মস্তিস্ক কোথায়

Feb 26, 2013


ক্যারিবিয়ান জলদস্যু ক্যাপ্টেন জ্যাক স্প্যারোর বক্তব্য, মস্তিস্ক যখন ব্যবহার হচ্ছে না তখন ওটা না থাকলে ক্ষতি কি?
মস্তিস্ক ব্যবহার নিয়ে অনেক জটিল বিতর্ক হতে পারে। জটিলতা থেকে যতটা দুরে থাকা যায় তত ভাল। কে যেন বলেছিল বাঙালীর মস্তিস্ক সবচেয়ে টাটকা কারন ওটা কখনো ব্যবহার করা হয় না। ব্যবহার করবেন না-কি ব্যবহার না করে টাটকা রাখবেন সেটা আপনার বিষয়। কিংবা সংবাদমাধ্যমে যাদের সর্বক্ষন উপস্থিতি তাদের বিষয়। সমস্যা হচ্ছে তাদের কাজের কিছু উপসর্গ সকলের ওপর এসে হাজির হয়। সমস্যা তৈরী হয় তখনই।
গত কয়েকদিনে যে মানুষগুলো জীবন দিয়েছে তাদের হয়ত এভাবে মৃত্যু প্রয়োজন ছিল না। যে পক্ষ যত কথাই বলুন না কেন, নিহতদের বড় অংশ কোন পক্ষের না। অন্তত যেভাবে প্রচার করা হচ্ছে তেমন যুদ্ধাপরাধী কিংবা জামাতের কর্মী না এটা নিশ্চিত।
গনজাগরন এর ফল কি এখনো নিশ্চিত করা কঠিন। একবার বিজয় অর্জন হয়েছে উল্লেখ করে ঘরে ফেরার ঘোষনা দেয়া হয়েছে। শুরুতে একদাবী ছিল যুদ্ধাপরাধীর ফাসি, বর্তমানে একদাবী জামাত-শিবির এর রাজনীতি নিষিদ্ধ। সাথে তাদের পক্ষে যে সংবাদমাধ্যম কথা বলেছে সেগুলি বন্ধ করা, তাদের জেলে ঢোকানো।
গনজাগরনের অন্তত একটা সাফল্য দৃশ্যমান। জনগন দুভাগে ভাগ হয়েছে। একপক্ষের বক্তব্য ধর্মের ওপর যে আঘাত করা হয়েছে তার বিচার করতে হবে। আরো একবার মনে করিয়ে দেয়া যেতে পারে, এরা যুদ্ধাপরাধী বা জামাত-শিবির কর্মী বা সমর্থক না। অনেকে তাদের চরমভাবে ঘৃনা করেন।

তাহলে এমনটা হল কেন ?
অনেকে বলেন রাজনীতি এক ধরনের দাবা খেলা। হিসেব কষে চাল দিতে হয়। আওয়ামী লিগের হিসেব একরকম, বামপন্থীদের হিসেব আরেক রকম, বিএনপির হিসেব আরেক রকম, জামাতের হিসেব আরেক রকম। প্রত্যেকেই ঘোলাটে পরিস্থিতির সুযোগ নিতে চেষ্টা করবেন এটাই স্বাভাবিক। তারা সেটা করছেন ভালভাবেই। চাল-বেচালে একেকবার একেকজনকে সুবিধাজনক যায়গায় দেখা যাচ্ছে।
গনজাগরনের দিকে মানুষের আগ্রহ নানাবিধ কারনে। মানুষ মনে করে বিপুল সংখ্যক মানুষ যখন একসাথে হয় তখন সেখানে ভালকিছু পাওয়া যায়। অবাক করার মত বিষয়, বাংলাদেশে দুজন ব্যক্তি একসাথে হলে যেকানে অবধারিতভবে দুর্নীতি, অর্থনৈতিক অবস্থা, রাজনৈতিক ভবিষ্যত ইত্যাদি নিয়ে কথা ওঠে সেখানে লক্ষ মানুষ ৩ সপ্তাহ ধরে একসাথে থাকার পরও এসব বিষয়ে একটি শব্দও শোনা যায়নি। মাত্র কদিন আগে আকাশ-বাতাস ধ্বনিত হয়েছিল পদ্মা সেতু, হলমার্ক, শেয়ার বাজার, দ্রব্যমুল্য ইত্যাদি নিয়ে, হথাত করেই সেগুলি উধাও হয়ে গেছে। কাজেই প্রথম চালে সরকার জয়ী এটা বললে ভুল হয় না।
সমস্যা জটিল হয়েছে যখন বিরোধীদলীয় পত্রিকা বলে পরিচিত সংবাদপত্রে কিছু ব্লগের তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। বিশ্বের ১০০ কোটির বেশি মানুষ যে নবীর জন্য জীবন দিতে প্রস্তত সেই নবীর বিষয়ে ব্লগগুলিতে যা বলা তা বিকৃত মস্তিস্কের ব্যক্তি ছাড়া করা সম্ভব না। ফল, সাধারন মানুষ সেই ব্লগের পেছনের ব্যক্তিদের, এবং সরাসরি গনজাগরনের বিপক্ষে দাড়িয়েছে। একে অস্বিকার করবেন না। সারা দেশে, বিভিন্ন শহরে-গ্রামে যারা পথে নেমেছে তাদেরকে জামাতকর্মী ধরে নেবেন না। রাজাকারের হাতে পিতা নিহত হয়েছেন এমন একজনের বক্তব্য, আমি যুদ্ধপরাধীর বিচার চাই কিন্তু তারও আগে নবীর অসন্মানকারীর বিচার চাই।  
চাল-বেচালের বিষয়টা এখানেই। একচালে সাধারন মানুষ দিক পরিবর্তন করেছে। নিশ্চিতভাবে সময়ের সাথে এই পরিবর্তন আরো ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে। ইতিহাস বলে, মানুষ যখন ধর্মের কথায় পথে নামে তাদের দমানো যায় না। চালের বিপরীতে শক্তি কাজ করে না।
ক্যাপ্টেন স্প্যারোর স্মরন সেকারনেই। চালের বিপরীতে পাল্টা চাল কোথায় ? মস্তিস্ক কোথায় ?
কিছুদিন আগে ভারতে এধরনের সমস্যা তৈরী হয়েছিল। শীর্ষস্থানী রাজনৈতিক নেতা, ধর্ম ইত্যাদি নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্য প্রচার করা হয়েছিল ইন্টারনেটে। ভারত সরকার গুগল, ইয়াহু, মাইক্রোসফট সবাইকে বলেছে সেগুলি সরিয়ে ফেলতে, এবং তারা যতই মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলুন, মানতে বাধ্য হয়েছে। সমাজে বিশৃংখলা এড়ানোর এটা সেরা উদাহরন।
এমনটা হতে কি সমস্যা ছিল ?
সরকার সরাসরি ঘোষনা দিয়ে সাধারন মানুষকে আস্বস্ত করতে পারত, যারা এসব করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সরকার সেপথে যায়নি নিশ্চয়ই নিজেদের সাফল্যের কারনে। সবাই যখন পক্ষে তখন ওতে কি যায় আসে!
গনজাগরনের পক্ষ থেকে ক্ষীণগলায় বলার চেষ্টা হয়েছে, ওগুলো অপপ্রচার, মিথ্যে।  এতটাই ক্ষীনগলায় যে মানুষের কাছে পৌছেনি।
এই কথাই জোরালোভাবে বলা যেত। জনজাগরন মঞ্চকে কিছু বিকৃতমস্তিস্ক মানুষ থেকে আলাদা করা যেত। তাদেরও সম্ভবত আত্মবিশ্বাস এতটাই বেশি, সারা দেশ আমাদের সাথে। আমরা সব করে ফেলব।
অনেকে বলছেন এটা আরেক মুক্তিযুদ্ধ। (বাপরে, সরকারের ছাতার নিচে থেকে মুক্তিযুদ্ধ। সরকারের বিপক্ষে দুকথা বলে দেখান তো সাহস কতটা। নিশ্চিত মৃত্যু জেনে সামনে এগিয়ে যারা জীবন দিয়েছে, দেশ স্বাধীন করেছে তাদের অপমান করবেন না)।
আপাতত সবকিছু ছাপিয়ে একটা প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে, মস্তিস্ক কি আসলেই সাথে আছে ?
যদি শক্তি দিয়ে সমাধান করতে চান তাহলে বরং এক কাজ করুন। কুরুক্ষেত্রের মত এটা যায়গা ঠিক করে নিন। সেখানে গিয়ে হারজিত মিমাংসা করে আসুন। সাধারন মানুষকে এর মধ্যে টানবেন না।

0 comments:

 

Browse