আজকাল খবরের কাগজে খবর থাকে না। শুধুই বিজ্ঞাপন। এটা কিনলে ওটা ফ্রি, বুকিং দিলেই টিভি ফ্রি, ভাড়ার টাকায় ফ্লাটের মালিক, বিনা টাকায় বিদেশ গমন এইসব। আর খবরের পাতায় কোথায় কে খুন হল, কোথায় ভাঙচুর হল, কোন বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হল, গ্যাসের মজুদ আর কতদিন চলবে এইসব। সেই পুরনো কেচ্ছা আর কাহিনী।
গ্যাসের মজুদে চলবে আরো আড়াই বছর এটা কোন খবর হল ? যদি হত আড়াই দিন তাহলেও কথা ছিল। কিছু তেল-কুকার কিনে ষ্টক করা যেত। আড়াই বছর ষ্টক করে লাভে পোষায় না। আর খবর ঠিক না বেঠিক সে নিশ্চয়তা দিচ্ছে কে ? একবার তো শুনলাম দেশ তেল-গ্যাসের ওপর ভাসছে। মন্ত্রি-মিনিষ্টারদের হাসিমুখ দেখা গেল টিভিতে। এতবড় তেলের খনি পৃথিবীর কোথাও নেই। সৌদি তেলমন্ত্রী না কে যেন মুচকি হেসে বলেছিল আমাদের তেলের খনির আয়তন তো তোমাদের দেশের আয়তনের চেয়েও বড়।
ধুর। ওদের কথা শুনতে হয় নাকি। খনির কথা শূনে চোখ টাটাচ্ছে। এটা আমাদের উন্নতির সময়। আমাদের যতটুকু প্রয়োজন সেটুকু রেখে বাকিটা বিক্রি করে দেব। ভারত কেনার জন্য তৈরী। বিক্রির টাকায় দেশের উন্নতি। আমরা আর পিছিয়ে নেই। আল্লা যারে দ্যায় তারে-
সাথেসাথে কিছু উটকো লোক এসে জুটল। গ্যাস বিক্রি চলবে না, তেল বিক্রি চলবে না। বাপরে, বিক্রি করতেই দিল না। টাটা এসে হাজার কোটি টাকার কারখানা করতে চাইল সেটাও করতে দিল না। কত হাজার লোকের চাকরি হত। বেকার সমস্যা মিটে যেত। অতগুলান নিশ্চিত ভোট। আবারও ওই উটকো লোকগুলো হাজির। এদের খেয়েদেয়ে আর কোন কাজ নেই। পথে পথে ঘোরা আর সরকারের কাজে বাগড়া দেয়া। জেলে পুরে রাখলে ঠিক হয়। নয়ত ক্রশফায়ার।
গ্যাসের মজুদ আড়াই বছর, মানে কি ? তারপর কি হবে ? গ্যাস থাকবে না ? চুলা বন্ধ ? বার্গার-পিজ্জা কি গ্যাসের চুলায় বানায় ? খোজ নিতে হয় আগে থেকেই। ইতালি থেকে পিজ্জা আসতে কদিন লাগে। ফেডেক্স। ওরা তো ঘরে এনে দিয়ে যায়।
কারেন্ট না থাকলে কারেন্টঅলারা তো ওই কথাই বলে। গ্যাস নেই বলে জেনারেশন কম। দিনে ছয়ঘন্টা-আটঘন্টা তেল পোড়াতে হয়। তখন কি চব্বিশ ঘন্টাই পোড়াতে হবে ? সে তো ঝামেলা।
আচ্ছা, গ্যাস না থাকলে কি পানিও থাকবে না ? ওয়াসাও তো এসব কথা বলে। তাদের কোন দোষ নেই। তারা বিদ্যুত পায়না বলে পানি দিতে পারে না।
তাহলে বিষয়টা কি দাড়াল। গ্যাস নেই বলে বিদ্যুত নেই। বিদ্যুত নেই বলে পানি নেই। বোতলের পানিতে কি সব কাজ চলবে ?
বুড়িগঙ্গার পানি নাকি শোধন করা যায় না। তারও অর্ধেক ঘরবাড়ি হয়ে গেছে। আর কদিন পর পুরোটাই হবে। কোর্ট নাকি বলেছে দখলদারী মুক্ত করতে হবে। কিন্তু করবে কে ? বণের খেয়ে কি বাড়ির মোষ তাড়ানো যায় ? নাকি মানায় ? এক মাঘে তো শীত যায় না। ওরা হাতছাড়া হলে হাত নাড়লে সামনে এসে দাড়াবে কে ? সব বেদখল হয়ে যাবে যে। আবার নতুন করে দখলদারী মুক্ত করা, সে বেশ ঝামেলা।
‘শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিদিন নদীতে মিশছে ৬০ হাজার কিউবিক মিটার বিষাক্ত বর্জ্য। নগবীর প্রতিদিনের ৩ হাজার ২শ মেট্রিক টন বর্জ্যের ৫৬ শতাংশ যাচ্ছে নদীতে।’ পত্রিকার রিপোর্ট।
‘পরিবেশ দুষন করলে কারখানা বন্ধ করে দেয়া হবে।’ – প্রধানমন্ত্রী।
‘অনেক ছোট ছোট কারখানা গড়ে উঠেছে নদীর ধারে। এদের সরে যাবার উপায় নেই। জমির অনেক দাম। আর যা করার থাকে তা হল ওগুলো বন্ধ করে দেয়া। বন্ধ করলে বহু মানুষ বেকার হবে।’ – এফবিসিসিআই সভাপতি।
এসব নাকি খবর! মানুষ টাকা দিয়ে কাগজ কেনে কি এসব পড়ার জন্য ? কাগজআলাদের কোন কাজ নেই। যা পায় তাই ছাপে। কারখানা সরানো, ট্যানারী ঢাকার বাইরে নেয়া, যানজট কমানো এতো কয়েক যুগের কথা। গ্রাফ করে দেখুন তো এসব কথা বলে কাজ কি হয়েছে। এখন তো মানুষেই জট লাগে। রীতিমত লাঠিপেটা করে সেই জট ছাড়াতে হয়। যদি দিবাস্বপ্ন দেখতে পছন্দ করেন তাহলে দিবাস্বপ্ন দেখতে পারেন। বর্তমানের স্বপ্ন, আগামীর স্বপ্ন। যা পছন্দ তাই দেখতে পারেন।
আর যদি বেরসিক হন তাহলে অন্য কথা। তাহলে পরশুর স্বপ্ন হতে পারে এমন;
সকালে ঘুম থেকে উঠে চোখ ডলতে ডলতে বারান্দায় এসে দাড়ালেন।
আরে, শহরটা তো খুব সুন্দর লাগছে। রাস্তায় লোকজন নেই। গাড়ি নেই। হরতাল নাকি ? নাকি কারফিউ ? যাক, এতদিনে শহরটা পরিচ্ছন্ন হয়েছে। কি যে সব উটকো লোক ভীড় করে থাকে। সারাবছর কারফিউ থাকলে বেশ হয়। সিংগাপুর সিংগাপুর মনে হয়।
ওই বাড়িটা এমন নক্সা করল কবে ? কোন দেশের টাইলস ওটা। ওই রহিম, ওই বাড়ির দেয়ালটা অমন করল কখন রে।
রহিম সব খবর রাখে। সে বলল, ঘুটা দিছে।
ঘুটা মানে ?
ঘুটা মানে গোবর। দেয়ালে শুকাইতে দিছে। ওইডা দিয়া রান্না করব। গ্যাস নাই, ত্যাল নাই, লাকড়ি নাই। ঘুটা সম্বল।
অ। এইডা বুঝি নতুন টেকনিক। এইকাম দেখাইতে পারলে ডলার দিব। আমিও নাহয় লাগামুনে। আগে জাইনা লই কত দিব। পানি আন তো, খাই। বোতলডা ঠিক ছিল না।
পানি নাই।
আরে ফ্রিজের বোতলের পানি। ঠান্ডা দেইখা একগ্লাশ পানি আন।
পানি নাই। একটু আছে আমার লাগব।
কি কইলি। তোর এতবড় সাহস! আন কইতাছি।
একটু পর বাড়ি যামু। একটাই বোতল আছে বোতলডা নিয়া যামু। রাস্তায় লাগব।
রহিম- চাকরি নট-
আ মরো জ্বালা। চাকরি করতাছে কেডা। নিজে বাচলে বাপের নাম। পানি দেওয়ার খেমতা আছে ? থাকলে তারপর কথা কন -
1 comments:
দারুণ
Post a Comment