি কখনো রেইনবো নেশন হিসেবে, কখনো আফ্রিকা মহাদেশের সবচেয়ে উন্নত দেশ হিসেবে।
আমরাই বা পিছিয়ে থাকব কেন ? আমরাও কি পারি না রঙিন গনতন্ত্র চর্চা করতে!
কথাটা তুলে ধরলেন বিবিসি-র সংলাপ অনুষ্ঠানে অংশ নেযা একজন বক্তা। একেকজন মন্ত্রিক একেকরকম বক্তব্য দিচ্ছেন এটা কি সরকারের সমম্বয়হীনতা প্রকাশ করে, প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি সোতসাহে জানালেন, মোটেই না। এটাই তো বহুরঙা গনতন্ত্র চর্চা। গনতন্ত্রের সৌন্দর্যই তো সেখানে। সবাই নিজের মত প্রকাশ করবেন। এতে সরকারের সমস্বয়হীনতার প্রশ্ন উঠবে কেন ? এটাই তো গনতান্ত্রিক সরকারের পরিচয়।
কাজেই, একজন মন্ত্রী বলবেন ঢাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হল, আরেকজন বলবেন সারা দেশে। একজন বলবেন এক মাসের জন্য আরেকজন বলবেন অনির্দিস্ট কালের জন্য। এভাবেই মত প্রকাশের স্বাধীনতা চর্চা করতে হয়।
সামান্য একটু নিয়ম মানাই যথিষ্ট। নিজের মত প্রকাশ করবেন মহাজোটের ভেতর থেকে। বাইরের কেউ উস্কানিমুলক বক্তব্য দেবেন না। দিলে রাষ্ট্রের স্বার্থে আমার দেশ, দিগন্ত বিংবা ইসলামিক টিভির মত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তথ্যমন্ত্রী বারবার বলছেন আমার দেশ প্রকাশে আইনত কোন বাধা নেই। বেআইনি বাধা হলেও সেটা করা হবে। তাদের পক্ষে কথা বলে মুক্তিযুদ্ধের অবমাননা করবেন না। টিভিতে টক-শো কথা বললেও জীবনের ঝুকি নিয়ে নিজ দায়িত্বে বলবেন।
অনেকে মনে করেন বাংলাদেশের শেষ আশ্রয় সেনাবাহিনী। প্রধানমন্ত্রী তাদেরকে বলেছেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা মনে রেখে দায়িত্ব পালন করতে হবে। যারা দেশ স্বাধীন করেছে সবসময় তাদের পক্ষে থাকবেন। আর এখন সকলেই জানে জিয়াউর রহমান ৭১ সালে পাকিস্তানে তথ্য পাচার করতেন। কাদের সিদ্দিকী রাজাকার ছিলেন।
একই সময় খবর বেরিয়েছে গত ৪ বছরে কতজন সেনা কর্মকর্তা চাকরী হারিয়েছেন, কতজন স্বেচ্ছায় চাকরী ছেড়েছেন।
ওসব বড় বিষয় থেকে দুরে থাকাই মংগল। সমস্যা হচ্ছে বড় আলোচনা বড় মানুষ করবেন সেটা ঠিক আছে, যতখুশি করুন। সাধারন মানুষকে ফল ভোগ কতে হয় এটাই যা মাথাব্যথা। একবার পুলিশের হাতে ধরা খেলে ছাড়া পাওয়ার জন্য টাকা খসাতে হয়। অপারগ হলে শিবির-জামাত-হেফাজত-বিএনপি কর্মীর পরিচয় নিয়ে জেলে ঢুকতে হয়।
এটা নিশ্চয়ই বহুরঙা গনতন্ত্রের আরেক রঙ।

0 comments:

 

Browse