এটা অনেক পুরনো কথা। কয়েক হাজার বছর আগে প্রাচীন ভারতের কথা। এক বৃদ্ধ প্রশ্ন করলেন, শরীরে সবচেয়ে শক্ত কোন যায়গা। তাকে বলা হল, দাত। তিনি মুখ হা করে ভেতরে দেখিয়ে বললেন আমার সব দাত পড়ে গেছে কিন্তু জিহ্বা কিছুই হয়নি।
দাত পড়ে যায় কারন দাত শক্ত। ঝড়ে গাছ ভেঙে যায় কারন গাছ শক্ত। লতা ঝড়ে ভাঙে না। প্রয়োজনে মচকে যায়। বেকে যায়, তেড়িয়ে যায়। অনেকটাই সাপের মত। যদি কোনভাবে সাপ হতে পারেন তাহলে আর ভাঙার ভয় নেই।
সবাই সাপ হতে পারে না। সাপ হয় না। উদাহরন দেখিয়ে গেলেন শিক্ষক মিজানুর রহমান। তার ছাত্রীকে উত্তক্ত করায় তিনি ঘুরে দাড়িয়ে প্রতিবাদ করলেন। আর তার ওপর মোটর সাইকেল চাপিয়ে দেয়া হল। তিনি ভেঙে পড়লেন।
আপনি বলতেই পারেন সেই মোটরসাইকেল চালকের একজনকে তো গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিচার হবে। দৃষ্টান্ত তৈরী করা হবে। স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রী সবসময়ই দৃষ্টান্ত তৈরী করেন। এই নাটোরেই আরো দৃষ্টান্ত তৈরী হয়েছে। একজন উপজেলা চেয়ারম্যানকে পিটিয়ে মারা হয়েছে প্রকাশ্যে। টিভিতে দেখানো হয়েছে সেই দৃশ্য। দুসপ্তাহের বেশি পেরিয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী ভিডিও ফুটেজ দেখে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছেন, যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে বাধা তৈরী করছে তাদের নিয়ে ব্যস্ত। নারায়নগঞ্জে যারা পৈত্রিক জমি রক্ষায় পথে নেমেছে, গুলিতে জীবন দিয়েছে তারাও আসলে কাজ করছে ওই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে বাধা তৈরী করতে। সব ষড়যন্ত্র, সব চক্রান্ত। যারা স্বাধীনতা এনেছে কেউ তাদের ভাল দেখতে চায় না। আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তো বলেই রেখেছেন নির্দেশ না মানলে তিনি কি করবেন!
দৃষ্টান্ত দেশে হয়, বিদেশে হয়। বর্তমানে হচ্ছে, অতীতে হয়েছে। একদিন একজন শিক্ষক খবর পেলেন এক ছাত্রীকে ধর্ষন করা হয়েছে। তিনি এতটাই ক্ষিপ্ত হলেন যে নিজেই বিচার করবেন সিদ্ধান্ত নিলেন। অপরাধীদের ধরে ফাসি দিয়ে পথের ধারে ঝুলিয়ে রাখলেন। অনেকে এতে এতটাই খুশি হল যে দলে দলে যোগ দিল তারসাথে। দেখতে দেখতে রাষ্ট্রক্ষমতা পর্যন্ত এসে গেল তার হাতে। তিনি দেখিয়ে দিলেন সমাজে শৃংখলা আনা যায়, পপি চাষের মত লাভজনক ব্যবসাও পুরোপুরি বন্ধ করা যায়।
নিশ্চয়ই বুঝেছেন সেই শিক্ষকের নাম মোল্লা ওমর। সেই দেশের নাম আফগানিস্তান। তার শিষ্যরা তালেব, বাংলা ভাষায় ছাত্র।
তালেবান শুনলে গালাগালি করা অনেকেরই অভ্যেস। আমেরিকা এটা শুনতে পছন্দ করে। ওরা খারাপ বলেই তো ইচ্ছেমত বোমা ফেলা যায়। কিছু সাধারন মানুষ মারা যেতেই পারে। ভুল সবারই হয়। সব তদন্ত করে দেখা হয়। লাদেনপুত্র তাদের নানাকাজে ব্যবহার করেছে, তারা অনেক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যা গনতন্ত্রের পরিপন্থি, বর্তমান সমাজ ব্যবস্থার পরিপন্থি। সেইসাথে এটাও ঠিক, সেই মোল্লা উদাহরন দেখিয়েছেন ইচ্ছে থাকলে সমাজে অপরাধ বন্ধ করা যায়। খুব দ্রুতই করা যায়।
গ্রীষ্মকালের ফতোয়া শীতকালে দেয়া যায় না। এক যায়গার উদাহরন আরেক যায়গায় চলে না। ইংরেজরা প্রায় দুশো বছর এদেশ শাসন করেছে। এখনও আইন বলতে যা বুঝায় তা তাদের তৈরী। তারা এদেশের মানুষকে বুঝতে চেষ্টা করেছে, বিশ্লেষন করেছে। ফল প্রকাশ করে বলেছে বাঙালী একা ভিতু, দলে ভয়ংকর।
বিষয়টা বোঝা কি খুব কষ্টকর ?
আমাদের বিশেষজ্ঞরা টিভিতে বক্তৃতা দিয়ে, সারা দেশ ঘুরে মানুষকে শপথ করিয়ে সবাইকে ভাল বানাবেন। আর মিজানুর রহমানের মত কাউকে কথা বলতে হবে একাই। জীবন দিতে হবে। পাশে কেউ দাড়াবে না। কারন অপরাধীরা দলে শক্ত। তাদের একতার তুলনা হয় না। রাজনৈতিক দলগুলো ওত পেতে থাকে তাদের দলে টানার জন্য। লগিবৈঠা এদের পক্ষেই। এদের বিপক্ষে কেউ লগি-বৈঠা হাতে পথে নামে না। নিজের পায়ে কুড়াল মেরে ক্ষতি ছাড়া লাভ নেই।
মানুষ অভিজ্ঞতা থেকেই শেখে। মিজানুর রহমানকে দেখে এটাই শিখতে পারেন, মচকাবেন, নুয়ে যাবেন। কখনো সোজা হয়ে দাড়াবেন না। তাতে জীবন যেতে পারে।
0 comments:
Post a Comment