শীত-লজ্জা-ঘুম-ভয় এগুলি নাকি বাড়ালেই বাড়ে কমালেই কমে। আগেরগুলি নিশ্চিত করা আমার পক্ষে সম্ভব না তবে শেষেরটার বিষয়ে প্রমান অনেক। দেশে যখন নিরপেক্ষ সরকার ক্ষমতায় তখন অভিযোগ শোনা গিয়েছিল, ওরা আমাদের ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে কিছু করুন। উত্তরে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি বললেন, ভয় না পেলেই হয়।
সত্যিকারের সমাধান সেখানেই। ভয় না পাওয়া। ভুত-প্রেত সে চেষ্টাই করে। তারা খুব ভাল করেই জানে ভয় দেখানো ছাড়া আরকিছু করার সামর্থ্য তাদের অশরীরী শরীরে নেই। ভয় দেখিয়ে যতটুকু করা যায়। একবার যদি সেই ভয় ভেঙে যায় তাহলে তার সামনে যাওয়ার কোন অর্থ হয় না।
গ্রাম থেকে যে ব্যক্তি শহরে পা দিল তার মনে ভয় থাকে। শংকা থাকে। কে জানে কোথায় কি হয়। চারিদিকে দেখেশুনে চলাই ভাল।
তারপর একসময় ভয় কেটে যায়। রিক্সা উল্টোদিকে যাচ্ছে, ভয়ের কি আছে। পুলিশ কি করতে পারে ? মারতে পারে ? কত পুলিশ আছে দেশে ? এইখানে একজন আর ওইখানে একজন। আর রিক্সাআলা দ্যাখছেন। হাজার হাজার। ব্যাটারে একটা কইরা ঘুসি মারলে কই যাইব গিয়া। তারে ভয় পাওনের কি ?
যারা রাস্তার পাশে গাড়ি রাখেন তারাও একসময় এমনটাই ভাবেন। ওই বুঝি পুলিশ এল। কেসটা মনে হয় করেই দিল। লাইসেন্স নিয়েই বোধহয় টানাটানি। কদিন যেতেই দেখা যায়, আরে কিসের কেস। ওইতো পুলিশের গাড়ি থামা, আর্মির গাড়ি থামা। তাগো অধিকার আছে আর আমার নাই ? আমি এই দেশের নাগরিক না ? আমি ভোট দেই না ? দেহি কোন ব্যাটায় কি কয় ?
আরেক ধরনের কাজে শংকোচ একটু বেশিই থাকে। একেবারে না খেয়ে থাকার মত অবস্থায় একজনকে জানালেন নিজের সমস্যার কথা। সে পথ বাতলে দিল। ভয় পাবি না। হাতে বড় দেইখা ছুরি লইবি। গরু কাটা ছুরি। ব্যাস আরকিছু লাগব না। আয় দেহায়া দেই।
তারপরও ভয় কাটে না। বাপরে, ওই লোকটার যা স্বাস্থ্য। একটা ঘুসি দিলে এই চুরিতে কাম হইব না। আর আশেপাশে কত মানুষ। কোনদিকে দৌড় দেয়ার যায়গা নাই।
তারপর ভয় কেটে যায়। বেশ মজা তো। ওই হাতির মত লোকটা ছুরি দেইখা একটা কথাও কইল না। রাস্তার মানুষগুলান দেইখা অন্যদিকে চোখ ঘুড়ায়। পুলিশের সাথে কন্ট্রাক্ট। ভয় পামু কারে ?
ভয় আরেকভাবে কাটে। পড়নে সরকারী ইউনিফর্ম, হাতে গুলিভরা অস্ত্র। রাস্তায় একজনরে থামাইয়া কথা কইলে থরথর কইরা কাপে। ভয় পাওয়ার কি আছে ? ওই ব্যাটা তো অন্যায় কইরা কামাইছে। কোটি ট্যাকা কামাইয়া মন ভরে নাই। আমাগো কথা কেউ মনে করছে ? সারাদিন হাইটা হাইটা দিউটি করি। ওই, পকেটে কি আছে দিয়া যা। নজর রাখ তো কোন ব্যাটায় ব্যাংক থিক্যা বেশি ট্যাকা উঠায়। কোন রাস্তা দিয়া যায় ?
বড় ভয় ছোট ভয় সব ভয়ই কাটে। দাড়ি-গোফ যখন উঠতে শুরু করেছে তখন একধরনের ভয় কাজ করেই। ওই মাইয়াডারে কিছু কমু ? যদি বাপের কাছে নালিশ দেয়। যদি রাস্তার লোকজন ধোলাই দেয়।
তারপর একসময় দেখা যায় ওসব কিছুই হয় না। তার বাপ, নিজের বাপ কেউই এসব নিয়ে মাথা ঘামায় না। এই বয়সে এসব সকলেই করে। রাস্তার লোকেরা মজা দেখে। আরে বিনা পয়সায় নাটক, দাড়া দেইখ্যা লই। যাকে নিয়ে বিষয়ের শুরু তারও একসময় ভয় কেটে যায়। একসময় পরিনত হয় কৌতুহলে। আগ্রহে। ওই ভিডিওকে কি আছে দেখছ ?
ছোটবেলায় এলাকায় এক পাগলের কথা মনে আছে। একটা দোকানের কাছে গিয়ে দাড়াত। তারপর সবাইকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলত, ভয় করলেই ভয়, ভয় করলেই ভয়। থাপ্পা দিয়া খাইয়া ফেললে কিসের ভয়। তারপর এক থাবায় দোকানের খাবার চলে যেত তার হাতে।
সত্যিই তো। একবার থাবা দিলে আর ভয়ের কি থাকে ?
1 comments:
তা ঠিক। আপনার ভাবনাগুলো সমর্থনযোগ্য।
aR
Bangla Hacks
Post a Comment