ভাবমুর্তি

Apr 29, 2013


ভাবমুর্তি খুব দামী জিনিষ এতে কোন সন্দেহ নেই। এমনকি এর দাম যে কত সেটাও পরিমান করার উপায় নেই। ভাবমুর্তিকে যদি সন্মান হিসেব করা হয় তাহলে অনেকে সন্মানরক্ষায় জীবন হারাতে রাজি, মান হারাতে রাজি নন। উদাহরনের অভাব নেই।
আর যদি নিজের জীবন না হয়ে পরের জীবন হয় তাহলে কাজটি আরো সহজ। জীবন যেতেই পারে তাইবলে সন্মান হারাতে হবে কেন ? একদিন তো মরতে হবেই।
বাংলাদেশে তৈরী পোষাক শ্রমিকের জীবন দেয়া নতুন খবর না। প্রতিবছর কয়েকটা করে বড় ধরনের খবর শোনা যায়। কয়েকমাস আগে আগুনে পুড়ে মারা গেছেন শতাধিক। তদন্ত হয়েছে, দোষী সাব্যাস্ত করা হয়েছে মালিককে। তাকে গ্রেফতার করা হয়নি কেন জিজ্ঞেস করলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উল্টো প্রশ্ন করেছেন, গ্রেফতার করলেই কি সমস্যার সমাধান হবে ?

তা তিনি সমাধান নিয়ে মাথা ঘামাতেই পারেন। ১৯৭১ সালে বাঙালী যখন যুদ্ধ করে জীবন দিচ্ছিল তখন তিনি পাকিস্তার সরকারের বড় চাকুরে। নিশ্চয়ই সমস্যার সমাধান দিচ্ছিলেন। তার সংসদ সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছিল অসদাচরনের কারনে। তিনি সে সমস্যারও সমাধান করে ফেলেছেন, পদ হারাতে হয়নি। কাজেই সমাধান কিভাবে করতে হয় সেটা তিনি ভাল করেই জনেন। সাভারে ভবন ধসে শ্রমিক নিহত হওয়ার পরও তিনি প্রথম কারন দেখেছেন হরতালকারী সন্ত্রাসীরা ভবন ধরে নাড়াচাড়া করেছে।
ভাবমুর্তির কথায় ফেরা যাক। মৃত্যু যখন হবেই তখন এসব ফলাও করে প্রচার করার প্রয়োজন কি ? এতে কি সমাধান হচ্ছে ? কথাটা সরাসরিই বলেছেন তৈরী পোষাক মালিকদের সমিতির প্রধান। এতে দেশের ভাবমুর্তি নষ্ট হতে পারে। তারচেয়ে বরং চুপ করে থাকুন না কেন ? এসব প্রচার করলে যদি বিদেশীরা কাজ দেয়া বন্ধ করে দেয়!
মৃত্যুর সাথে হিসেব করলে ভাবমুর্তির বিষয় আরেকটু গোলমেলে। কথার মারপ্যাচে ভাবমুর্তির অনেকটা এদিকওদিক হয়। সংবাদমাধ্যমগুলির বক্তব্যই ধরুন না কেন। তারা বলছে মৃতের সংখ্যা প্রায় ৪০০। নিখোজ হাজারখানেক। ধরে নেয়া যায় যারা নিখোজ তারা নিখোজই থেকে যাবেন। খবরটা অনায়াসে হতে পারত, লাশ পাওয়া গেছে ৪০০। ভাবমুর্তি রক্ষা করার এত সুন্দর উদাহরন কি সহজে পাওয়া যায় ?
লাশ যত কম পাওয়া যায় ততই মংগল। এমনকি মানুষ যত কম জানে ততই মংগল। বিবিসি প্রথমে প্রচার করল বৃটেন এবং আরো কয়েকটি দেশ উদ্ধারকাজে কাজে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছিল। রাজি না হওয়ায় তাদেরকে বুঝানোর চেষ্টাও করা হয়েছে তাদের পক্ষ থেকে। সরকারের এক গো, এতে কি মানসন্মান থাকে ! দেশের ভাবমুর্তি বলে কথা। আমরা কি এতই অপদার্থ যে অন্যের কাছে হাত পাতব ! কিছু মানুষ মারা গেছে যাক, শ্রমিকের অভাব হবে না।
যেসব সরকারী লোকজন উদ্ধারকাজে ছিলেন তাদেরও ভাবমুর্তিবোধ প্রবল। সাধারন মানুষ বলছে তারা সাধারন অস্ত্র দিয়ে হাত-কেটে মানুষ উদ্ধার করেছে। তারাই হাজারদুয়েক মানুষকে বাইরে এনেছে। কিছু মানুষ টাকা কয়েকদিন একাজেই ব্যস্ত, যদিও তাদের কোন স্বার্থ নেই। নিজের টাকায় জিনিষপত্র কিনে দিচ্ছেন। তারা বলছে দুএকটা এমন ঘটনা ঘটলেও ঘটে থাকতে পারে। আসলে ওরা শুধুমাত্র খোজার কাজ করছে, উদ্ধারকাজ আমরাই করছি।
এখন পর্যন্ত সার্থকভাবে উদ্ধারকাজ চালানোর জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে মিছিল বের হয়নি। সফলভাবে বিডিআর বিদ্রোহ মোকাবেলা করার জন্য করা হয়েছে সংসদে, রাজপথে। ধরে নেয়া যায় এটাও সময়ের ব্যাপার মাত্র।
জয় ভাবমুর্তি।

0 comments:

 

Browse