সেই দেয়াল কতদুর

Jan 6, 2010
প্রধানমন্ত্রী ঢাকা শহরের চারিদিকে চার উপশহর গড়ার ঘোষনা দিতেই পারেন, যারা মানুষের ঘরবাড়ি যায়গা জমি তৈরীর মহান দায়িত্ব দায়িত্ব কাধে নিয়েছেন তারা অতি সুলভে, অতি সহজে মানুষের উপকার করতে মেলা করতেই পারেন। দেড় মিলিয়ন মানুষ এই শিল্পে জড়িত সেকথাও শুনতে আপত্তি নেই। ভাড়াটিয়াদের সংগঠনের খবর শুনতেও আপত্তি নেই। তারপরও, ঢাকাবাসীর বাস্তবতা হচ্ছে বাড়িমালিকের বক্তব্য শুনতে হয়, সামনের মাসে দুই হাজার বাড়ায়া দিবেন। না পারলে বাড়ি ছাড়েন। অনেকে ঘুরতাছে।
হ্যা অনেকেই ঘুরছে। কেউ খরচ কমাতে কমাতে একবেলার খাবার খরচ বাদ দিয়েও যখন দেখে বাড়িভাড়ার টাকা জোটে না, তারওপর সামনের মাসে আরো দুই হাজার বাড়তি তখন ঘুরতেই হয়। আর কারো যখন টাকা রাখার যায়গা নেই, ব্যাংক ভরে গেছে তখন সেগুলি রাখার জন্যও নতুন বাড়ি খুজতে হয়। কাজেই ঘোরাঘুরি চলছেই।
দ্বিতীয় শ্রেনীর সংখ্যা-, নেহাত কমই। অন্তত শতকরা হিসেবে উল্লেখ করা যায় না। প্রথমভাগের সংখ্যা অনেক বেশি। কথা তাদেরই শুনতে হয়। আর শুধু বাড়িঅলাই বা কেন, রিক্সা অলাও ছেড়ে কথা বলে না। এই ট্যাকায় রিক্সা চড়তে চান! হাইট্যা যান। ট্যাক্সি হলে তো কথাই নেই। তারা দুধাপ উচুতে। একশ ট্যাকা বাড়ায়া দিবেন। মিটারে যাইবেন ? চলেন। দেহায়া দেই মিটার কারে কয়।
নিতান্ত অনভিজ্ঞ হলে চ্যালেঞ্জ করতেই পারেন। তারপর পকেটের টাকা দেয়ার সময় নিজেকেই গালাগালি করতে পারেন, একশ টাকা বেশি দেয়াই ভাল ছিল। এটা কি মিটার রে বাবা। দুশো টাকার দুরত্ব যেতে ভাড়া উঠল সাতশ টাকা। এই না হলে মেধাবী জাতি।
ইচ্ছে করলে বাড়িছাড়া হয়ে পথেও ঘুরতে পারেন, রিক্সা-ট্যাক্সি বাদ দিয়ে পায়ে ভরসা করেও চলতে পারেন (পার্থক্য এটুকুই, গাড়ির আগে গন্তব্যে পৌছানো যায়, টাকাটাও বাচে), কিন্তু পেটে কিছু দিতে হয়। ওটা ছাড়া যে চলা যায় না। তখন শুনতে হয় দোকানদারের কথা,
দাম বাড়তি। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ছে। নিলে নেন নাইলে যায়গা ছাড়েন।
চালের দাম বেশি বলে আটা কিনবেন সেকথা ভুলে যান। চালের ওপর চাপ কমাতে আলু খাবেন সেকথা ভুলে যান। বরং গরু-খাসির মাংশের ওপর চাপ কমাতে আলুর মাংশ খাওয়া যায় কিনা সেটাই বিবেচনার। ওগুলো যাদের শরীরে জমানো প্রয়োজন তাদের জন্য ছেড়ে দিন।
চারিদিকে যত দেখেন, যত মাথা নিচু হয়, তত জিদ চেপে বসে। নিজে যা পারিনি তা সন্তানকে দিয়ে করাব। ওকে যেন এমন অবস্থায় পড়তে না হয়। যেভাবেই হোক ওকে লেখাপড়া শেখাব। সমাজে মাথা উচু করে চলবে। দেশে-বিদেশে মানুষ প্রশংসা করবে। সব খরচ বাদ দিয়ে হলেও পড়ালেখার খরচ চালিয়ে যাব।
যেতে হয় বই বিক্রেতার কাছে। কিন্তু তারাই বা কম যায় কেন ? তারা কি এই সমাজে বাস করে না!
বই বিক্রেতা বলে, নতুন বছর, বই নিতে পারেন। সরকার বই পাল্টাইলে ফেরত পাইবেন না। সরকার কইছে বই ফ্রি দিব ? সরকারের কাছে যান। আমার কাছে আইছেন ক্যান ?
নোটবই বেচতে দিব না ? খাড়ান, হরতাল ডাকতাছি।
শিক্ষকের কাছে যাবেন ? তার বক্তব্যও তেমনি, এই ট্যাকায় কোচিং হয় না। এই স্কুলে ভর্তি করবেন ? মাসে কত কামান ?
ট্যাকা দেন। সব পাইবেন। কই পাইবেন ? চুরি করেন। ধান্দাবাজি করেন। যা পারেন করেন। না পারলে সমাজে মুখ দেহায়েন না।
কাজেই, চাপ চারিদিক থেকে না। যতরকম দিক আছে সবদিক আপনাকে বলে দিচ্ছে আপনাকে কোন পথে যেতে হবে। আপনিও ধরে নিচ্ছেন আমার আর কিছু করার নেই। এটাই বাচার পথ।
চুরি করতে হবে। যেখানে, যেভাবে সম্ভব। একসময় ঘুষখোর বলে একটা খারাপ শব্দ ছিল। এখন সেটাই যোগ্যতা।
কিন্তু চুরি করে সাফল্য পাওযা কি আপনার সাধ্যের মধ্যে ? চোরের ওপর যেখানে বাটপার বলে থাকে।
লোকে বলে দেয়ালে পিঠ ঠেকলে নাকি মানুষ আর পেছায় না। যেভাবে হোক ঘুরে দাড়ায়। সামনে এগোয়। বাধা দুর করে।
সেই দেয়াল কতদুর।

1 comments:

James Rubel said...

কতদূর সেই দেয়াল? এই সমাজ ব্যবস্থা কি পরিবর্তন হবে না?

 

Browse