গাইড

Oct 8, 2013


জিম্বাবুই যখন স্বাধীনতা লাভ করে তখন বিষয়টা আফ্রিকা মহাদেশে এতটা উতসাহ সৃষ্টি করেছিল যে চারিদিকের দেশগুলি ভাবতে শুরু করেছিল তাদের সামনে সুদিন আসছে। কিংবদন্তি গায়ক বব মার্লির ইউনাইট আফ্রিকা স্বপ্ন পুরন হতে যাচ্ছে। তিনি নিজে সেখানে গিয়ে উতসব পালণ করলেন। সারা বিশ্ব তাকিয়ে দেখল।
বব মার্লির এর পরের ইতিহাস খুব সংক্ষিপ্ত। আফ্রিকার সব দেশকে এক হতে বলে, আমেরিকায় থাকা আফ্রিকানদের নিজের দেশে ফিরতে বলে কি অপরাধ করেছিলেন নির্দিস্ট করে বলঅ কঠিন হলেও তার শত্রু  তৈরী হয়েছিল এটা নিশ্চিত। তার স্ত্রী এবং ম্যানেজার সহ তাকে মারার জন্য গুলি করা হয়। অলৌকিকভাবে তখনকার মত তিনজনই বেচে যান। তবে সেই ক্ষত থেকে কখনো সেরে ওঠেননি। একসময় সেটাই তার অকাল মৃত্যু ডেকে আনে।
জিম্বাবুয়ের ইতিহাস সেতুলনায় ভিন্ন। সেই রবার্ট মুগাবে এখনও ক্ষমতায়। সেখান থেকে নড়ার কোন লক্ষও নেই। এখনও ঘন্টার পর ঘন্টা জ্বালাময়ী বক্তৃতা দেন। বক্তব্যে শুরু বৃটিশদের গালাগালি দিয়ে, শেষ বৃটিশদের গালাগালি দিয়ে। যদি তিনি এক মুহুর্তের জন্যও ক্ষমতা থেকে সরে যান তাহলে আবার বৃটিশরা তার দেশ দখল করে নেবে।

স্বাধীনতার আগে জিম্বাবুই ছিল সমৃদ্ধ দেশ। ডলারের দাম আমেরিকান ডলারের থেকে বেশি। স্বাধীনতা পাওয়ার পর দেশ আরো সমৃদ্ধ হবে এটাই ছিল স্বাভাবিক। বাস্তবে যা ঘটেছে তা হল, বর্তমানে জনসংখ্যার বড় একটি অংশকে খাদ্য সাহায্য দিয়ে বাচিয়ে রাখতে হয়। পত্রিকায় ছবি ছাপা হয়েছিল এক ব্যক্তি দুহাতে বুকের সাথে নোটের বান্ডিল নিয়ে রুটি কিনতে যাচ্ছে। টাকা আর পুরনো খবরের কাগজের দামের মধ্যে পার্থক্য সামান্যই। সমস্যা এড়াতে শতকোটি ডলারের নোট ছাপা হয়েছে।
কিভাবে হল ?
প্রত্যেকেই তার নিজস্ব অবস্থান থেকে কারন ব্যাখ্যা করতে পারেন। হয়ত তাদের সবগুলিই ঠিক। সেগুলি একসাথে করলে সাধারন একটি দৃশ্যমান সরল কারন পাওয়া যেতে পারে;
সেখানে বিশাল আকারের খামার এবং অন্যান্য প্রতিস্ঠানের মালিক ছিল সাদা চামড়ার লোক। তাদের সেগুলি ব্যবহারে দক্ষতা-অভিজ্ঞতা-প্রযুক্তি সবই ছিল। সেগুলি কেড়ে নেয়া হল এবং মালিকানা দেয়া হল দেশের মানুষকে। স্বাভাবিকভাবেই নিজের দলের লোকজন পেল সেই সুযোগ। এর ফল কি হতে পারে তার উদাহরন তারা যেমন তেমনি বহু দেশেই পাওয়া যাবে।
আরেকটি দীর্ঘস্থায়ী ফল এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। তার বদলী নেতা কেউ নেই।  তিনি হাজার হাজার বছর ধরে দেশকে বৃটিশদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করবেন। এজন্য যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরী করা হয়েছে যেখানে যোগ্যতা নিয়ে কেউ রাজনীতিতে আসেন না। ধরে নেয়া যায় এই ধারা বজায় থাকবে পরবর্তী প্রজন্মেও।
জিম্বাবুয়ের এই উদাহরন কি খুব নতুন মনে হচ্ছে ?
কেউ কেউ নিশ্চয়ই সাথেসাথে বলে উঠবেন, রাজাকারের ফাসি চাই। বাংলাদেশে ফাসিবাদি যে খুব কম নেই সেটা প্রতিদিনের সংবাদমাধ্যম জানান দেয়।
কেউ হয়ত বলবেন জিম্বাবুয়ের অবস্থা হতে পারত তার পাশের দেশ দক্ষিন আফ্রিকার মত। তারা সমৃদ্ধশালী ছির না, ক্রমেই সমৃদ্ধশালী হয়েছে, এবং হচ্ছে। বর্তমান আফ্রিকা মহাদেশের সবচেয়ে উন্নত দেশের পরিচিতি লাভ করেছে। অথচ তাদের দেশ কয়েখ দশক ধরে যে অবস্থার মধ্যে ছিল তাকে অনেকে মানব ইতিহাসের কলংক বলে উল্লেখ করেন।
 বাংলাদেশ বহু দুরের দেশ। এখানকার জলবায়ু ভিন্ন, মানুষ ভিন্ন। কাজেই মতবাদের ভিন্নতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। সত্যি বলতে কি, একে ভিন্ন তা বলে বিপরীতমুখি বলাই মানানসই।
মোটামুটি নিশ্চিতভাবেই বলা যায় একপক্ষ একে দক্ষিন আফ্রিকার সাথে তুলনা করবেন, আরেক পক্ষ জিস্বাবুইয়ের সাথে তুলনা করবেন। কখনো পক্ষে, কখনো বিপক্ষে।
সে প্রসংগে না গিয়ে বরং ভিন্ন একটা কথা দিয়ে শেষ করা যাক। রবার্ট মুগাবে এবং নেলসন ম্যান্ডেলা যদি গাইড বই লেখেন তাহলে কেমন হয়।
ম্যান্ডেলা হাইড না লিখলেও তার অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন।  মুগাবেরটা বাকি। তিনি হয়ত লিখতে পারেন, দেশরক্ষা এবং ক্ষমতায় থাকার হাজার কৌশল।
আত্মহত্যার হাজার কৌশল নামে একটা বই ইন্টারনেটে পাওয়া যায়। বলা হয় যারা এই পড়েছেন তাদের প্রায় প্রত্যেকেই কখনো না কখনো আত্মহত্যার কথা ভেবেছেন। দেশরক্ষার গাইড বই তারথেকেও জনপ্রিয় হতে পারে।

0 comments:

 

Browse